gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৭ জুন ২০২৪ ১৩ আষাঢ় ১৪৩১
gramerkagoj
রাসেল ভাইপার আতঙ্ক ছড়াচ্ছে গুজবে
প্রকাশ : শনিবার, ২২ জুন , ২০২৪, ১২:৫২:০০ এ এম
এম. আইউব:
GK_2024-06-22_6675cc0750778.jpg

বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার নিয়ে যেন গুজবের লাগাম টানা যাচ্ছে না। এই গুজবের সর্বশেষ আক্রান্ত যশোরের সাংবাদিকরা। শুক্রবার সকালে গুজব ছড়ানো হয়, যশোরের অভয়নগরে রাসেল ভাইপারের কামড়ে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই খবর জানার পর সাংবাদিকরা তা যাচাই করতে গলদঘর্ম হন। কয়েক ঘণ্টা যাচাই বাছাই করে শেষ পর্যন্ত খবরটি ¯্রফে গুজব বলে প্রমাণিত হয়।
যে ছবিটি দিয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হয় সেটি ২০২২ সালে কক্সবাজারের ঘটনা। ওইসময় সাপের কামড়ে একটি শিশু মারা যায়। মারা যাওয়া শিশুটির নাম ছিল জিহাদ। তার বয়স ছিল চার বছর। সে কক্সবাজারের পেটুয়া উপজেলার নন্দীরপাড়ার সালাহউদ্দীনের ছেলে। ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর তার মৃত্যু হয়।
সেই ছবিটিই নিদারুনভাবে গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পর বহু মানুষ এসব রটনাকারীদের ধিক্কার জানিয়েছেন।
কেবল যশোরের ঘটনা দিয়েই গুজব ছড়ানো হচ্ছে না, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাসেল ভাইপারকে যেভাবে হিং¯্র বলে উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সেই ধরনের হিং¯্র না এই সাপটি। সাপ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণাপত্র ঘেঁটে যেটি জানা গেছে তা হচ্ছে, কোনো ধরনের বিষাক্ত সাপ এ পর্যন্ত মানুষকে দাবড়িয়ে কামড় দিয়েছে এমন নজির নেই বললেই চলে। এছাড়া, রাসেল ভাইপার আকৃতিতে প্রায় অজগরের মতো। আকারে বড় হওয়ায় অজগর যেমন চাইলেও দ্রæত চলাচল করতে পারেনা, রাসেল ভাইপারও ঠিক তেমনি আহামরি দ্রæত চলাফেরা করতে পারে না বলে সাপ বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন ধরনের গবেষণা বলছে। তবে, রাসেল ভাইপার তার খাবার শিকারে খুবই হিং¯্র বলে বিভিন্ন গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। ওইসব গবেষণা বলছে, রাসেল ভাইপার তার টার্গেটকৃত খাবার যেকোনো মূল্যে শিকার করে। আর এ কাজটি সে খুবই দ্রæততার সাথে করে। সাপটি শিকারে ছোবল দেয়ার পরপরই সেটি নিস্তেজ হয়ে যায়।
যশোর স্বাস্থ্য বিভাগও রাসেল ভাইপার নিয়ে গুজবের ব্যাখ্যা দিয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের ‘মিডিয়া সেল, সিভিল সার্জন’ নামের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রæপে মেডিকেল অফিসার অনুপম দাস শুক্রবার বিকেল ৩ টা ২৯ মিনিটে ‘আপডেট : যশোরে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে মৃত্যু সংক্রান্ত গুজব বিষয়ে’ শিরোনামে একটি পোস্ট শেয়ার করেন। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন,‘যশোরে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে একজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে। বিষয়টি একটি গুজব। এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে গুজবে কান দিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে বরং সচেতন থাকার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’ স্বাস্থ্য বিভাগের ওই পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে,‘রাসেল ভাইপার অত্যন্ত বিষধর হলেও অন্যান্য বিষধর সাপের মতোই তা লাজুক প্রকৃতির। নিজ থেকে তেড়ে আসে বা মানুষের আবাসস্থলে উঠে আসে এমন তথ্য সঠিক নয়। বরং এটি নির্জন ও নিরিবিলি স্থানে গুঁটিসুঁটি মেরে থাকতে পছন্দ করে এবং উত্ত্যক্ত করলে প্রথমে জোরে ফোঁসফোঁস শব্দ করে। এবং অধিক উত্ত্যক্ত করলে দংশন করে।
তাই সাপ দেখা গেলে কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। সাপকে মারতে যাবেন না। এতে সে ক্ষিপ্ত ও আতঙ্কিত হয়ে দংশন করতে পারে। সাপের অস্তিত্ব দেখা গেলে বনবিভাগকে অবহিত করুন। কাউকে যেকোনো প্রকার সাপে দংশন করলে কোনো প্রকার দেরি না করে নিকটতম সরকারি হাসপাতালে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান।’
অনুপম দাসের ওই পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে,‘যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সাপের কামড়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় এন্টিভেনম পর্যাপ্ত মজুত আছে বলে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক।’ স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এ ধরনের পোস্ট দেয়ার মূল লক্ষ্য জনসাধারণকে আতঙ্ক থেকে দূরে রাখা।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়াতে যে যার মতো কাজ করছে। প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার নামে একটি আইডিতে রাজু আহমেদ নাম উল্লেখ করে ০১৭৮০-৯৩২৭১৭ নম্বর দিয়ে বলা হয়, ‘রাসেল ভাইপার সাপ দেখার পর ০১৭৮০-৯৩২৭১৭ নম্বরে ফোন করলে ¯েœক রেসকিউ টিম গিয়ে ওই সাপ ধরে নিয়ে যাবে।’ যদিও কোন দপ্তরের রেসকিউ টিম সেই সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। ফেসবুকে এই পোস্টটি দেখার পর এই প্রতিবেদক অসংখ্যবার ওই নম্বরে ফোন করলেও কেউ রিসিভ করেননি। বেশিরভাগ সময় বিজি টোন পাওয়া যায়। পরে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের আইডি থেকে পোস্টটি ডিলিট করে দেয়া হয়।
বাস্তব অবস্থা দাঁড়িয়েছে, রাসেল ভাইপার নিয়ে ফেসবুকে যেকোনো ধরনের পোস্ট দ্রæত ছড়িয়ে পড়ছে। বেশিরভাগ নেটিজেন মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে এসব পোস্ট শেয়ার করছেন। কিন্তু শেয়ার করা ওইসব পোস্ট যে মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলছে তা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। এ কারণে রাসেল ভাইপার সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের পোস্ট শেয়ার করার আগে ভালোভাবে জেনেবুঝে নিতে হবে। তাহলে আতঙ্ক না হয়ে বরং মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে।

 

আরও খবর

🔝