শিরোনাম |
❒ এমপি আনার হত্যাকাণ্ড:
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়া আরও অনেকেই ফেঁসে যাচ্ছেন। বেরিয়ে আসছে অনেকের নাম। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তাদের নজরদারিতে রেখেছে। এমপি আনারের বিরোধীপক্ষ হিসাবে পরিচিত এসব নেতা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনেরও ঘনিষ্ঠ। হত্যা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে খুনিদের টাকা দেওয়াসহ সব পর্যায়ে সম্পৃক্ততা আছে তাদের। আনার হত্যায় গ্রেফতার চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লার আদালতে দায় স্বীকার করে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে কয়েক নেতার নাম। ওইসব নেতা যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ৫ জুন দ্বিতীয় দফার রিমান্ড শেষে শিমুলের দেওয়া জবানবন্দির পর থেকেই পালটে যায় এমপি আনার হত্যার তদন্তের প্রেক্ষাপট। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু। তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গ্যাস বাবুকে আনারের ছবি পাঠান শিমুল ভূঁইয়া
কলকাতার ফ্ল্যাটে আনারকে খুনের পর এসব নেতাকে ফোন করেছিলেন এবং ছবি পাঠিয়েছিলেন খুলনার চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভুঁইয়া। কলকাতার ফ্ল্যাটে খুন করার পর এমপি আনারের মরদেহের ছবি তোলেন খুনিচক্র। সে ছবি কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছিলেন শিমুল ভূঁইয়া। ছবি পাওয়ার পর গ্যাস বাবু তখন শিমুল ভূঁইয়াকে ধন্যবাদ জানান। এরপর খুনের বিষয় নিয়ে গ্যাস বাবু দফায় দফায় আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে কথা বলেন।
এমপি আনার খুনের তিন মাস আগে থেকেই গ্যাস বাবু, শিমুল ভূঁইয়া ও মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন হোয়াটসঅ্যাপে পরিকল্পনা করে আসছিলেন। এ তিনজনের একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিংয়ের তথ্যও পেয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তদন্তকারীরা। এছাড়া শিমুল ভূঁইয়া আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতেও এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
গ্যাস বাবু মোবাইল ফোন ধ্বংস করে উল্টো হারানোর জিডি করেন
তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, গত শনিবার (৮ জুন) শিমুল ভূঁইয়ার সাভার এলাকার একটি ভাড়া বাসায় অভিযান চালানো হয়। ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে ডিবি। ফোনটিতে বাবুর সঙ্গে আনার হত্যা নিয়ে শিমুল ভূঁইয়ার কথোপকথনের অনেক তথ্য রয়েছে। কিন্তু বাবু তার তিনটি মোবাইল ফোন হারানো সংক্রান্ত থানায় যে জিডি করেছেন সেটি নিজেকে রক্ষা করার কৌশল ছিল বলে জানতে পেরেছে ডিবি। কারণ, ওই ফোনগুলো তিনি নিজেই ধ্বংস করেছেন। ফেঁসে যাওয়ার মতো তথ্য থাকায় তিনি সেগুলো ধ্বংস করে দেন।
আনারকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে আক্তারুজ্জামান শাহীন একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে পরামর্শ করেন। তাদের কেউ এতে সাহস দেন, আবার কেউবা ভয়ে শাহীনকে এড়িয়ে যান। আবার কেউ সরাসরি খুনে যুক্ত না হয়েও পেছন থেকে ইন্ধন দেন।- তদন্ত সংশ্লিষ্টদের তথ্য
তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এরই মধ্যে উদ্ধার হওয়া গ্যাস বাবুর তিনটি মোবাইল ফোনের কল ডিটেইলস বিশ্লেষণ করেছে।
আনার হত্যায় কেউ সাহস দেয়, কেউবা জোগায় ইন্ধন
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এমপি আনারকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে আক্তারুজ্জামান শাহীন একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে পরামর্শ করেন। তাদের কেউ এতে সাহস দেন, আবার কেউবা ভয়ে শাহীনকে এড়িয়ে যান। আবার কেউ সরাসরি খুনে যুক্ত না হয়েও পেছন থেকে ইন্ধন দেন। যাদের বেশিরভাগই আনারের মাধ্যমে আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
সন্দেহের তালিকায় জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা
জানা গেছে, কলকাতায় এমপি আনারকে খুনের পর সেখান থেকে হোয়াটসঅ্যাপে শিমুল ভূঁইয়া তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাকে বাহবা দেন। এ তালিকায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাও রয়েছেন বলে ডিবি সূত্র বলছে।
আনার হত্যায় গ্রেফতার হতে পারেন অনেকেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, খুনের ঘটনায় আরও অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন। তদন্ত শেষে তাদের গ্রেফতার করা হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা সত্যের কাছাকাছি এসে গেছি। মরদেহটি শনাক্ত হলেই অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারবো।
জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে যারা যেভাবে জড়িত তাদের সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, ঝিনাইদহ থেকে আমরা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে গ্রেফতার করেছি। তিনি রিমান্ডে আছেন। তার কাছ থেকে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি, সেগুলো তদন্ত করে যাচাই-বাছাই চলছে।
সম্প্রতি চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপকভাবে আলোড়ন তোলে। এ খুনের ঘটনায় শুরু থেকেই মরদেহ উদ্ধার নিয়ে বিশেষ তৎপরতা দেখা যায়। এ নিয়ে কলকাতা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা যৌথভাবে সরেজমিনে দফায় দফায় অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে চলে আনারের দেহাংশের খোঁজ।