gramerkagoj
মঙ্গলবার ● ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১ আশ্বিন ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒ পিএসসি’র প্রশ্নপত্র ফাস

সৈয়দ আবেদ আলী কুলি থেকে কোটিপতি

❒ ছিলেন ফুটপাতেও, চালিয়েছেন রিকসা

প্রকাশ : মঙ্গলবার, ৯ জুলাই , ২০২৪, ০৫:১১:০০ পিএম
মাদারীপুর প্রতিনিধি:
GK_2024-07-09_668d18c681991.jpg

পিএসসি’র সাবেক ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। বাড়ি মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামে। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ঢাকায় চলে যান। এরপর জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন। প্রথমে কুলির কাজ দিয়ে শুরু হয় তার কর্মজীবন। এরপর রিকসা চালানো, হোটেলে কাজ, চাল বিক্রি করাসহ যখন যে কাজ পেয়েছেন তাই করেছেন। এরপর ড্রাইভিং শিখে চাকুরী নেন পিএসসিতে। এরপরই তার ভাগ্য খুলতে থাকে। বর্তমানে তিনি বহু টাকা ও সম্পত্তির মালিক। ডাসার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হবার স্বপ্নও দেখছেন। নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন তিন তলা বিশিষ্ট দালানঘর, একটি পাকা মসজিদ ও বাগান। কিনেছেন বহু ফসলি জমি।
সরেজমিন ঘুরে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত সৈয়দ আ. রহমানের ছেলে সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। তারা তিন ভাই ও এক বোন। ছোট বেলায় তার বাবা মারা যান। তখন তার মা অনেক কষ্ট করে সংসার চালান। মানুষের জমিতে ধান কুড়িয়েও তা বিক্রি করে সংসারের খরচ যোগাড় করতে তা মা। এমনকি কোরবানির ঈদের সময় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস কুড়িয়ে তা আবার বিক্রি করে, সেই টাকায় খাবার কিনতে হতো সৈয়দ আবেদ আলীর। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় অভাবের কারণে পড়াশুনা বাদ দিয়ে জীবন জীবিকার জন্য ঢাকায় চলে যান তিনি। কুলির কাজ দিয়ে শুরু হয় তার কর্মজীবন। বহুরাত একা একা রেলস্টেশনে ঘুমিয়েছেন। এরপর হোটেলে খাবারের প্লেট ধোয়ার কাজ, রিকসা চালানো, চাল বিক্রিসহ যখন যে কাজ পেয়েছেন, তাই করেছেন। এরপর রাতে কখনও কখনও ফুটপাটেও ঘুমিয়েছেন। এভাবেই তার ছোটবেলা কেটেছে। এরপর ড্রাইভিং শিখে পিএসসি’র চেয়ারম্যানের চালক হিসেবে চাকুরী নেন।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, তার বড় ভাই জবেদ আলী একজন কৃষক। বাড়িতে কৃষি কাজ করেন। এক বছর হলো তার এক ছেলেকে ইতালী পাঠিয়েছেন। মেঝ হচ্ছেন আবেদ আলী। ছোট সাবেদ আলী। তিনিও দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। সম্প্রতি দেশে এসে ধার দেনা করে ছেলেকে লিবিয়া হয়ে ইতালী পাঠান। কিন্তু পাচ মাস হলেও এখনও ইতালী যেতে পারেনি, লিবিয়াতেই আছেন। ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের পৈত্রিক ভিটায় এক তলার বিল্ডিং এ দুই ভাই থাকেন। সবার বড় বোন মহরজানকে বিয়ে হয়ে শশুরবাড়ি থাকেন।
এদিকে সাবেক ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলী জীবন পৈত্রিক ভিটা থেকে বেশ দুরে জমি কিনে তিনতলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনদন বাড়ি বানিয়েছেন। বর্তমানে বাড়িটির রং এর কাজ চলছে। বাড়ির পাশেই গড়ে তুলেছেন সৈয়দ আবেদ আলী কেন্দ্রিয় মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠ। পাশেই আছে আমসহ বিভিন্ন গাছের ছোট্ট একটি বাগান। তাছাড়া নিজ নামে, স্ত্রী, সন্তান, শশুর-শাশুরীসহ বিভিন্ন নামে তিনি বহু জমি কিনেছেন। বড় ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকে পড়িয়েছেন ভারতে। সিয়াম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তরের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। ছোট ছেলে ও মেয়ে ঢাকাতে পড়াশুনা করেন। ঢাকাতে বাড়িও ও দামী গাড়ি আছে। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকাতে। মাসে দুই একবার আসেন গ্রামের বাড়িতে। সেই সাথে দীর্ঘদিন ধরে ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রচার প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাড়িতে এসে গ্রামের বিভিন্ন গরীব মানুষকে নানা ধরণের সহযোগিতা করে থাকেন। এবার কোরবানীর ঈদে বহু মাংস গরীবদের মধ্যে বিলি করেছেন। তাই গ্রামের মানুষ তাকে অনেক পছন্দ করেন। তারা সৈয়দ আবেদ আলীর এধরণের অভিযোগ কিছুতেই মানতে পারছেন না।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, সৈয়দ আবেদ আলী জীবন রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখল করে গরুর খামার ও মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা করেন। পরে সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ডাসার উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামেও তার জমি আছে। কয়েক মাস আগেও এলাকার মানুষ তাকে তেমন একটা চিনতেন না। গত কোরবানির ঈদে দামী গাড়িতে চড়ে ১০০ জনকে এক কেজি করে মাংস বন্টন করেন। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। আবেদ আলীর ছেলে সিয়ামও দামি গাড়ি ব্যবহার করেন।
এদিকে সৈয়দ আবেদ আলীর গ্রামের বাড়িতে গেলে, তা তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। এসময় বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় মিন্টু সরদার বলেন, আবেদ (সৈয়দ আবেদ আলী) আমার কাছ থেকে ২৬ শতাংশ জমি কিনেছেন। প্রায় এক বছর আগে আমি তার কাছে এই জমি বিক্রি করেছি।
নাম না প্রকাশে কয়েকজন বলেন, আবেদ আলী গ্রামে বহু ফসলি জমি কিনেছেন। নিজের নামে এমনটি স্ত্রী, সন্তান ও শশুর-শাশুরীর নামেও কিনেছেন। যা তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে।
প্রতিবেশ আ. রহিম মাতুব্বর বলেন, আবেদ আলী অনেক কষ্ট করেছেন। তিনি কুলির কাজ, হোটেলে কাজ, রিকসা চালানো, চাল বিক্রিসহ নানা কাজ করেছেন। ফুটপাতেও থেকেছেন। গাড়ি চালানো শিখে তিনি ড্রাইভারের চাকুরী করেছেন। ধাপে ধাপে তিনি ধনী হয়েছেন। বর্তমানে তিনি গাড়ির ব্যবসা, হাউজিং ব্যবসা, জমির ব্যবসায়সহ নানা ধরণের ব্যবসা করেন। ব্যবসা করেই তিনি বড়লোক হয়েছেন। ছোট বেলায় বাবা মারা গেছেন। মা অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছেন। টাকার অভাবে তিনি পড়াশুনাও করতে পারেননি।
ডাসার বালীগ্রাম ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর সেলিম ফকির বলেন, সৈয়দ আবেদ আলী অত্যান্ত ভালো মানুষ। তিনি অনেক কষ্ট করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এলাকার মানুষদের অনেক সহযোগিতা করেন। তার এই প্রশ্নফাসের অভিযোগ আমরা কিছুতেই মানতে পারছিনা।
দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা প্রধান কার্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত ব্যাক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করবো।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ বলেন, পিএসসি’র সাবেক ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের সম্পত্তির ব্যাপারে খোজ খবর নেয়া হচ্ছে। এই ব্যাপারে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝