gramerkagoj
শনিবার ● ৬ জুলাই ২০২৪ ২২ আষাঢ় ১৪৩১
gramerkagoj

❒ হলে বই নিয়ে খোলামেলা পরিবেশে প্রশ্নের উত্তর লেখা হয়েছে

শিক্ষার্থীরা বসলো ৫ ঘন্টার পরীক্ষায়

❒ অভিভাবক মহলে ব্যাপক ক্ষোভ

প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই , ২০২৪, ১২:৩৫:০০ এ এম , আপডেট : শনিবার, ৬ জুলাই , ২০২৪, ০৩:৪১:৫৪ পিএম
জাহিদ আহমেদ লিটন:
GK_2024-07-03_66857733675de.jpg

দেশে প্রথমবারের মত পাঁচ ঘন্টার পরীক্ষায় বসলো মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। যা নিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ব্যাপক কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। যশোর জেলার পাঁচ শতাধিক বিদ্যালয়ে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অবশ্য দেশে এই প্রথম পরীক্ষার হলে ষষ্ট থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বই নিয়ে খোলামেলা পরিবেশে প্রশ্নের উত্তর লিখেছে ও গ্রুপ ওয়ার্ক করেছে।
চলতি বছরে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে অর্ধবার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন বুধবার থেকে শুরু হয়েছে। এ পরীক্ষা চলবে ৩০ জুলাই পর্যন্ত। যদিও মাঝে একটি পরীক্ষা স্থগিত করায় তা আগষ্ট মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিষয়ভিত্তিক সিলেবাস পাঠানো হয়েছে। অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী, ষান্মাসিক বা অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন কার্যক্রম নির্ধারিত দিনে সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করতে হবে। একইসাথে এ মূল্যায়ন পরিচালনায় সীমিত পরিমাণে ফি নেওয়া যাবে। একইসাথে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ১৩টি নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সে নির্দেশনার মাধ্যমেই এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বুধবার থেকে যশোরের ৮টি উপজেলার পাঁচ শতাধিক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ট থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত মূল্যায়ন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। যশোর শহরের কোন স্কুলে সকাল ৯টায় ও আবার কোন স্কুলে সকাল ১০টা থেকে এ পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ৫ ঘন্টার এ পরীক্ষা শেষ হয়েছে বেলা ৩টায়। জেলার মোট ৫২১টি বিদ্যালয়ের লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। এটাকে শিক্ষকরা অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন উৎসব নামে অবিহিত করেছেন।
নতুন কারিকুলামের পাঁচ ঘন্টাব্যাপী এ পরীক্ষা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মাঝে ব্যাপক কৌতুহল ছিল। কিন্তু পরীক্ষা শেষে সবার মাঝে এ কৌতুহল কেটে গেছে। সপ্তম শ্রেণীর প্রশ্নপত্রে দেখা গেছে, এক হিসেবে পরীক্ষার হলে নামমাত্র একটি প্রশ্ন দেয়া হয়েছে। এ শ্রেণীতে এদিন ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা ছিল। প্রশ্নপত্রে লেখা রয়েছে, অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে ইসলামী উৎসবের পরিকল্পনা তৈরি। এখানে কয়েকটি বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা হয়েছে। কাজ-১ এ বলা হয়েছে, ইসলামী উৎসবের কথা বলি, কাজ-২ এ অভিজ্ঞতা বিনিময় করি, কাজ-৩ এ বিধি-বিধানের কথা জানাই, কাজ-৪ এ ইসলামী উৎসব/অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা তৈরি করি। এসব কাজের কয়েকটি পার্ট করে তার উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছে। এসব প্রশ্নের নেই কোন নম্বর। এছাড়া ৫ ঘন্টার পরীক্ষায় ছিল নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর ওপর পরীক্ষার্থীদের আলোচনা ও গ্রুপ ওয়ার্ক। যার মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা হলে পাঁচ ঘন্টা সময় কাটিয়েছে। যদিও পরীক্ষার হলে ছাত্র-ছাত্রীরা বই খুলে খোলামেলা পরিবেশে উত্তর লিখেছে। এ নিয়ে শিক্ষকদের কোন বাধা ছিল না। তারা সবকিছুই ওভারলুক করেছেন। এছাড়া আগেরদিন থেকেই ইউটিউবে এদিনের পরীক্ষার উত্তর পাওয়া গেছে। পরীক্ষায় কি কি আসবে সেটাও বলে দেয়া হয়েছে। যা আগেরদিন থেকেই পরীক্ষার্থীদের হাতে হাতে ঘুরেছে। ফলে ৫ ঘন্টার এ পরীক্ষা নিয়ে সর্বত্র বিতর্ক উঠেছে। সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রুপন্তি বলেছে, এদিন পরীক্ষার নামে প্রহসন করা হয়েছে। হলে বই দেখে লেখার নতুন শিক্ষা গ্রহণ করেছি।
এদিকে, নতুন কারিকুলামের আশ্চর্যজনক এ প্রশ্ন নিয়ে অভিভাবক মহল ও শিক্ষার্থীরা হতাশা ব্যক্ত করেছে। অনেক অভিভাবক এ বিষয়ে বিরুপ মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, ৫ ঘন্টার পরীক্ষায় নামমাত্র প্রশ্ন দেয়া হয়েছে, তাতে আবার নম্বর নেই। তাহলে মূল্যায়ন হবে কিভাবে। আর পরীক্ষার হলে বই দেখে লেখা, এই সময়ে এটাতো ভাবাই যায় না। অভিভাবক সাইফুল ইসলাম বলেছেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্র। সরকারের এখনই এখান থেকে বেরিয়ে আসা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তবে নতুন কারিকুলামের পরীক্ষা নিয়ে জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেন বলেন, শিক্ষার মাধ্যমে জীবনকে গড়ে তোলার জন্য সরকার নতুন এ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে। এ শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা সব বিষয়ে জ্ঞানার্জন করতে পারবে। শিশুকাল থেকেই তারা তাদের ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারবে। তিনি বলেন, নতুন বিষয়কে আমরা সহজে গ্রহণ করতে পারি না। এ কারণে অনেকে নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছেন। কিছুদিন পর তারা সবকিছু বুঝতে পারবেন ও স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করবেন।

 

আরও খবর

🔝