gramerkagoj
রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
ঝিনাইদহের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফের বাড়ি থেকে ককটেল-ম্যাগজিন উদ্ধার হলেও অবৈধ অস্ত্র গেলো কোথায় ?
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ২ জুলাই , ২০২৪, ০৮:০৬:০০ পিএম , আপডেট : শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর , ২০২৪, ০৪:২৬:৪৪ পিএম
ঝিনাইদহ অফিস:
GK_2024-07-02_66840e8b30b40.JPG

ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা ও কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফের বাড়ি থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ককটেল-ম্যাগজিন ও বিপুল পরিমান দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করলেও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সন্ধান করতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশ দাবি করছে, অভিযুক্ত আসামী আশরাফকে গ্রেপ্তার করলেই বের হতে পারে অবৈধ অস্ত্রের সন্ধান। তাকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
এলাকাবাসীর দাবি, ম্যাগাজিন উদ্ধার হলেও অবৈধ অস্ত্র গেলো কোথায় ? এমন প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। তবে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলার এজাহার নামীয় আসামী সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম পলাতক রয়েছেন। তিনিসহ তার আপন ভাই রেজাউল ইসলাম ও জাহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বের হতে পারে এ অবৈধ অস্ত্রের ভান্ডার এমনটি মনে করেন গ্রামবাসী। প্রতারণার মাধ্যমে তারা গ্রামের বহু পরিবারকে নিঃস্ব করে পথে বসানোর অভিযোগ রয়েছে।
ঝিনাইদহের সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ধোপাবিলা গ্রামে কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল আলমের বাড়িতে একটি বিকট শব্দ স্থানীয়রা শুনতে পায়। এ খবর পেয়ে থানা পুলিশ সেই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১ টি ককটেল, কৌটা, পাউডারসহ ককটেল তৈরির সরঞ্জাম, ১ টি ম্যাগজিন ও বড় আকৃতির ১৭টি রামদা উদ্ধার করে। এ সময় বাড়িতে কেউ না থাকার কারনে পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। এ ঘটনায় সদর থানায় পুলিশ বাদি হয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফসহ অজ্ঞাতদের আসামী করে মামলা দায়ের করে। এ ঘটনার পর থেকে মামলার আসামী আশরাফুলসহ তার অন্য দুই ভাই রেজাউল ও জাহিদুল গা ঢাকা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আশরাফ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে তিনি কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার ৬ ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই রেজাউল ও জাহিদুল তার সাথে ক্যাডার ভিত্তিক রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো। এলাকায় তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ইউনিয়নে চাঁদাবাজি, নির্যাতন, চাকরি বাণিজ্য, প্রতিবন্ধী স্কুলে নিয়োগ, প্রতারণাসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যে তারা করেননি। তাদের অত্যাচারে গোটা ইউনিয়নের মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলো। তারা এতোটাই প্রভাবশালী যে, তাদের সকল নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করতে হতো। তাদের ভয়ে কেউ কোন সময় প্রতিবাদ করতে পারেনি। এমনকি তারা উল্টো মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ।
ভুক্তভোগিরা জানান, অভিযুক্ত আশরাফের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় থেকে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করতেন। সেই নেতার দাপটে সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুলও তার দুই ভাই রেজাউল করিম ও জাহিদকে সাথে নিয়ে এলাকায় একটি ক্যাডার বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালে টিআর-কাবিখা, কাবিটাসহ দরিদ্র মানুষের সকল বরাদ্দ লুটপাট করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর আগেও বিভিন্ন মিডিয়ায় সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এ পরিবার ধোপাবিলা গ্রামে তার বাবা আমজাদ হোসেন মোড়ল অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে বিপুল অংকের টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যানের ভাই রেজাউল করিম। তিনি এমপিওভুক্ত করার কথা বলে এ অর্থ বাণিজ্য করেছেন।
এছাড়া, মহেশপুর উপজেলার গুড়দাহ গ্রামের আনিচুর রহমানের কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের সচিব পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে গত ২০১৩ সালে ৯ লাখ টাকা গ্রহন করেন রেজাউল করিম। পরে চাকরি দিতে না পারার কারনে তার জমি বিক্রি করা টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি দিতে থাকে রেজাউল ও তার ভাই সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল। এক পর্যায়ে স্থানীয় শালিসের মাধ্যমে চার লাখ টাকা ফেরত দিলেও এখনও ৬ লাখ টাকা না দিয়ে আত্মসাত করেন। দাবিকৃত টাকা ভুক্তভোগী আনিুচর ফেরত চাইলে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সর্বশেষ যশোর এলাকার হামিদপুর গ্রামের হতদরিদ্র দাউদ হোসেনের শিক্ষিত মেয়ে তাসলিমা সুলতানা তমার চাকরির জন্য বিভিন্ন স্থানে এ পরিবার ধর্ণা দেন। এক পর্যায়ে ঝিনাইদহে তাদের আত্মীয় স্বজনের পরিচয়ের মাধ্যমে এ দরিদ্র পরিবার গ্রামের মাঠের ধানী জমি বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকার ব্যবস্থা করেন। তাদেরই আত্মীয় শৈলকুপার নাকোইল গ্রামের বসির জোয়ারদারের মাধ্যমে ধোপাবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার শর্তে প্রতারক রেজাউল করিম ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর ১৫ লাখ টাকা গ্রহন করেন। পরে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি থাকার কারনে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু চাকরি দিতে ব্যর্থ হলে তিনি এ টাকা ফেরত দিতে তালবাহানা করেন।
শেষে তাসলিমা সুলতানা তমা ও তার স্বজনদের নিয়ে যশোর থেকে টাকা আদায় করতে থানা পুলিশ-র‌্যাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্না দেন। সকলেই আশ্বস্ত করলেও টাকা উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন। এ পরিবার রেজাউল করিমের কাছে দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে তিনি গুলি করে হত্যার হুমকি প্রদান করেন। শুধু হুমকি দিয়ে এ ক্ষ্যান্ত হননি টাকা ফেরত দিবে না বলে আদালতে এসএ পরিবহন ও বিকাশের বিভিন্ন নম্বরে ক্ষতিগ্রস্থ তমা ও তার স্বামী সিঙ্গাপুর তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে উল্টো ১৫ লাখ টাকার একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন আদালতে। এ হয়রাণি থেকে মুক্ত করতে এ নারীকে বিয়ের কুপ্রস্তাব দেন। বিয়ে করলে তার টাকা ফেরত ও মামলা প্রত্যাহার করা হবে না বলে ক্ষতিগ্রস্থ এ নারী জানান।
তবে অভিযুক্ত প্রতারক রেজাউল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে মহেশপুরে আনিচুরের কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
এদিকে, সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফের আরেক ছোট ভাই জাহিদুল ইসলাম ভুয়া নিবন্ধনে চাকরি করতেন ডেফোলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এ ঘটনাটি জানাজানি হলে তিনি আর স্কুলে যান না। তবে জেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তাসহ সকলেই বিষয়টি তদন্ত করছেন।
কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম জানান, সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম, তার ভাই রেজাউল করিম ও জাহিদুল ইসলাম এরা কিভাবে মানুষের নিঃস্ব করেছে এলাকায় খোঁজ নিলে জানতে পারবেন। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। তাদের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। এদের গ্রেপ্তার করা হলে অস্ত্রসহ অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান জানান, অপরাধী যেই হোক তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশ সব বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝