শিরোনাম |
অ্যাকশান শুরু করেছে যশোর স্বাস্থ্য বিভাগ। কোনো রোগী অপচিকিৎসার শিকার হলেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন সিভিল সার্জন ডাক্তার মাহমুদুল হাসান। গত দু’দিনে দুই রোগীর মৃত্যুর ঘটনার সাথে সাথেই ব্যবস্থা নিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। আর আগে কোনো প্রতিষ্ঠানে ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক দ্রুত ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি স্বাস্থ্য বিভাগের।
বুধবার যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত সিটি হাসপাতালে কাজল নামে এক প্রসূতি ভর্তি হন। সেখানে গভীর রাতেই তার সিজারিয়ান করানো হয়। কিছু সময় পর রোগীর রক্তক্ষরণ শুরু হলে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সাড়ে ৩ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ডাক্তার ফারজানা পারভিন রোগীর হিমগ্লোবিন পরীক্ষা না করেই অপারেশন কক্ষে নিয়ে যান। তার কিছু সময় পর জানানো হয় রক্তের প্রয়োজন। তারা দ্রুত এক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করেন। রক্তক্ষরণের সাথে সাথে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার না করে ক্লিনিকে রেখে দেয়া হয়। পরিস্থিতি খারাপ হলে রোগীকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বলছে রক্ত না দিতে পারায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আগে থেকে যদি তাদের জানানো হতো রোগীর অবস্থা, তাহলে অন্য কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতেন বা রক্তের ব্যবস্থা আগে করে পরে অপারেশন করতেন। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন, সভাপতি সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মীর আবু মাউদ, সদস্য অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডাক্তার শায়লা শারমিন তিথি ও সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রেহেনেওয়াজ রনি। আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার রুপদিয়ায় অবস্থিত গ্রামীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপচিকিৎসায় লিমা খাতুন নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়।
স্বজনদের জানান, লিমা খাতুনের প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে সোমবার ভোরে তাকে রুপদিয়া বাজারের গ্রামীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয়। এরপর কোনো ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া ও প্রয়োজনীয় রক্তের ব্যবস্থা না করেই অস্ত্রোপচার করা হয়। তিনি একটি পূত্রসন্তান প্রসব করেন। তবে অস্ত্রোপচারের পর রক্তস্বল্পতার কারণে জ্ঞান ফিরছে না জানিয়ে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। লিমাকে খুলনায় নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান, অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। এই খবর পেয়ে স্বজনেরা ক্লিনিকে গিয়ে তালা ঝোলানো দেখতে পান। তখন তারা ক্লিনিকে ভাংচুর চালান। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর পর সিভিল সার্জন ডাক্তার মাহমুদুল হাসান নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিষ্ঠান সিলড করেন ও ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন।
গ্রামীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতালের পাশেই অবস্থিত এশিয়ান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গত বছরের ৬ জুলাই ফারিয়া নামে এক প্রসূতিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে রাতে তার সিজারিয়ান অপারেশন করানো হয়। এ সময় কন্যা সন্তান জন্ম দেন ফারিয়া। কিন্তু একপর্যায়ে অপারেশনের স্থান থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ভোরে তাকে খুলনায় রেফার করেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফারিয়া। তবে, এই নামে নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই বলে নিশ্চিত করেছে সিভিল সার্জন অফিস।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর রুনা কানের সমস্যা নিয়ে ইউনিক হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক অধ্যাপক ডাক্তার আবু কায়সার ৩৫ হাজার টাকার চুক্তিতে তার অপারেশন করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায় তার মৃত্যু হয়। এদিকে তার মৃত্যুর পর রোগীর স্বজনরা ডাক্তার ও ক্লিনিকের অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ তুলে হট্টগোল করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
সিভিল সার্জন ডাক্তার মাহমুদুল হাসান বলেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে অবহেলা করা কিংবা অপচিকিৎসা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রতি যশোরের কয়েকটি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যা অপ্রত্যাশিত। ঘটনা গুলোর নেপথ্যে কি আছে তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছভাবে তদন্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান কিংবা চিকিৎসক যেই দোষী হন না কেনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো নমনীয়তা দেখানো হবে না।