gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ৪ জুলাই ২০২৪ ১৯ আষাঢ় ১৪৩১
gramerkagoj

❒ সাবেক দু’জন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি থাকছেন নেপথ্যে

নতুন জোট আসছে যশোর আ’লীগে

❒ দুই হাউজ থেকে বের হচ্ছেন অনেকে

প্রকাশ : সোমবার, ১ জুলাই , ২০২৪, ১১:৫৮:০০ পিএম , আপডেট : বুধবার, ৩ জুলাই , ২০২৪, ১০:১২:১৪ পিএম
আসাদ আসাদুজ্জামান:
GK_2024-07-01_6682e1781f375.JPG

দু’টি গ্রুপ বা দুটি হাউজ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে যশোর জেলা আওয়ামী লীগে নতুন জোট বা তৃতীয় জোট আসছে। এমন জোটের আভাস নয়, স্পষ্ট করে জানিয়েছেন জেলা কমিটির কয়েকজন পরীক্ষিত নেতা। তাদের মধ্যে অন্যতম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরী ও অপর সাংগঠনিক সম্পাদক যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। গত কয়েকদিন ধরে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অংগ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নতুন জোটের নেতৃত্বদানকারীদের দাবি, এই জোট সংগঠনকে বাঁচানোর জোট। কাজেই এটিকে তৃতীয় জোট বলা যাবে না। যদি তৃতীয় জোট বলতে হয়, তাহলে প্রথম বা দ্বিতীয় জোট কারা? এটি সংগঠনে ‘কর্মচারীর’ বদলে কর্মীর কদর বাড়ানোর প্রয়াস থেকেই পরীক্ষিত আওয়ামী লীগাররা একজোট হচ্ছেন। যেখানে যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের প্রাক্তন অনেক নেতাও থাকবেন।
এই জোটে আর যারা আসছেন তারা হলেন, যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু, সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি মঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালী, সদর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান বাবলু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম রিয়াদসহ বেশ কয়েকজন নেতা। নেপথ্যে সাবেক দু’জন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিও থাকছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে, এই দুই সিনিয়র নেতার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

গত ৫ জুন অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের আগে থেকেই এমন আভাস শোনা যাচ্ছিল। মুলত নির্বাচনের ফলাফল এবং বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ বিষয়কে কেন্দ্র করে সেই তৎপরতা জোরালো হয়ে সেটি শক্ত অবস্থানে এসেছে। জোটের সাথে আর যারা থাকছেন তাদের মধ্যে অন্যতম জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন, জেলা যুবলীগ নেতা শেখ রফিকুল ইসলাম রফিক, কামাল হোসেন, মঈনুদ্দিন মিঠু, আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম পারভেজ, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সান-ই-শাকিলা আফরোজ মিমি, যশোর শহর যুবলীগের আহবায়ক মাহামুদুল হাসান মিলুসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নসহ তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী। এছাড়াও গত ৫জুন অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে যারা দু’টি হাউজের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান না নিয়ে বিভিন্ন প্রার্থীর হয়ে কাজ করেছেন তাদের সিংহভাগ থাকছেন এই নতুন জোটে।
এ সমস্ত বিষয় নিয়ে যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন এমপি কাজী নাবিল আহমেদের সাথে ছিলাম। সেখান থেকে বের হয়ে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের সাথেও দীর্ঘদিন ছিলাম। বিগত সংসদ নির্বাচনে শাহীন চাকলাদারের অনুপ্রেরণাতেই এমপি কাজী নাবিল আহমেদের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হই। কিন্তু পরবর্তীতে দেখলাম উপজেলা নির্বাচনের আগে শাহীন চাকলাদার আমাদের কারও সাথে আলোচনা না করেই তার ভাই কোন পদ-পদবী না থাকা তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুকে প্রার্থী ঘোষণা করলেন। যাতে এ পক্ষের আমরা অনেকেই আহত হলাম। প্রথমে এ ঘোষণার বিরোধিতা করলেও রহস্যজনকভাবে পরে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ফন্টুর পক্ষেই অবস্থান নিলেন।’
মোহিত নাথ আরও বলেন, ‘আমাদের কারও সাথে আলোচনা না করে হঠাৎ করে ফন্টুর নাম প্রস্তাব করা একটা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক আচরণ। তা ছাড়াও এই গ্রুপকে দীর্ঘদিন সেবা দিয়ে আসা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম জুয়েলকে অনেকদিন ধরেই কথা দিয়ে রেখেছিলেন তাকেই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেবেন। কিন্তু তা তিনি করলেন না। যা দেখে রাগে দুঃখে ক্ষোভে জুয়েল একা একাই নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচন করলেন।’
তিনি বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের পরে আমার উপজেলা নির্বাচন করার আদৌ ইচ্ছে ছিলো না। তারপরও রাগে দুঃখে ক্ষোভে আমিও উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হলাম। আমি মনে করি, এমপি কাজী নাবিল আহমেদ গ্রুপ কিংবা শাহীন চাকলাদার গ্রুপ, কোনো গ্রুপেই গণতন্ত্রের চর্চা নেই, কর্মীদের মূল্যায়ন নেই। এজন্য আমরা যারা মনে প্রাণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ভালোবাসি তাদের বিকল্প একটা প্লাটফর্ম গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।’
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু বলেন, ‘সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিত কুমার নাথের ডাকে সাড়া দিয়ে আমি ২০০৯ সাল থেকে এমপি কাজী নাবিল আহমেদের সাথে ছিলাম। তিনি তখনো এমপি ছিলেন না সেসময় থেকেই এ গ্রুপে সেবা দিয়ে আসছি। কিন্তু গত উপজেলা নির্বাচনে দেখলাম এখানে গণতন্ত্রের চর্চা নেই। যে কারণে আমি এ নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করিনি। আমি গণতান্ত্রিক পরিবেশে রাজনীতি করার প্রশ্নেই আর এ গ্রুপে ফিরে যাবো না। রাজনীতি চর্চার প্রশ্নে প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের নিয়ে নতুন জোট গঠন করে নতুনভাবে রাজনীতির চর্চা চালিয়ে যাবো।’
আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পরে বর্তমানে জেলা যুবলীগের সভাপতি ও এই সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী নেতা মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি ৫ জুনের নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। তার আগ পর্যন্ত তিনি এমপি কাজী নাবিল আহমেদের সাথে ছিলেন। তিনি এই নতুন জোট গঠনের অন্যতম রূপকার।
এই জোট গঠনের বিষয়ে মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সংগঠনের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চাকে প্রাধান্য দিতেই আমরা যারা সমমনা রয়েছি, তারা সবাই একতাবদ্ধ হচ্ছি। এটিকে যদি জোট বলেন, তবে জোট, যদি প্লাটফর্ম বলেন, তাহলে প্লাটফর্ম। মূল কথা হলো যশোর আওয়ামী লীগকে প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের হাতে ফেরৎ দিতে চাই।’
ফরিদ চৌধুরী বলেন, ‘ভোটের আগে থেকেই অনেকের সাথেই আমার যোগাযোগ হয়েছে। অনেক সিনিয়র নেতাও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। চারটি বিষয়কে সামনে নিয়ে আমরা এগুচ্ছি। ১. যারা আওয়ামী লীগকে ওন করেন, তারাই আমাদের সাথে থাকবেন। ২. কারো কোনো ব্যক্তিস্বার্থ কেন্দ্রীক এই জোট হবে না। আমরা বৃহৎ স্বার্থে জোট গঠন করবো। ৩. জেলা আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানো। তার জন্য প্রয়োজনে কেন্দ্রে যোগাযোগ করে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং ৪. দুই লিমিটেড কোম্পানির বিপক্ষে প্রকৃত আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠা করা’।
সাবেক পৌর মেয়র যশোর জেলা যুবলীগ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, দু’টি হাউজ আজ ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগকে ঘরের মধ্যে কর্মচারী নির্ভর করে তুলেছে। আমরা সাধারণ কর্মীদের মধ্যে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে দিতে চাই। এজন্য কাজ করছি, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করছি। এজন্য এ জোটকে কখনোই তৃতীয় জোট বলা যাবে না। আমরা প্রকৃত আওয়ামী লীগাররা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি, একটা প্লাটফর্ম গড়ে তুলছি। কারণ সাধারণ আওয়ামী লীগারদের যাওয়ার কোনো যায়গা নেই।’
এখন কবে এবং কীভাবে আওয়ামী লীগের এই নতুন ধারা আত্মপ্রকাশ ঘটাবে, সেটি দেখার অপেক্ষায় যশোরের রাজনীতি সচেতন মানুষ।

আরও খবর

🔝