gramerkagoj
মঙ্গলবার ● ২ জুলাই ২০২৪ ১৮ আষাঢ় ১৪৩১
gramerkagoj

❒ উপশহর গোলমার্কেট ভাঙার পর ৮ বছর পার

আট বছর ধরে অপেক্ষায় ৫০০ আবেদনকারী

❒ ২০১৭ সালে শুরু হয় ১০ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ

প্রকাশ : শনিবার, ২৯ জুন , ২০২৪, ১১:৫৫:০০ পিএম , আপডেট : সোমবার, ১ জুলাই , ২০২৪, ০১:১৩:৩০ পিএম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম:
GK_2024-06-29_66804755e03d2.jpg

ব্যবসায়ীদের বৃহৎ স্বার্থে যশোর উপশহরের গোলমার্কেটটি ভেঙে ৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ১০ তলা বিশিষ্ট মার্কেট নির্মাণ শুরু করলেও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারছেনা। কমপক্ষে ৫০০ ঘরের টার্গেট করে সরকারি উদ্যোগে দেশের মধ্যে অন্যতম একটি বড় মার্কেট হিসেবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই চালু করার সময়সীমা থাকলেও তা ঠিক থাকছে না। কেবলমাত্র পিলার ও রড দৃশ্যমান হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে হ্উাজিং এস্টেট যশোরের কর্মকর্তারা আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করলেও রয়েছে নানা শঙ্কা। যে কারণে নির্মাণাধীন অত্যাধুনিক ওই মার্কেটে ঘর পেতে ইতিমধ্যে আবেদন করা ৫০০ ব্যবসায়ী রয়েছেন উৎকণ্ঠায়। তাদের দাবি, আট বছর আগে ভাঙা হয়েছে গোলমার্কেট। সেই থেকে বাস্তুহারার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। এ কারণে দ্রুত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে ঘর বরাদ্দ দেয়ার দাবি তাদের।
কয়েক যুগ ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা উপশহর হাউজিং এস্টেটের মালিকানাধীন গোলমার্কেটে এক সময় ঘরপ্রতি মাত্র ৭০ টাকা মাসিক ভাড়া ও কিছু অগ্রিম দিয়ে এবং সর্বশেষ ৭০০ টাকা ভাড়া দিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। উপশহর খাজুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকার এই মাকের্টের ব্যবসায়ীরা প্রথম দিক থেকেই ব্যবসায়িক মন্দায় ছিলেন। এক পর্যায়ে ২০১৬ সালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে উপশহরের গোল মার্কেটটি ভেঙে সময় উপযোগী মার্কেট করার প্রস্তাবনা দেয়। প্রস্তাবিত এই মার্কেটে দশ তলার কথা উল্লেখ করা হয়। প্রতি তলায় ৫০টি করে ঘর তৈরি করার প্ল্যানও পাঠানো হয়। এরপর অর্থ বরাদ্দ হয়। ওই বছরই ব্যবসায়ীদের নোটিশ করা হয়। আর ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় নির্মাণ কাজ। যেখানে সাড়ে ৪০০ ব্যবসায়ী অত্যাধুনিক ভবনে সহজ শর্তে বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ পাবেন এমন ঘোষণাও দেয়া হয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ থেকে। গোলমার্কেটে আগে যারা ঘর বরাদ্দ নিয়ে ছিলেন তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে উল্লেখ করে তারা। মার্কেট নির্মাণ ত্বরান্বিত করতে টেস্ট পাইলের রিপোর্ট ঢাকায় পাঠানো হয়। পরে ওই টেস্ট পাইল অনুমোদিত হয়ে আসলে সার্ভিস পাইলের কাজ শুরু হয়। এরপর একে একে দৃশ্যমান হতে থাকে বড় বড় পিলার। টানা দু’বছর কাজ চলার পর করোনার সময় কাজে স্থবিরতা আসে। আবার মাঝপথে ভবনের পাশের কিছু আয়তন বাড়ায় বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য ২০২২, ২০০৩ এবং চলতি বছরের কয়েক মাস কাজ বন্ধ ছিল। কাজ আবার চলতি মাসে শুরু হয়েছে। যে কারণে দশতলা ভবন নির্মাণ যথাসময়ে হবেনা এমন শঙ্কা করছেন মার্কেটে ঘরের জন্য আবেদনকরা ব্যবসায়ীরা, এমনকি খোদ হাউজিং এস্টেটের কর্মকর্তারাও।
জাতীয় গৃহায়ন সূত্র জানিয়েছে, দশতলা বিশিষ্ট ভবনে ৫০০ টি ঘর হবে। নীচতলা রাখা হচ্ছে গ্যারেজের জন্য। এ প্রকল্পে বরাদ্ধ হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা। নির্মাণ সামগ্রীর উচ্চমূল্যের কারণে ব্যয় বরাদ্দ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয় সভা করে ব্যবস্থা নেবে। ঢাকার বসুন্ধরা সিটির আদলে মার্কেটটি নির্মাণের ঘোষণায় ব্যবসায়ীদের মধ্যেও উৎসাহ কাজ করছিল প্রথম প্রথম। তবে, নির্মাণ কাজ বারবার হোঁচট খাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এখন হতাশ। তারা আদৌ ঘর পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
ভেঙে দেয়া গোলমার্কেটের এক সময়ের ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন, কামরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নানসহ পাঁচ-সাতজন জানিয়েছেন, প্রায় আট বছর আগে গোল মার্কেটটি ভাঙা হয়েছে। তাদেরকে সহজশর্তে ঘর দেয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু আট বছর পার হলেও নতুন ভবনের দেখা মেলেনি। দেখা যাচ্ছে টিন দিয়ে ঘিরে কাজ চলছে ছয় বছর ধরে। শুধু কয়েকটি পিলার ও রড খোয়া পাথর দৃশ্যমান হয়েছে। তারা দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করে বণ্টন করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উপবিভাগীয় প্রকোশলী রিদুয়ার হোসেন দৈনিক গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, দেশের মধ্যে রাজধানীর বাইরে এ ধরনের উদ্যোগ এই প্রথম। বসুন্ধরা সিটির আদলে যে মার্কেটটি নির্মাণ চলছে, এখানে থাকবে অত্যাধুনিক নানা সুবিধা। বড় ধরনের অত্যাধুনিক সরকারি মার্কেটটি যাতে সত্যিকার অর্থে যশোরের সুবিধা বঞ্চিত ব্যবসায়ীদের কাজে আসে সেই চেষ্টা চালাচ্ছে হাউজিং এস্টেট যশোর। তবে, টার্গেট অনুযায়ী এ বছরের ডিসম্বরে কাজ শেষ হচ্ছেনা। ১০ তলা ভবনের সিদ্ধান্ত হলেও প্রকল্পের প্রথম বরাদ্দে পাঁচতলা পর্যন্ত শেষ হবে। কাজ একটু বেড়ে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত বরাদ্দ ছাড় কারানোর জন্য মাঝে বেশ সময় চলে গেছে। মাঝে দু’বছর কাজও বন্ধ ছিল। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা পর চলতি বছর আবার কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আরও এক বছর।

আরও খবর

🔝