শিরোনাম |
লেখক ও চিন্তাবিদ আহমদ ছফার ৭৬তম জন্মদিন আজ। তাঁর লেখায় বাংলাদেশি জাতিসত্তার পরিচয় নির্ধারণ প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি ২০০২ সালে সাহিত্যে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। জীবদ্দশায় আহমদ ছফা তাঁর প্রথাবিরোধী, নির্মোহ, অকপট দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য বুদ্ধিজীবি মহলে বিশেষ আলোচিত ছিলেন।
আহমদ ছফা ৩০ জুন, ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হেদায়েত আলী এবং মাতা আসিয়া খাতুন।
আহমদ ছফা সারাজীবন অকৃতদার ছিলেন। তবে কয়েকজন নারীর সাথে তার প্রণয়সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলেন শামীম শিকদার ও সুরাইয়া খানম। এদের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে ছফা অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী (১৯৯৬) আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস রচনা করেছিলেন।
১৯৬০ সালে তিনি এলাকার নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন তিনি। ১৯৬২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হলেও অনিয়মিত ছিলেন। ১৯৬৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতক উত্তীর্ণ হন। এমএ পরীক্ষাও দেন প্রাইভেটে। ছাত্রাবস্থায়ই গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন।
১৯৭১ সালে ‘লেখকসংগ্রাম শিবির’ গঠন এবং এর বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয় অংশ নেন। পরে কলকাতায় গিয়েও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ‘দাবানল’ নামের পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জার্মান ভাষার ওপর গ্যেটে ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন। জার্মান জ্ঞানই তাঁকে গ্যেটের অমরকর্ম ‘ফাউস্ট’ অনুবাদে সাহস জুগিয়েছে। গান, গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদসহ সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখা মিলিয়ে ৩০টির বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
প্রথম উপন্যাস ‘সূর্য তুমি সাথি’ (১৯৬৭); মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘অলাতচক্র’ (১৯৯৩); ‘ওঙ্কার’ (১৯৭৫) ইত্যাদি বাংলা সাহিত্যে বিশেষ সংযোজন। তাঁর প্রবন্ধ দেশের রাজনীতি ও ইতিহাসের অনবদ্য দলিল এবং এ ক্ষেত্রে ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তিনি লেখক শিবির পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি কর্তৃক সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। ১৯৮০ সালে ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার গ্রহণ করেছেন বলে জানা যায়। তাকে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্যে (মরণোত্তর) একুশে পদক প্রদান করা হয়।
২০০১ সালে ২৮ জুলাই অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। "পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জানাজা শেষে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী গোরস্থানের পাশে তাকে দাফন করা হয়।"