gramerkagoj
মঙ্গলবার ● ২ জুলাই ২০২৪ ১৮ আষাঢ় ১৪৩১
gramerkagoj

❒ চরম উত্তেজনা চলছে

নাগরিকদের অবিলম্বে লেবানন ছাড়ার আহ্বান সৌদির
প্রকাশ : রবিবার, ৩০ জুন , ২০২৪, ০২:৪২:০০ পিএম , আপডেট : মঙ্গলবার, ২ জুলাই , ২০২৪, ১১:৫৫:৫৭ এ এম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
GK_2024-06-30_66811a54711a9.jpg

গাজায় যুদ্ধের জেরে লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত জুড়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাথে গুলি বিনিময় করছে হিজবুল্লাহ। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলেছে, তারা তার মিত্র হামাসকে সমর্থন করতে এবং লেবাননে আক্রমণ চালানো থেকে ইসরায়েলকে নিবৃত্ত করতে ইসরায়েলে রকেট নিক্ষেপ করছে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যোগ দিতে ইরান সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠীর হাজার হাজার যোদ্ধাও লেবাননে প্রস্তুত রয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে টানা প্রায় ৯ মাস ধরে বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই বর্বর হামলায় শুরু থেকেই লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বর্তমানে সেই উত্তেজনা চরম আকার নিয়েছে। হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যকার এই উত্তেজনার মধ্যেই ৭টি দেশ তাদের নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে লেবাননে অবস্থানরত সৌদি নাগরিকদের অবিলম্বে দেশটি ছাড়তে বলা হয়েছে।
আজ রোববার (৩০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল এবং লেবাননের সশস্ত্র গ্রুপ হিজবুল্লাহর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মধ্যে সাতটি দেশ তাদের নাগরিকদের লেবানন ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া আরও পাঁচটি দেশ তাদের নাগরিকদের এই সময়ে লেবাননে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
বৈরুতের সৌদি দূতাবাস শনিবার লেবাননে অবস্থানরত তার নাগরিকদের ‘অবিলম্বে লেবানিজ ভূখণ্ড ত্যাগ করার’ আহ্বান জানিয়েছে এবং ‘যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ রাখার’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
অন্যদিকে গত শুক্রবার অত্যন্ত অস্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে অস্ট্রেলিয়া তার নাগরিকদের লেবাননে ভ্রমণ না করতে ‘দৃঢ়ভাবে পরামর্শ’ দিয়েছে। অস্ট্রেলীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং লেবাননে অবস্থানরত অস্ট্রেলিয়ানদের অবিলম্বে দেশটি ছেড়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার নাগরিকদের লেবাননে ভ্রমণে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। একইসঙ্গে যারা সেখানে বসবাস করেন তাদের বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু থাকা অবস্থায়ই দেশটি ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একটি ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে এবং লেবাননে অবস্থানরত তার নাগরিকদের দেশটি ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। জার্মানি জোর দিয়ে বলেছে, ‘ইসরায়েল ও লেবাননের সীমান্তে পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ।’
কানাডিয়ান সরকারও লেবাননে তার নাগরিকদের লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে দেশটি ছেড়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। উত্তর আমেরিকার এই দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘দেশে এবং বিদেশে কানাডিয়ানদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাই কানাডার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’
এদিকে লেবাননে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে উত্তর মেসিডোনিয়াও রোববার তার নাগরিকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশটি ছেড়ে চলে যেতে বলেছে।
এর আগে কুয়েত গত ২২ জুন তার নাগরিকদের লেবাননে ভ্রমণ এড়াতে এবং ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে’ দেশটির অভ্যন্তরে থাকা ব্যক্তিদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। এরপরই একে একে এসব সতর্কতা ও নির্দেশনা সামনে এলো।
নাগরিকদের যেসব দেশ লেবানন ভ্রমণে না যেতে বলছে
গত ৫ জুন বৈরুতের মার্কিন দূতাবাস লেবাননে অবস্থানরত আমেরিকান নাগরিকদের ইসরায়েল ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ভ্রমণ করা এড়িয়ে চলতে নির্দেশনা দেয়। এছাড়া যুক্তরাজ্যও গত বুধবার তার নাগরিকদের লেবাননে ভ্রমণ না করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়।
দেশটির ফরেন, কমনওয়েলথ এবং ডেভেলপমেন্ট অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েল এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের মধ্যে সংঘর্ষের ঝুঁকির কারণে এফসিডিও লেবাননে সকল ধরনের ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিচ্ছে।’
এছাড়া লেবাননে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার রুদাকভ মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত দেশটিতে ভ্রমণ করা থেকে রাশিয়ান নাগরিকদের অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে ‘গুরুতর আতঙ্কের কোনো কারণ নেই’ বলেও জোর দিয়ে বলেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, কূটনৈতিক মিশন স্বাভাবিকভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং দূতাবাসের কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
আইরিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও লেবাননের নির্দিষ্ট এলাকায় ভ্রমণের বিরুদ্ধে পরামর্শ দিয়েছে এবং বর্তমানে দেশটিতে থাকা আইরিশ নাগরিকদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া গত শুক্রবার জর্ডান তার নাগরিকদের এই অঞ্চলে চলমান ঘটনাবলীর কথা উল্লেখ করে লেবাননে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেয়।
লেবাননে গত আট মাসে আন্তঃসীমান্ত সহিংসতায় ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, লেবানন থেকে চালানো হামলায় সীমান্তে ১৪ সেনা ও ১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। পাল্টাপাল্টি এই হামলায় উভয় পক্ষের কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
গত কয়েক মাস ধরে হিজবুল্লাহর এসব হামলার তীব্রতা আরও বেড়েছে। হিজবুল্লাহ যেন সীমান্ত এলাকায় আর হামলা না চালাতে পারে সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের হুমকি দিয়ে আসছে ইসরায়েল। এ নিয়ে বর্তমানে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মূলত হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর এটিই ইসরায়েল-লেবানিজ সীমান্তে সবচেয়ে খারাপ সহিংসতার ঘটনা।

আরও খবর

🔝