gramerkagoj
সোমবার ● ৮ জুলাই ২০২৪ ২৪ আষাঢ় ১৪৩১
gramerkagoj
মোহাম্মদ ফরহাদের জন্মবার্ষিকী আজ
প্রকাশ : শুক্রবার, ৫ জুলাই , ২০২৪, ১১:০৯:০০ এ এম , আপডেট : রবিবার, ৭ জুলাই , ২০২৪, ১১:১১:২০ এ এম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2024-07-05_66877dcb135d1.jpg

মোহাম্মদ ফরহাদ বাংলাদেশের বিশিষ্ট বামপন্থী নেতা। তিনি কমরেড ফরহাদ নামে বেশি পরিচিত। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি, জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য এবং বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। আজ তার জন্মদিন।
মোহাম্মদ ফরহাদ ১৯৩৮ সালের ৫ জুলাই পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার জমাদারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আহমেদ সাফাকাত আল বারি ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। ইংরেজী, আরবী, ফার্সী ও উর্দু প্রভৃতি ভাষায় তার দখল ছিল। দিনাজপুর জেলা স্কুল সংলগ্ন একটি প্রাইমারি স্কুলে চল্লিশের দশকের শুরুতে কমরেড ফরহাদের শিক্ষা জীবন শুরু। পরে জেলা স্কুলের মেধাবী ছাত্র হিসেবে সর্বদাই পরিচিতি ও প্রশংসিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে থেকে ১৯৫৭ সালে আইএ পাস করেন। ১৯৫৯ সালে বিএ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৬১ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যকলাপে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ স্থান লাভ করেন। ১৯৬২ সালে আইন অধ্যয়নরত অবস্থায় আইয়ুব খান ফরহাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া বের করে। মোহাম্মদ ফরহাদ ১৯৫২ সালে মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে দিনাজপুর জেলা স্কুলের ছাত্র হিসেবে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৫৫ সালে নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম সংগঠক ও সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর দলটির সাধারণ সম্পাদক হন এবং আমৃত্যু এই দায়িত্ব পালন করেন। নীতি-আদর্শ বা দল পরিবর্তন করেননি কখনো। রাজনৈতিক জীবনে প্রচুর লেখালেখি করেছেন পার্টির মুখপত্র এবং কখনো কখনো জাতীয় দৈনিকে।
১৯৬০-৬২ সাল পর্যন্ত দৈনিক ‘সংবাদ’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।
ছাত্রজীবন থেকে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকা ফরহাদ ১৯৫৪ সালে প্রথম গ্রেপ্তার হন। আট মাস কারাভোগের পর মুক্তি পান এবং কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। এ সময় ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক পদে কিছু দিন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালের আইয়ুব খানের সামরিক শিক্ষানীতিবিরোধী ও হামদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। আন্দোলনকারীদের নামে হুলিয়া জারি হলে, গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য আত্মগোপনে যান। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী ফরহাদ স্বাধীন দেশে কমিউনিস্ট পার্টি বঙ্গবন্ধু সরকারকে সহযোগিতা করবে- এই সিদ্ধান্তের পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৫ সালে কমিউনিস্ট পার্টি নিজেদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে বাকশালের সঙ্গে একীভূত হলে এর কেন্দ্রীয় সদস্য ও রাজনৈতিক প্রশিক্ষক নিযুক্ত হন তিনি। ১৯৮২ সালে সেনাপ্রধান এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর সামরিক শাসনবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্য, জাতীয় দাবি পাঁচ দফা প্রণয়ন ও যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলায় বলিষ্ঠ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ৩৫ বছরের ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবনে তিনি দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর আত্মগোপন বা কারান্তরালে ছিলেন। ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পঞ্চগড়-২ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।
অসাধারণ বাগ্মী কমরেড ফরহাদ ব্যক্তিজীবন যাপন করতেন সহজ, সরল, সাদামাটাভাবে। মানুষের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল হৃদ্যতার। চোখে ছিল সাম্যের সমাজ বিনির্মাণের উজ্জ্বল স্বপ্ন। এই স্বপ্ন চোখেই ১৯৮৭ সালের ৯ অক্টোবর আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মস্কোয় জীবনাবসান ঘটে তাঁর। নিভে যায় বাংলাদেশের এক উজ্জ্বল রাজনৈতিক জ্যোতিষ্ক।

আরও খবর

🔝