gramerkagoj
বুধবার ● ৩ জুলাই ২০২৪ ১৯ আষাঢ় ১৪৩১
gramerkagoj

❒ সংসদে নতুন বাজেট পাস

বাজেটে বিদেশনির্ভরতা কমিয়ে আনা হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রকাশ : সোমবার, ১ জুলাই , ২০২৪, ১২:০১:০০ এ এম , আপডেট : মঙ্গলবার, ২ জুলাই , ২০২৪, ০৫:০১:৩৪ পিএম
ঢাকা অফিস:
GK_2024-06-30_66817e02af57d.jpg

জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। রোববার সংসদের অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাজেট পাসের জন্য প্রস্তাব করলে সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, উন্নয়ন বাজেটে বিদেশনির্ভরতা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। এখন আমাদের দেশের উপযোগী বা পছন্দমতো না হলে অনেক বিদেশি ঋণপ্রস্তাব আমরা ফিরিয়ে দেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। তবে দেশ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির নানা দিক বিবেচনায় কিছু বৈদেশিক ঋণ নিতে হয়।
রোববার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ স্লোগান সম্বলিত ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। বাজেটে বিদেশনির্ভরতা কতটুকু সে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
সংসদে অধিবেশনে সরকার ও বিরোধী দলের অধিকাংশ সদস্যের উপস্থিতিতে বাজেটের ওপর ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে ২৫১টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। তিনটি মঞ্জুরি দাবির (আইন, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়) ওপর আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। আলোচনা শেষে মঞ্জুরি দাবিগুলো কণ্ঠভোটে সংসদে গৃহীত হয়। এরপর অর্থমন্ত্রী সর্বোচ্চ ১২ লাখ ৪১ হাজার ৭৫২ কোটি ৩২ লাখ ০৯ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমোদন নিতে ‘নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২৪’ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।
এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ-সদস্যরা টেবিল চাপড়ে দেশের বাজেট বাস্তবায়নের যাত্রাকে স্বাগত জানান।
এর আগে প্রস্তাবিত বাজেটে মঞ্জুরি দাবির ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও হামিদুল হক খন্দকার এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ, মো. আবুল কালাম ও মো. নাসের শাহরিয়ায় জাহেদী। তবে ওই ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার বাড়ছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
নতুন অর্থবছরে কালোটাকার মালিকরা আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়েই তাদের অঘোষিত সম্পদকে বৈধ করার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, দেশের প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক, কোনো করদাতা ফ্ল্যাট, জমির পাশাপাশি নগদ অর্থসহ স্থাবর সম্পত্তির জন্য ১৫ শতাংশ কর দিলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না। সংসদের ভেতরে-বাইরে কঠোর সমালোচনা সত্ত্বেও প্রস্তাবটি বহাল রাখা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বহাল থাকছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা কাটছাঁট করে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু তাদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি বাতিল করতে হলে ১৯৭৩ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার সংশোধন করতে হবে। এরপরই এ ধরনের গাড়ি আমদানিতে কর আরোপ করা যাবে। কিন্তু এখনো সংসদে এ ধরনের কোনো বিল উত্থাপন হয়নি। ফলে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বহালই থাকছে। তবে আগামীতে এ সংক্রান্ত বিল পাসের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। ব্যাংকিং খাত ছাড়াও নন-ব্যাংকিং খাত থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
এবারের বাজেটে ১ জুলাই থেকে নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের অবসর-পরবর্তী পেনশন-সুবিধার পরিবর্তে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকছে। স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের এই স্কিমের আওতায় আনা হয়েছে। অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য ২০২৫ সালের পহেলা জুলাই থেকে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। করমুক্ত আয়কর সীমা বিদ্যমান সাড়ে তিন লাখ টাকাই বহাল থাকবে। বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। আর মূল্যস্ফীতি আটকে রাখার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপণ্যের ওপর উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, ভুট্টা, ভোজ্যতেল, লবণ ও চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহকারীর ঋণপত্রের ওপর কর হার এক শতাংশ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে গত ৬ জুন সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন।

আরও খবর

🔝