শিরোনাম |
ব্রিটশ বিরোধী আন্দলনে নেতৃত্বদানকারী যে ক'জন বরেণ্য ব্যক্তির নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন হাজি মোহাম্মদ দানেশ।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ ১৯০৩ সালে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মৌলভী সালামত উদ্দীন।
১৯২৩ সালে তিনি প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর তিনি এক বছর দিনাজপুর জুনিয়র মাদরাসায় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে আলীগড় গমন করেন। সেখানকার মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে এমএ ও ১৯৩২ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩৩ সালে দিনাজপুর জজ কোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন ১৯৩৮ সালে। ওই বছর তিনি ন্যাপ এর প্রথম সহ-সভাপতি ও পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হোন। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি ও রাজনৈতিক তৎপরতায় তিনি গ্রেফতার হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে (লেলিন বাদী) যোগদান করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হাজী মোহাম্মদ দানেশ দিনাজপুর-রংপুর ও জলপাইগুড়িসহ সারা উত্তরাঞ্চলে কৃষকদের এক জঙ্গি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। উপমহাদেশে এই আন্দোলন ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন নামে পরিচিত।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ সারাটা জীবনই শোষিত ও মেহনতি মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। দিনাজপুরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রথমে হাজী মোহাম্মদ দানেশের নামে `হাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজ` হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে তার নামেই বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়াও তার নামে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুরে একটি কলেজও রয়েছে।
১৯৭১ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে পদত্যাগ করে মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। হাজী দানেশ ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগে (বাকশাল) যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। বাকশাল সরকারের পতনের পর ১৯৭৬ সালে তিনি জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন পুনরুজ্জীবিত করেন। কিন্তু ১৯৮০ সালে এই দল বিলোপ করে হাজী দানেশ গণতান্ত্রিক পার্টি নামে একটি নতুন দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে গণতান্ত্রিক পার্টি জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে একীভূত করা হয়। হাজী দানেশ জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন জাতীয় কৃষক পার্টির প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি দিনাজপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী কিংবদন্তি কৃষক নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশ ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন ভোর ৪টা ২৫ মিনিটে তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।