gramerkagoj
শুক্রবার ● ২১ জুন ২০২৪ ৭ আষাঢ় ১৪৩১
gramerkagoj
পশুর সাথে সাথে অন্তরের পশুত্বকে কোরবানি করার তাগিদ ত্যাগের ঈদ কাল
প্রকাশ : রবিবার, ১৬ জুন , ২০২৪, ১২:০৫:০০ এ এম , আপডেট : শুক্রবার, ২১ জুন , ২০২৪, ১১:২৬:২৭ এ এম
এম. আইউব:
GK_2024-06-15_666db1a609db9.jpg

ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত ঈদুল আজহা কাল। এদিন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন। তবে, পশু কোরবানির পাশাপাশি মানুষের অন্তরের পশুত্বকে কোরবানির দিনও কাল। ঈদুল আজহা থেকে শিক্ষা নিয়ে সারাবছর ত্যাগের মানসিকতায় চলতে পারলে দূর হবে হানাহানি-রেশারেশি; প্রতিষ্ঠা হবে সম্প্রীতির মেলবন্ধন। ঈদ মোবারক।
সকালে কোনোকিছু না খেয়ে ঈদগাহে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ঈদুল আজহা উদযাপন। মহান সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহের আশায় ঈদের নামাজ শেষে সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দেবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। মূলত মনের পশুকে জবাই করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে যাওয়া-ই দিনটির উদ্দেশ্য।
বছর ঘুরে আবারও ত্যাগের মহিমা নিয়ে এসেছে ঈদুল আজহা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় এই উৎসবটি উদযাপন হবে আগামীকাল সোমবার। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপনে প্রস্তুত গোটা দেশ।
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে মানুষ ছুটছে নাড়িপোতা গ্রামের বাড়ির পথে। তবে,তীব্র গরম বাধ সাধছে ঈদ যাত্রায়।
প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে নিজ সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.) কে কোরবানি দিতে নিয়ে যান হজরত ইব্রাহিম (আ.)। তবে, আল্লাহর কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। এটির মধ্য দিয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) ত্যাগের যে মহিমা স্থাপন করেছেন, তা অনুসরণেই সারা বিশ্বে মুসলিম সম্প্রদায় হিজরিবর্ষের ১০ জিলহজ আল্লাহর অনুগ্রহ পেতে পশু কোরবানি করে থাকে।
সোমবার ঈদ উদযাপন হলেও পরের দু’দিনও পশু কোরবানির বিধান রয়েছে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, জবাই করা পশুর মাংসের একটি অংশ বিলি করা হয় দুস্থ ও দরিদ্রদের মধ্যে। এছাড়া, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থও গরিবের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
ঈদুল আজহা অর্থ ত্যাগের উৎসব। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয় এটি। এই উৎসবটি কোরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। এ দিনটিতে মুসলমানেরা ফজরের নামাজের পর ঈদগাহে গিয়ে দু’রাকাত ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করার পর স্ব স্ব আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী, গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও উট আল্লাহর নামে কোরবানি করে।
ইসলামী চান্দ্র পঞ্জিকায় ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হয় ১০ জিলহজ। আন্তর্জাতিক (গ্রেগরীয়) পঞ্জিকায় তারিখ প্রতি বছর ভিন্ন হয়, সাধারণত এক বছর থেকে আরেক বছর ১০ বা ১১ দিন করে কমতে থাকে। ঈদের তারিখ স্থানীয়ভাবে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে।
ঈদুল আজহায় যেসব আমল করা প্রয়োজন
ঈদুল আজহার দিনের প্রধান আমল হচ্ছে কোরবানি করা। কোরবানি ইসলামের অন্যতম নিদর্শন। শরিয়তে কোরবানির যে পন্থা ও পদ্ধতি নির্দেশিত হয়েছে, তার মূলসূত্র ‘মিল্লাতে ইবরাহিমি’তে বিদ্যমান ছিল। কোরআন মজিদ ও হাদিস থেকে তা স্পষ্ট জানা যায়। এজন্য কোরবানিকে ‘সুন্নাতে ইবরাহিমি’ নামে অভিহিত করা হয়।
ঈদ মুসলিম মিল্লাতের সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন। মনের সব কালিমা দূর করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, মান-অভিমান বিসর্জন দিয়ে একতা, সমদর্শিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের দিন। যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজের পবিত্রতা ঘোষণা করার পবিত্র উপলক্ষ।
ঈদুল আজহার দিন মহানবী (সা.) বিভিন্ন আমল করতেন। সেগুলো অনুসরণ করা আমাদের জন্য সুন্নাত। পাশাপাশি এসব আমল প্রত্যাশিত আনন্দঘন ঈদকে প্রাণময় করে তোলে। এসব আমলের মধ্যে রয়েছে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করা,
ঈদের নামাজের জন্য গোসল ও মিসওয়াক করা। সুন্দর ও উত্তম পোশাক পরিধান করা। মুসলমানদের প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর ও সাধ্যের ভেতর সবচেয়ে উত্তম পোশাক পরিধান করা। ঈদগাহে যাওয়ার আগে পানাহার না করা। ঈদুল আজহার দিন পানাহার ব্যতীত ঈদগাহে গমন করা ও নামাজের পর নিজের কোরবানির মাংস দিয়ে প্রথম খাবার গ্রহণ করা সুন্নত। ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির বলা। তাকবির পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলাকে বেশি বেশি স্মরণ করা সুন্নাত। পুরুষেরা এ তাকবির উঁচু আওয়াজে পাঠ করবে, মেয়েরা নীরবে। এ তাকবির জিলহজ মাসের ৯ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঠ করতে হবে। পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন। কোনো ধরনের অপারগতা না থাকলে, পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা সুন্নত। ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করা। ঈদগাহে যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে গমন করা, একইসাথে নামাজ শেষে অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা আল্লাহর রাসুল (সা.) এর সুন্নাত। ঈদগাহে যাওয়ার সময় শিশুদের সঙ্গে নেওয়া। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা।
ঈদের দিন একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নাত। ওই সময় ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিন কুম’ বলা সুন্নাতের অংশ। ঈদের খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা সুন্নাত এবং ঈদের নামাজের পর কোরবানি করা।
উল্লেখ্য, ঈদের নামাজের আগে-পরে ওই স্থানে যেকোনো ধরনের নফল নামাজ আদায় করা মাকরুহ। তবে, ঈদের নামাজের পর ঈদগাহ থেকে বাড়ি ফিরে দু’রাকাত নফল আদায় করা সুন্নাত।

 

আরও খবর

🔝