gramerkagoj
রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒ ১১ জৈষ্ঠ নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে

মতামত
নজরুল ইসলাম দ্রোহ ও প্রেমের দ্বৈত সত্তা
প্রকাশ : শনিবার, ২৫ মে , ২০২৪, ০৮:৫৬:০০ পিএম , আপডেট : শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর , ২০২৪, ০৩:০৬:২৯ পিএম
মানিক দত্ত:
GK_2024-05-25_6651fca92b6f6.jfif
নজরুল-গবেষক ড. করুণাময় গোস্বামী যথার্থই বলেছেন- ‘নজরুল ছিলেন প্রবল ভাবে যৌবনের কবি। যৌবনধর্মের একদিকে বিদ্রোহ, অপরদিকে প্রেম। দেশাত্মবোধক গানে প্রকাশিত হয়েছে নজরুলের বিদ্রোহ, গজলে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রেমবোধ।’ মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ-তুর্য্য।’ প্রেম ও দ্রোহের দ্বৈত সত্তায় নজরুল নিজেকে গড়েছিলেন। 
ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে এক প্রবলপ্রান বিদ্রোহীর নাম কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুলের দ্রোহচেতনা সঞ্চারিত হলো ঘুমন্ত এক জাতির মর্মমূলে। কবিতাও যে হতে পারে জাগরণের শক্তি উৎস, কবির কবিতা পাঠেই তা বিশেষভাবে জানলো বাঙালি জাতি। পরাধীনতার গ্লানিতে নজরুল চিত্ত দীর্ণ হয়েছে এবং এই গ্লানি থেকে মুক্তির অভিলাষে তিনি হয়েছেন বিদ্রোহী। ব্রিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনে তাঁর লেখনী ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে জাগিয়ে তুলেছিল ভারতবাসীকে। তিনি পরিণত হন বিদ্রোহী কবিতে। 
নজরুলের সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় কবিতা ‘বিদ্রোহী’ ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে রচিত। এই কবিতায় বিদ্রোহের রূপকে বার বার প্রবলভাবে উচ্চারিত আর শেষে পৃথিবী থেকে উৎপীড়ন ও অত্যাচার দূরীকরণের সংকল্প ঘোষিত হয়েছে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবির আত্ম-জাগরনের বিপুল ও বিচিত্র প্রকাশ লক্ষ করা যায়, কবির ব্যক্তিত্বের প্রবল স্ফুরণ ঘটেছে এই কবিতায়। এই কবিতার পঞ্চম স্তবকটি গীতি কবিতার রসে পরিপূর্ণ। অগ্নি বীণার ‘বিদ্রোহী’র ভেতরই তো নিহিত আছে নজরুলের প্রেম- অনুভবের উৎস মুখ। প্রসঙ্গত সেইসব স্মরণীয় পঙক্তি-‘আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!/ আমি অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যাথা সুনিবিড়,/ আমি গোপন প্রিয়ার চকতি চাহনি, ছল ক’রে দেখা অনুখন,/ আমি চপল মেয়ের ভালবাসা, তার কাঁকন-চুড়ির কন-কন।’- উপস্থাপন করা যায়। লক্ষণীয়, এখানে যে-সব পঙক্তি উদ্বৃত হয়েছে, বিদ্রোহী সত্তার বিপরীত মুখ বৈশিষ্টের স্মারক হিসাবেই এদের প্রাসঙ্গিকতা।  
‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে নজরুল রচনা করেন ব্রিটিশরাজের কারাগার ভেঙে বেরিয়ে আসার ঐতিহাসিক সেই দৃপ্ত আহ্বান মন্ত্রঃ ‘কারার ঐ লৌহ কপাট/ ভেঙে ফেল, কররে লোপাট’/ গানটি। এই লৌহকপাট ভাঙার গান থেকে তাঁর সংগ্রামী সঙ্গীতকার রূপে তাৎক্ষনিক প্রতিষ্ঠা। 
তাঁর লেখা দেশাত্মবোধক গান- ‘বল নাহি ভয় নাহি ভয়,’ ‘এই শিকলপরা ছল মোদের এ শিকলপরা ছল’. মোরা ঝঞ্চার মত উদ্দাম’, ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’, ‘চল চল চল’, ‘জাগো অনশন বন্দী ওঠো রে যত,’ ‘বাজিছে দামামা, বাঁধরে আমামা,’ গানগুলি ভাবের ওজস্বিতায় এবং সুরের তেজস্বিতায় অসাধারণ। তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম কবি যিনি এত বলিষ্ঠ কন্ঠে সংগ্রাম, বিদ্রোহ ও বিপ্লবের ডাক দিয়েছেন। তাই লোকের মুখে-মুখেই তাঁর নাম হয়ে উঠেছিল বিদ্রোহী কবি।
চলমান পাতা-২
(পাতা-২)
অগ্নিবীণার উত্তরপর্বে কবির অভ্রভেদী দ্রোহ পুনরুচ্চারিত হলেও, শেষ অবধি ওই দ্রোহিতা যে প্রেমময় মানবমুখীনতায় রূপান্তরিত হয়েছে তাঁর কবিতাই এর সাক্ষ্যবহ। অগ্নি-বীণার পর নানা বিরতিতে বিষের বাঁশী, ভাঙ্গার গান, সাম্যবাদী, সর্বহারা, ফণি-মনসা, জিঞ্জির ইত্যাদি গ্রন্থে নজরুলের মানবতা বাদী ও দ্রোহী কবিকন্ঠ শোনা গেলেও, দোলন চাঁপা, পূর্বের হাওয়া, সিন্ধু হিন্দোল এবং চক্রবাক নিয়ে গড়ে ওঠা এ কাব্য স্রোত প্রকৃতির আশ্রয় ও পরিচর্যায় কবির বিরহতাপিত প্রেমের বাণীকন্ঠ হয়ে উঠেছে। বুলবুল, চোখের চাতক গীতিসম্ভার হলেও এদের প্রধান উপজীব্য-প্রেম। ছায়ানটের শেষ কবিতা ‘রৌদ্র-দগ্ধের গান’ বিশেষ কারণে গুরুত্বপুর্ণ। প্রেমবিরহের রৌদ্রদহনে দগ্ধ প্রেমিকের কবি আত্মা এবার তিমির প্রত্যাশী। সিন্ধু-হিন্দোল কাব্যের ‘অ-নামিকা’ কবিতায় কবি জানিয়েছেন যে, ‘প্রেম এক, প্রেমিকা সে বহু,/বহু পাত্রে ঢেলে পি’ব সেই প্রেম-/ সে শরাব লোহু।/ তোমারে করিব পান, অ-নামিকা, শত কামনায়’, চক্রবাক কাব্যের ‘তুমি মোরে ভুলিয়াছ’ কবিতায় বেদনামাখা প্রত্যয়ে শিল্পিত হয়েছে ‘তুমি মোরে ভুলিয়াছ, তাই সত্য হোক!/ নিশি -শেষে নিভে গেছে দীপালি আলোক!/....সত্য হোক প্রিয়া/ দীপালি জ্বলিয়াছিল গিয়াছে নিভিয়া।’ এখানে নজরুলের শিল্পিসত্তার আরেক রূপ প্রেমিক পুরুষ। 
১৯২০ থেকে ১৯২৬ এই সাত বছর আমরা সঙ্গীতকার নজরুলকে পেয়েছি দেশপ্রেমের সংগ্রামের পতাকাবাহী পরাক্রান্ত অগ্রনায়কের মহান ও ঐতিহাসিক ভূমিকায়। কিন্তু কবির সংসারে শিশু বুলবুলের আবির্ভাব কাল থেকেই নজরুল সঙ্গীতের পালাবদল ঘটল। সংগ্রামের বীররসের পরিবর্তে শুরু হলো প্রেমের মধুর রসের সাধনা ও পরিবেশনা। আর তখন থেকেই তাঁর শিল্পী জীবনের মধুরতম সৃষ্টি গজল রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। নজরুলের সেই ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিস নে আজি দোল’- সবার পরিচিত অপূর্ব গজল, ‘গুল বাগিচার বুলবুলি আমি, রঙীন প্রেমের গাই গজল’ যেমন প্রথম শ্রেণীভূক্ত গজলের নমুনা, তেমনি আবার ‘বসিয়া বিজনে কেন একা মনে পানিয়া ভরণে চল লো গোরী’ গান জীবন, প্রেম ও প্রকৃতির অনুষঙ্গে রচিত। বিশের দশকে বাংলার আকাশ বাতাস নজরুলের অজস্র গজলের মন-মাতানো সুরে আলোড়িত হত।
দেশাত্মবোধক গানে নজরুলের যে রুপটি প্রকাশিত তা অনিবার্য ভাবেই বিদ্রোহীর, আর তাঁর গজলের হৃদয়সরসীনীড়ে যে রুপটি বিম্বিত তা প্রেম ও প্রকৃতির রোমান্টিক কবির। 
 
তথ্যসূত্র : সনজীদা খাতুন সম্পাদিত, বিস্ময় আমি বিশ্ব বিধাত্রীর, ২০১৩, ঢাকা। 
লেখক : সহকারী অধ্যাপক (অবঃ)
শহীদ মশিয়ূর রহমান কলেজ, যশোর।

 

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝