শিরোনাম |
❒ মানা হচ্ছে না টেক্সটবুক বোর্ডের নির্দেশনা
নতুন কারিকুলামের আওতায় ষান্মাষিক মূল্যায়নে ছুটির মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম করার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যশোরের দু’লক্ষাধিক অভিভাবক। ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষকরাও। একইসাথে বিভ্রান্ত হচ্ছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। অভিভাবকরা বলছেন, মূল্যায়নের মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বিঘ্নিত হবে।
শুরু হয়েছে নতুন কারিকুলামের আওতায় ষান্মাষিক মূল্যায়ন। মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে ৩ জুলাই থেকে এই মূল্যায়ন চলছে। মূল্যায়নের আওতায় রয়েছে তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণি।
যশোরে দু’লক্ষাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে মূল্যায়ন কার্যক্রমে। জাতীয় কারিকুলাম ও টেক্সটবুক বোর্ড থেকে ষান্মাষিক মূল্যায়ন সংক্রান্ত ১০ টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনায় স্বাক্ষর করেছেন টেক্সটবুক বোর্ডের সচিব মোসা. নাজমা আখতার। সেই নির্দেশনার তিন নম্বর ক্রমিকে উল্লেখ রয়েছে,‘মূল্যায়ন কার্যক্রম চালকালীন অর্থাৎ ০৩.০৭.২০২৪ থেকে ৩০.০৭.২০২৪ পর্যন্ত নির্দিষ্ট দিবসে মূল্যায়ন কার্যক্রম ব্যতিত ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির কোনো শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।’
এ ধরনের স্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও অনেক স্কুল থেকে মূল্যায়নে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্লাস করার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। শ্রেণি কার্যক্রম করা যাবে না বলে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও অনেক স্কুল থেকে মূল্যায়নে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্লাস করার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। এই নোটিশ পাওয়ার পর জেলার দু’লক্ষাধিক শিক্ষার্থী যেমন বিভ্রান্তিতে পড়েছে, ঠিক তেমনি অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষকদের মধ্যেও।
ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও শিক্ষকরা বলছেন, ‘এ যাবৎকাল রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা হয়েছে। মাঝখানে ছুটি থাকলে শিক্ষার্থীরা বাড়ি বসে লেখাপড়া করেছে, প্র্যাকটিস করেছে। এবারই প্রথম ছুটির দিনগুলোতে স্কুলে আসার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। যা বিশৃঙ্খলার শামিল। এতে মূল্যায়ন থেকে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বিঘ্নিত হবে। এটি কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত না।’
একাধিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে ছুটির দিনে কেন ক্লাসে আসার জন্য বলা হচ্ছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ক্লাস করানোর কথা বলা হয়েছে।’ যদিও সব স্কুলে মূল্যায়নে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্লাস হচ্ছে না। যেসব স্কুলে হচ্ছে সেখানে উপস্থিতির হার একেবারেই তলানিতে। অভিভাবকরা শিক্ষা অফিস কিংবা স্কুলের ক্লাস করানোর নির্দেশনা মানতে নারাজ। হাবিবুর রহমান নামে একজন অভিভাবক বলেন, ‘এ ধরনের নির্দেশনা একেবারেই অবিবেচনা প্রসূত। রুটিন অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা মূল্যায়নে অংশ নিতে পারলে মনোযোগ ঠিক থাকবে। এর মাঝখানে যদি ক্লাসে যেতে হয় তাহলে মূল্যায়ন থেকে মনোযোগ অন্যদিকে চলে যাবে।’ একই ধরনের কথা বলেন ফাতেমা ইয়াসমিন নামে আরেকজন অভিভাবক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর জিলা স্কুলে মূল্যায়নে থাকা শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে যাদের মূল্যায়ন নেই সেই চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম চলছে।
এ বাপারে যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে আমরা নোটিশ দিয়েছি। আমরাতো কর্তৃপক্ষের নির্দেশ শুনতে বাধ্য। নোটিশ দেয়ার পর রোববার খুবই কম সংখ্যক ছাত্রী আসে। আমরা তাদের নিয়ে ক্লাস করেছি। এর বাইরে আমাদের আর কী করার আছে।’
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ক্লাস করাতে বলেছি র্ঠিকই। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো জোর করবো না। অভিভাবকরা না চাইলে ক্লাস হবে না। তবে, শিক্ষকরাই বেশি ছুটি ছুটি করে।’
জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন বলেন, ‘জুম মিটিংয়ে ক্লাস করানোর কথা বলা হয়েছে। আবার টেক্সটবুক বোর্ডের নির্দেশনায় ক্লাস না করতে বলা হয়েছে। আমি অধিদপ্তরে কথা বলে বিস্তারিত জানাবো।’