gramerkagoj
বুধবার ● ৩ জুলাই ২০২৪ ১৯ আষাঢ় ১৪৩১
gramerkagoj
ফের বরখাস্ত হতে যাচ্ছেন জালিয়াত প্রধান শিক্ষক মৃনাল কান্তি সরকার

❒ রুদ্রপুর স্কুলে যত অপকর্ম তার সময়ে

প্রকাশ : রবিবার, ৩০ জুন , ২০২৪, ০৯:৫৮:০০ পিএম
এম. আইউব:
GK_2024-06-30_66818102c9f46.jpg

ফের বরখাস্ত হতে যাচ্ছেন যশোর সদর উপজেলার রুদ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক মৃনাল কান্তি সরকার। তাকে অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করেছে এডহক কমিটি। শিক্ষাবোর্ড থেকে মৃনাল কান্তিকে কারণ দর্শানো নোটিশে এমনটিই উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানো নোটিশের ৫ নম্বর ক্রমিকে উল্লেখ করা হয়েছে,‘কোনো আদালতের নির্দেশ ছাড়াই যে এডহক কমিটি আপনাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করেছিল তাদের উক্ত কাজটি করার কোনো এখতিয়ার ছিল না। অর্থাৎ আপনার পুনর্বহালটি হয়েছে সম্পূর্ণ বেআইনি।’ স্থানীয়দের অভিযোগ, বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে সাময়িক বরখাস্ত মৃনাল কান্তি সরকার প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে ফের বসেছেন। তার এই চেয়ার দখল নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে।
শিক্ষাবোর্ড থেকে পাওয়া নথিপত্র ঘেঁটে দেখাগেছে, মৃনাল কান্তি সরকার এমন কোনো অপকর্ম নেই যা করেননি। এবং সবগুলোই প্রমাণিত হয়েছে। তিনি স্কুল কমিটি, শিক্ষক সিলেকশন কমিটি এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে দু’জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন এবং ওই দু’শিক্ষকের এমপিও করতে গিয়ে খুলনার আঞ্চলিক পরিচালকের হাতে ধরা পড়েন। তখন এ ঘটনায় স্বীকারোক্তি ও অঙ্গীকারনামা প্রদান করেন মৃনাল কান্তি সরকার।
মৃনাল কান্তি প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে চার লাখ ৯৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। এসব ঘটনায় র্শিক্ষাবোর্ড তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান করতে হাই কোর্টে দু’টি রিট মামলা দায়ের করেন। হাই কোর্ট শুনানি শেষে ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যশোর শিক্ষাবোর্ডকে নির্দেশ দেয়। এরপর যশোর বোর্ডে ১৩ সদস্যের আপিল এন্ড আর্বিটেশন কমিটির সভায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন করা হয়।
এই ধুরন্ধর মৃনাল কান্তি সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের দু’টি পত্র জালিয়াতি করেন। এ ঘটনায় রুদ্রপুর গ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সাবেক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমান দুদকে বিষয়টি যাচাই করে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। যা শিক্ষাবোর্ডের নথিতে সংরক্ষিত রয়েছে। কারণ দর্শানো নোটিশের ৬ নম্বর ক্রমিকে উল্লেখ করা হয়েছে,‘বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশে পিবিআই কর্তৃক দায়েরকৃত দু’টি মামলায় আপনি চার্জশিটভুক্ত আসামি হওয়ায় হাজতবাস করায় ও বর্তমানে জামিনে থাকায় আইন অনুযায়ী মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনার পক্ষে সাময়িক বরখাস্ত থাকা একমাত্র পথ।’
৭ নম্বর ক্রমিকে উল্লেখ করা হয়েছে,‘এই পর্যন্ত তিনটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটিকে দিয়ে আপনার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো তদন্ত করানো হয়েছে। সকল কমিটির প্রতিবেদনে আপনার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’ ৮ নম্বর ক্রমিকে উল্লেখ করা হয়েছে,‘উক্ত অভিযোগসমূহ সরেজমিনে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে যশোর বোর্ডকে এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি নির্দেশ দেয়া হয়। যার স্মারক নম্বর ৩৭.০০.০০০০.০৭৩.৪১.০৩১.১২-২৯। এরপর বোর্ড থেকে তিন সদস্যের কমিটি দিয়ে তদন্ত করানো হয়। ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে আপনার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’ ৯ নম্বর ক্রমিকে উল্লেখ করা হয়েছে,‘এক বছরের বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়ে কোনো ধরনের কমিটি নেই। ফলে, বিদ্যালয় প্রশাসনে মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’
এ অবস্থায় দু’টি মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন আপনাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেয়া হবে না তা পত্র জারির ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হলে অথবা আপনার দর্শানো কারণ আইনানুগ বলে বিবেচিত না হলে পুনরায় কোনো যোগাযোগ ছাড়াই বিদ্যালয় এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে শিক্ষাবোর্ডের কারণ দর্শানো ওই নোটিশে।
শিক্ষাবোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মৃনাল কান্তি সরকার যে অপরাধ করেছে তাতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা ছাড়া সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।
এ বিষয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বলেন,‘১৫ কর্মদিবস সময় দিয়ে মৃনাল কান্তি সরকারকে কারণ দর্শানো হয়েছে। এখনো জবাব পাইনি। জবাব পাওয়ার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরও খবর

🔝