gramerkagoj
রবিবার ● ৩০ জুন ২০২৪ ১৬ আষাঢ় ১৪৩১
gramerkagoj

❒ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

খুনের পরিকল্পনা বুঝতে পেরে ফ্ল্যাট থেকে বেরুবার সময় আনারকে জাপটে ধরে ফয়সাল
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন , ২০২৪, ১০:০০:০০ পিএম , আপডেট : রবিবার, ৩০ জুন , ২০২৪, ১১:৫৪:৩৯ এ এম
ঢাকা অফিস:
GK_2024-06-27_667d92043445e.JPG

ঝিনাইদহের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের পরিকল্পনা টের পেয়ে কলকাতা নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই পেছন থেকে তার মুখে চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম মিশ্রিত রুমাল দিয়ে চেপে ধরেন ঘাতক ফয়সাল আলী সাহাজী। এরপর অন্য আসামিরা মিলে তাকে অচেতন ও হত্যা করা হয়।
এ হত্যাকাণ্ডে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দুই আসামি ফয়সাল আলী সাহাজী (৩৭) ও মোস্তাফিজুর রহমান ফকিরের (৩৪) স্বীকারোক্তিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে তাদের আদালতে হাজির ও ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ তাদের ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আনার হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত গ্রেপ্তারকৃত এবং আদালতে সোপর্দ হওয়া আসামি শিমুল ভূইয়া ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দি পর্যালোচনা ও তদন্তকালে জানা যায়, এমপি আনারকে অপহরণপূর্বক হত্যায় ঘাতক দলের প্রধান ভাড়াটে খুনি শিমুল ভূইয়ার কিলিং মিশনের সহযোগী হিসেবে আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজুরের সংশ্লিষ্টতা ছিল (ভাড়াটে খুনি হিসেবে)। ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদকে নিয়েই শিমুল ভূইয়া হত্যা বাস্তবায়ন করেন।
তদন্তকালে আরও জানা যায়, শিমুল ভূইয়া ও আক্তারুজ্জামান শাহীন পরিকল্পনা মোতাবেক ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে বড় অংকের অর্থ দেবেন বলে গত ২ মে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় নিয়ে হোটেলে রাখেন। তারপর হোটেল থেকে মোস্তাফিজ ১০মে এবং ফয়সাল ১২মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের বাসায় ওঠেন। এমপি আনার ১২মে কলকাতায় যান এবং ১৩ মে অন্য আসামিদের প্রলোভনে আসামি ফয়সাল ও শিমুল ভূইয়ার সঙ্গে সঞ্জীবা গার্ডেনের বাসায় যান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিমুল ভূইয়ার নির্দেশে ফয়সাল, মোস্তাফিজ, জিহাদ এমপি আনারকে হত্যার কাজ শুরু করে। বিষয়টি আনার তাৎক্ষনিকভাবে বুঝতে পেরে ফ্ল্যাট থেকে চলে যেতে উদ্যত হন, এসময় আসামি ফয়সাল তাকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন এবং মুখে চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম মিশ্রিত রুমাল দিয়ে চেপে ধরেন। এরপর মোস্তাফিজ ও শিমুল ভূইয়াদের যোগসাজশে আনারকে হত্যা করা হয়। এরপর তার মৃতদেহ গুম করতে শিমুল ভূইয়ার নেতৃত্বে ও নির্দেশে আনারের দেহকে কেটে হাড় থেকে মাংস আলাদা করা হয় এবং মৃতদেহ নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়।
আবেদনে আরও বলা হয়, এমপি আনারকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনা প্রকাশিত হলে আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজ নিজেদের নাম পরিচয় ও চেহারার আকৃতি পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। তদন্তকালে ঘটনার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজুরকে খুঁজে বের করা ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হয়। ডিবি ওয়ারি বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম সোর্স ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জানতে পারে আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজ চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলার পাহাড়ে অবস্থান করছেন। সেই সংবাদের ভিত্তিতে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে গত ২৬ জুন চট্টগ্রাম জেলার ভোজপুর থানার শ্রী শ্রী মা পাতাল কালী মন্দির থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
রিমান্ড আবেদনের পক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল শুনানি করেন। আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে বিচারক তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ মামলায় আগে গ্রেপ্তার তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। এর মধ্যে গত ৩ জুন আসামি শিলাস্তি রহমান, ৪ জুন তানভীর ভূঁইয়া, ৫ জুন সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া এবং গত ১৪ জুন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এছাড়া ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে গত ১৩ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাদ শেষে ১৬ জুন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, এমপি আনার ১২ মে ভারত যান। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে ডরিন অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতেও একটি হত্যা মামলা হয়।

আরও খবর

🔝