gramerkagoj
শুক্রবার ● ২১ জুন ২০২৪ ৭ আষাঢ় ১৪৩১
gramerkagoj
ঈদের কেনাকাটায় এগিয়ে শিশুরা
প্রকাশ : শনিবার, ১৫ জুন , ২০২৪, ০৯:৩২:০০ পিএম , আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২০ জুন , ২০২৪, ০৮:৫৪:৫৪ পিএম
মিনা বিশ্বাস:
GK_2024-06-15_666db44880f2a.jpg

রাত পোহালেই ঈদ। সাজসজ্জা ছাড়া উৎসব অসম্পূর্ণ। নিজেকে সাজাতে, সুন্দর দেখতে সবাই ভালোবাসেন। ধনী গরীব সবারই তাই উৎসব নিয়ে থাকে পরিকল্পনা। যে যার মতো করে প্রস্তুতি নেন উৎসবের আনন্দে সামিল হতে। তাই পশু কোরবানি প্রধান কাজ হলেও ঈদুল আজহায়ও থেমে থাকে না নিজেকে সাজানোর আয়োজন। ঈদুল ফিতরের মতো না হলেও কোরবানির ঈদেও সবাই যার যার মতো করে চেষ্টা করেন কেনাকাটা করতে। এ তালিকায় স্বাভাবিকভাবেই থাকে পোশাক, জুতা ও কসমেটিকস্। সৌন্দর্য সচেতন নারীরা ছোটেন পার্লারে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে যশোর শহরের বিভিন্ন বিপণীবিতানে চলছে কেনাকাটা। শহরের হাটচান্নি মার্কেট, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট, কালেক্টরেট মার্কেট, এইচএমএম রোড, জেস টাওয়ার, সিটি প্লাজা, মুজিব সড়কের ফ্যাশান হাউজগুলোতে চলছে কেনাকাটা। বাড়ির শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সীদের জন্যই কিনছেন ক্রেতারা। তবে এই ঈদে বড়দের চেয়ে শিশুদের কেনাকাটা চলছে বেশি।
মেয়ে শিশুদের হালফ্যাশান আলিয়া ভাট ড্রেস। ঈদুল ফিতরে জনপ্রিয় হওয়া এ পোশাকের বিক্রি চলছে ঈদুল আজহাতেও। অন্যদিকে কিশোরী ও তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে ছিল পদ্মজা ড্রেস। যার বিক্রি চলছে এ ঈদেও। এর পাশাপাশি আফগানি, রাজস্থানি, সারারা, গারারা, নায়রা, লেহেঙ্গা, গাউন কিশোরী ও তরুণীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। তবে দেশি বিদেশি পোশাকের নানা ধরনের বাহারি নাম ও ডিজাইনে চমক থাকলেও চড়া দামের কারণে সাধ আর সাধ্যের মেলবন্ধন ঘটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই গত ঈদের মতোই এবারের ঈদেও ক্রেতা অসন্তোষ রয়েছে।
পোশাকের দাম:
জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে শিশুদের ফ্রক, স্কার্ট, সারারা, গারারা, পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। কালেক্টরেট মার্কেটে শিশুদের ফ্রক ও স্কার্ট পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকায়। আলিয়া ভাট ড্রেস, গাউন, সারারা ও গারারা পাওয়া যাচ্ছে এক হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকায়। ছেলে শিশুদের পাঞ্জাবী পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়। শার্ট ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। গেঞ্জি ২৫০ থেকে ৮০০ টাকা। জিন্স প্যান্ট ৩৫০ থেকে এক হাজার টাকা।
কাপুড়িয়া পট্টিতে শিশুদের ফ্রক, আলিয়া ভাট ড্রেস, গাউন, সারারা, গারারা, লেহেঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে আট হাজার ৫০০ টাকায়। শিশুদের গেঞ্জি ৪৫০ থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে শার্ট। পাঞ্জাবী ৫৫০ থেকে এক হাজার ৫০ টাকা। জিন্সের প্যান্ট এক হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সিটি প্লাজায় শিশুদের গেঞ্জি বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে এক হাজার টাকায়। শার্ট ৭০০ থেকে দুই হাজার টাকা। প্যান্ট এক হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা। ফ্রক এক হাজার ৭০০ থেকে চার হাজার টাকা। স্কার্ট দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। গাউন, সারারা, গারারা, আলিয়া ড্রেস চার হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।
মুজিব সড়কের ফ্যাশান হাউজে শিশুদের বিভিন্ন পোশাক দুই হাজার থেকে ছয় হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। লেহেঙ্গা দুই হাজার ৫৫০ টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা। শিশুদের ফ্রক পাওয়া যাচ্ছে ৩৭৫ থেকে তিন হাজার টাকায়। ছেলে শিশুদের পাঞ্জাবী ৬৭৫ টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা। শার্ট ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। প্যান্ট এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা। গেঞ্জি ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা।
অন্যদিকে কিশোরী ও তরুণীদের বিভিন্ন পোশাকের মধ্য হাটচান্নি মার্কেট, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে থ্রি পিছ পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়। কাপুড়িয়া পট্টিতে থ্রি পিছ, সারারা, গারারা, লেহেঙ্গা, নায়রা ও গাউন পাওয়া যাচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার ২০০ টাকায়। আফগানি ও রাজস্থানি ড্রেস পাওয়া যাচ্ছে চার হাজার থেকে ছয় হাজার টাকায়। আলিয়া ভাট ও পদ্মজা ড্রেস তিন হাজার ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
জেস টাওয়ারে হাতের কাজের সুতি ও সিনথেটিক বিভিন্ন থ্রি পিছ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার টাকায়। টু পিস এক হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা। ওয়ান পিছ ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা। সিটি প্লাজায় থ্রি পিস, সারারা, গারারা, নায়রা, গাউন, লেহেঙ্গা, আলিয়া ভাট ড্রেস তিন হাজার ৫০০ টাকা থেকে পনেরো হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুজিব সড়কের বিভিন্ন ফ্যাশান হাউজে থ্রি পিস পাওয়া যাচ্ছে দুই হাজার ৫০০ থেকে নয় হাজার ৯৯০ টাকায়। কাপল ড্রেস ও পারিবারিক ড্রেস ছয় হাজার টাকা থেকে পনেরো হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
কালেক্টরেট মার্কেট, জেস টাওয়ার ও সিটি প্লাজায় পুরুষদের প্যান্ট পাওয়া যাচ্ছে এক হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকায়। গেঞ্জি ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা। শার্ট ৭০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। পাঞ্জাবী ৮০০ থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পোশাকের পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে চলছে জুতা-স্যান্ডেল ও কসমেটিকসের বেচাকেনা। এছাড়া বিভিন্ন পার্লারে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিউটিশিয়ানরা। সৌন্দর্য সচেতন নারীরা সেবা নিতে ছুটছেন এসব পার্লারে।
যা বলছেন ক্রেতারা:
শহরের খড়কি এলাকার শাহনাজ পারভীন বলেন, সাধ আর সাধ্যের মেলবন্ধন ঘটানো বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। পোশাকের অস্বাভাবিক দাম। মোল্লাপাড়ার সাথী খাতুন বলেন, গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরছি, দরদাম বোঝার জন্য। এখনো পোশাক কিনতে পারিনি। সবখানেই দাম বেশি। খালধার রোড এলাকার সালমা ইসলাম বলেন, পোশাকের দাম অনেক বেশি। ঈদ বলে কথা তাই কিনতে হচ্ছে। বেজপাড়ার ফেরদৌসী বেগম বলেন, মেয়েদের জন্য দুটি নায়রা কিনেছি সাত হাজার টাকায়। দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে।
বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা:
শহরের কাপুড়িয়া পট্টির বিভিন্ন পোশাকের দোকানে বিকাশ পেমেন্টে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক সুবিধা রয়েছে। মুজিব সড়কের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজে কাপল ড্রেস ও পুরো পরিবারের জন্য পোশাকের কালেকশান রাখা হয়েছে। জেস টাওয়ারের মনিপুরি আড়ং, মুজিব সড়কের ফ্যাশন হাউজ চরকা ও ধারা’য় যশোরের স্থানীয় হাতের কাজের থ্রি পিস, টু পিস, ওয়ান পিস পাওয়া যাচ্ছে। মুজিব সড়কের ফ্যাশন হাউজ ধারা’য় পুরুষদের পাঞ্জাবীতে ৩০% থেকে ৫০% পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে।
যা বলছেন বিক্রেতারা:
এইচএমএম রোডের টম অ্যান্ড জেরির বিক্রয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ আযম বলেন, গত কোরবানির ঈদের চেয়ে এবারের ঈদে পোশাকের বিক্রি কম। জিরো থেকে দশ বছর বয়সী শিশুদের পোশাক যা একটু বিক্রি হচ্ছে।
এইচএমএম রোডের লেডিস টাচের সত্ত্বাধিকারী এমডি রায়হান বলেন, ‘দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এবার ক্রেতা কম পাচ্ছি। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, বাড়তি আমদানি খরচের কারণে ক্রেতাদের আগের দামে পোশাক দিতে পারছি না আমরা।’
ধারা’র সত্ত্বাধিকারী লিপিকা দাশ গুপ্তা বলেন, বড়দের চেয়ে এবারের ঈদে শিশুদের পোশাকের বিক্রি বেশি। শিশুদের জন্যই ক্রেতারা বেশি ভীড় করছেন।
সিটি প্লাজার অধরা’র সত্ত্বাধিকারী ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘বেচাকেনা আগের চেয়ে কমেছে। শাড়ি যা একটু বিক্রি হয় রোজার ঈদে, এই ঈদে চাহিদা কম তাই বিক্রিও কম।’

 

আরও খবর

🔝