শিরোনাম |
❒ শান্তিপূর্ণ সুন্দর যশোর উপহার দেয়ার প্রত্যয় নবাগত এসপির
যশোরের নবাগত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বিপিএম বার বলেছেন সত্য সুন্দর ন্যায় ও কল্যাণের জন্য কাজ করতে চান তিনি। শান্তিপূর্ণ সুন্দর যশোর উপহার দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে জানান, ভালবাসার যশোর গড়তে তিনি পুলিশ ও সাংবাদিকদের নিয়ে একটি শক্তিশালী মালা তৈরি করতে চান। যশোরের ফুল যেমন বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মানুষের মনকে সতেজ ও প্রাণবন্ত করে তেমনি যশোরও যাতে এর ঘ্রাণ পায়, এখানে আরো বেশি বেশি ভাল মানুষ তৈরি করে সেই চেষ্টা করবেন তিনি।
সাংবাদিকদের সহযোগিতা নিয়ে সকল ভাল কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে চান উল্লেখ করে বলেন, ছুরি চাকু, কিশোর গ্যাং, মাদক সন্ত্রাস যানজট চাঁদাবাজি চোরাকারবারী রুখতে চান। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে জানান, তদবির করে যশোরে আসেননি, তিনি বদলির ভয় করেন না। দলমত বর্ণ নির্বিশেষে অপরাধীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থানে দৃঢ় থাকবে। যশোরের সাংবাদিকদের জীবনাচার যশোরে প্রতিচ্ছবি উল্লেখ করে তিনি জানান, সাংবাদিকদের সব বক্তব্য তিনি শুধু কাগজে নোট নেননি তা হৃদয়ে ধারণ করেছেন। তার কাছে চাকরি একটি ইবাদৎ। কারো কবরে কেউ যাবেন না। তিনি যশোরে যতদিনই থাকবেন, ন্যায় নিষ্ঠভাবে তার দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
১০ জুন বিকেলে পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে যশোরের সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়ের সময় এসব কথা বলেন নবাগত পুলিশ সুপার। এর আগে যোগদানের প্রথম দিনেই ছদ্মবেশে যশোরের বিভিন্ন স্পট ও জেলা পুলিশের কয়েকটি ইউনিটে গিয়ে রীতিমত চমক দেখান পুলিশ সুপার। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে, মানুষের হৃদয় কেড়েছে।
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের সময় তিনি আরো বলেন, সমাজ কল্যাণমুখি হলে সবাই সুন্দর হবে। যশোরও সুন্দরভাবে থাকবে। এর জন্য সর্বপ্রথম সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, সাংবাদিকদের তথ্য তার বেশি কাজে আসবে। তথ্য যাচাই করে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনেক ক্ষেত্রে অপরাধের তথ্য পুলিশের চেয়ে সাংবাদিকরা আগে পেয়ে থাকেন। তারা সমাজের আয়না। এই আয়না দিয়ে দেখে সমাজের মঙ্গলের জন্য পুলিশ কাজ করবে। ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাদা কালো দেখা হবে না।’
তিনি সাংবাদিকদের সাথে একমত পোষন করে জানান, যশোরে কিশোর গ্যাং-এর তৎপরতা রয়েছে। এটা শক্তহাতে দমন করা হবে। এরা সমাজের অন্য কেউ না। আপনার আমার সন্তান বা ভাই। পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ সহযোগিতা করলে এই তৎপরতা রোধ করা সম্ভব। পক্ষে বিপক্ষে মতামত থাকবে। কিন্তু সঠিক কাজটা করে যেতে হবে। যশোর অনেক গুরুত্বপূর্ণ জেলা। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় অপরাধ প্রবনতা থাকবে। চোরাচালান, চুরি, ছিনতাই-ডাকাতি, মাদক-অস্ত্রের কারবার, মারামারি, গন্ডগোল রোধ করতে হবে। আমি কাজ করতে চাই। আমাকে নিয়ে কোনো টেনশন নেই। আমি আপনাদের সাথে থাকতে চাই। যে কোন প্রকার তথ্য আমাকে দেয়া হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে তথ্য দাতার নাম পরিচয় গোপন রাখা হবে। আমার কাছে যে কোন নাগরিক আসতে পারবে। দরজা সব সময় খোলা থাকবে।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আরো বলেছেন, আপনাদের সাথে কথা বলে যশোরের চিত্র অল্প কিছু পেয়েছি। কাজ করার সময় সব চিত্র পেয়ে যাবো। এক সাথে কাজ করলে সমাজের অসংগতি দুর করা সম্ভব হবে।
মতবিনিময়ের পুলিশ সুপারকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি একরাম উদ দ্দৌলা, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সংবাদপত্র পরিষদে সাধারণ সম্পাদক দৈনিক গ্রামের কাগজের সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন, প্রেসক্লাব যশোরের সহসভাপতি নুর ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনোতোষ বসু, সাধারণ সম্পাদক এইচ আর তুহিন, যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মোর্শেদ আলম, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরহাদ, সাংবাদিক ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, জুয়েল মৃধা, তৌহিদ জামান, সাইফুর রহমান সাইফ, সাকিরুল কবির রিটন, কাজী আশরাফুল আজাদ, মনিরুল ইসলাম, জুয়েল মৃধা, ইন্দ্রজিৎ রায়, হানিফ ডাকুয়া প্রমূখ।
এদিকে ৮ জুন বিকেলে দায়িত্ব গ্রহণের পর ৯ জুন পুলিশ সুপার যশোরে ব্যস্ত দিন পার করেন। যশোরে কর্মজীবনের প্রথমদিনই সকালে তিনি গোপনে ছদ্মবেশে কোতোয়ালি থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন কর্মস্থল পরিদর্শন করেন। বাইসাইকেল চালিয়ে সাধারণ মানুষ সেজে তিনি পুলিশের কাজকর্ম পরিদর্শণ করেন।
১০ জুন বুধবার দুপুরে তার কনফারেন্স হলে সাংবাদিকদের বলেন, ৯ জুন সকালে গিয়ে তিনি বেশ কিছু অনিয়ম দেখতে পেয়েছেন। আবার অনেক স্থানে পুলিশ রুটিন মাফিক কাজ করছেন বলেও জানান। গোপনে গিয়েছেন ভাল খারাপ দুটোই দেখেছেন। সব ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে তথ্য মিলেছে, পুলিশসুপার যশোর পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন শাখার সার্বিক অবস্থা খোঁজখবর নিতে গিয়ে যেমন যশোরবাসীকে অবাক করে দিযেছেন, পাশাপাশি তিনি নিজেও বিস্মিত হয়েছেন। তিনি ওই দিন সকালে উঠে নিজে সাইকেল চালিয়ে জেলা প্রশাসকের বাংলোয় যান, সেখানে কর্মরত গার্ড পুলিশ তাকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ডিসি সাহেবের সাথে দেখা করবেন, কিন্তু গার্ড তাকে ডিসি সাহেবের পারমিশন ছাড়া ঢুকতে দেননি।
পরে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন ট্রাফিক অফিসে। এসে তিনি কাউকে না পেয়ে চলে যান সরাসরি চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়িতে, তিনি পুলিশ ফাঁড়ির গেটে দীর্ঘক্ষণ ঝাঁকাঝাঁকি করার পরেও কেউ খুলতে আসেননি।
এরপর তিনি চলে যান কোতোয়ালি মডেল থানায়। ডিউটি অফিস রুমে ঢুকে বলেন তার ভোটার আইডি কার্ড হারিয়েছে জিডি করতে হবে। ডিউটি অফিসার জুবায়ের ও রুমের অপারেটর মনিরুল তাকে জানান, নিজেও লিখতে পারেন। বাইরে থেকে রাইটার দিয়ে লেখাতে পারেন। এসময় তিনি বাইরে জিডি লেখাতে গিয়ে কিছু তিক্ততার শিকার হন। জিডি লিখতে রাইটার তার কাছে ৫শ’ টাকা দাবি করেন। ২শ’ টাকা দিলেও জিডি লিখতে রাজি হননি এক রাইটার।