gramerkagoj
বুধবার ● ৩ জুলাই ২০২৪ ১৯ আষাঢ় ১৪৩১
gramerkagoj
সহকারী থেকে নিজেই ‘অভিজ্ঞ’ অর্থোপেডিক চিকিৎসক রিপন!
প্রকাশ : রবিবার, ৩০ জুন , ২০২৪, ১১:০৩:০০ পিএম , আপডেট : মঙ্গলবার, ২ জুলাই , ২০২৪, ০৫:০১:৩৪ পিএম
আশিকুর রহমান শিমুল:
GK_2024-06-30_668181c1eb0ef.jpg

যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের রূপদিয়াতে চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণায় সক্রিয় শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট। প্রতিদিন চিকিৎসার নামে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ইউনিয়নের শতাধিক মানুষ। প্রতারণা করতে কেউ খুলে বসেছেন ক্লিনিক, কেউ মিনি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
সম্প্রতি রূপদিয়ার গ্রামীণ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপচিৎসায় রিমা খাতুন নামে একজন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। এরআগে একই স্থানে অবস্থিত এশিয়ান হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ফারিয়া নামে অপর একজন প্রসূতির মৃত্যু ঘটে। এ দু’প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে বন্ধ ঘোষণা করে যশোর স্বাস্থ্য বিভাগ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মিনি ডায়াগনস্টিক খুলে বসেছে রিপন হোসেন নামে একজন কথিত চিকিৎসক।
সূত্র জানায়, রূপদিয়া বাজারে গ্রামীণ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাশে রিপন হোসেন রোগী দেখছেন। ব্যবস্থাপত্রে ব্যবহার করছেন আজব সব ডিগ্রি। নামের আগে ব্যবহার করছেন চিকিৎসক। এলএমএফ ও আরএমপি (ঢাকা), ১০ বছরের অভিজ্ঞ অর্থোপেডিক অ্যাসিটেন্ট (এমবিবিএস), হাড়ভাঙা, বাত ব্যথা, শিরার ব্যথা, শিরার ব্যথা ও জ্বালা, জন্মগত মুগুর পা ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, হাড়ভাঙা রোগীদের করছেন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও এক্সরে। তবে, গ্রামের সকলেই রিপন হোসেনকে এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবেই জানেন। রোগী দেখতে তৈরি করছেন ভিআইপি চেম্বার। এখানে বসে সব রোগের চিকিৎসা প্রদান করেন তিনি। রোগীদের শহরের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেফার করেন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। সেখান থেকে কমিশন বাগিয়ে নেন তিনি।
অপর একটি সূত্র জানায়, রিপন হোসেন দীর্ঘদিন যশোর জেনারেল হাসপাতালের একজন অর্থোপেডিক ডাক্তারের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। হঠাৎ একদিন রূপদিয়াতে চেম্বার খুলে তিনি ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন। নামের আগে ব্যবহার করেন হরেক রকম ডিগ্রি। তিনি নিজের প্যাডে ব্যবহার করছেন ১০ বছরের অভিজ্ঞ অর্থোপেডিক অ্যাসিটেন্ট (এমবিবিএস)। এটি কোনো ডিগ্রি নয়। কিন্তু গ্রামের সহজ-সরল মানুষ তাকে ডাক্তার ভেবে সেবা নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। হাড়ভাঙা রোগী আসলেই এক্সরে করছেন নিজেই। রিপোর্টও প্রদান করছেন নিজে। কিন্তু এ কাজ করার কথা একজন রেডিওলজিস্টের। কোনো ক্লিনিক ও ডায়াগন্টিক সেন্টার যদি এক্সরে মেশিন স্থাপন করে তাহলে অবশ্যই পারমাণবিক কেন্দ্রের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু কথিত ডাক্তার রিপন হোসেনের কোনো অনুমতিপত্র নেই। নিজের একটি পুরাতন এনালগ মেশিন কিনে এক্সরে করিয়ে রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন তিন থেকে পাঁচশ’ টাকা।
এছাড়ও জন্মগত বাকা পা বা মুগুর পা একটি জটিল চিকিৎসা। রিপন হোসেনের কাছে এই ধরনের রোগী আসলেই কোনো বিশেষজ্ঞ এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই নিজেই রোগীর প্লাস্টার করে দিচ্ছেন। যাতে করে একটি শিশু আজীবনের জন্য গঙ্গু হয়ে যেতে পারে। আর বিভিন্ন ব্যথার চিকিৎসার নামে রোগীদের হরহামেশাই লিখছেন বিভন্ন এন্টিবায়োটিক।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল অ্যাক্ট ২০১০ (২০, ডিসেম্বর ২০১০-এ প্রকাশিত গেজেট) এর ধারা ২২(১) ও ২৯(১) এর আওতায় নামের আগে ডাক্তার বা চিকিৎসক ডিগ্রি ব্যবহার অপরাধ। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবী লিখতে পারবেন না। তাও আবার তাকে বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
চিকিৎসক পরিচয় দানকারী রিপন হোসেন জানান, তিনি গ্রাম ডাক্তার পাশ। একজন এমবিবিএস অর্থোপেডিক ডাক্তারের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। সেই অভিজ্ঞতা কাছে লাগিয়ে রোগীদের সেবা দেন। তবে তিনি এক্সরে করেন সত্যি। স্বাস্থ্য বিভাগ বা পারমাণবিক কেন্দ্রের কোনো অনুমতি নেই তার প্রতিষ্ঠানের। সব সময় রোগী দেখেন না, কেউ বিপদে পড়ে ফোন করলে তিনি চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদেক রাসেল জানান, রিপন হোসেন নিজের নামের আগে যে সব ডিগ্রি ব্যবহার করছেন সব ভুয়া। একজন ডাক্তারের সহকারীর হাড়ভাঙা ও বিভিন্ন ব্যথার রোগী দেখার কোনো সুযোগ নেই। টেকনোলজিস্ট ও রেডিওলজিস্ট ছাড়া নিজে এক্সরে মেশিন বসিয়ে নিজেই এক্সেরে করতে পারেন না তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

 

আরও খবর

🔝