gramerkagoj
সোমবার ● ২০ মে ২০২৪ ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ ব্যবহার করছেন আইইএলটিএস সেন্টার ও বিসিএস কনফিডেন্সের সাইনবোর্ড

বিদেশে চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন নুরুজ্জামান
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ৭ মে , ২০২৪, ১০:৫৮:০০ পিএম , আপডেট : সোমবার, ২০ মে , ২০২৪, ১২:৩১:১১ এ এম
শিমুল ভূইয়া:
GK_2024-05-07_663a53e274096.webp

ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে মোটা বেতনে চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ওয়ারিশা এডুকেশনের এস কে নুরুজ্জামান। তিনি এ কাজের জন্য যশোর শহরের মুজিব সড়কের খান কমপ্লেক্সের ছয়তলায় খুলে বসেছেন ওয়ারিশা এডুকেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। স্টুডেন্ট ভিসার অনুমোদন নিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার কাজ করছেন। চাকরি প্রত্যাশীদের সাথে একের পর এক জাল ভিসা দিয়ে প্রতারণা করছেন। যা গ্রামের কাগজের কয়েকদিনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। আর এ কাজের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন একই ভবনের আইইলটিএস সেন্টার ও বিসিএস কনফিডেন্সের যশোরের কার্যালয়কে। এক ব্যানারে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম জড়িয়ে বিদেশে চাকরি দেয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
ভুক্তভোগীদের একজন যশোর শহরের বিমানবন্দর সড়কের নাবেদ হোসেন চান্দু। তিনি জানান, ২০২১ সালের জুলাই মাসে যশোরের একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে তিনি ওয়ারিশা এডুকেশনে যান। সেখানে গিয়ে রোমানিয়ায় পাঠানোর জন্য সাত লাখ টাকায় চুক্তি করেন। তিন মাসের মধ্যে তাকে রোমানিয়ায় পাঠানোর কথা ছিল। এজন্য তার কাছ থেকে দু’লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন নুরুজ্জামান। এরপর তাকে ভিসার কাগজপত্র দেয়া হয়। পরে জানতে পারেন ভিসাটি জাল। এরপর তাকে কসোভো পাঠানোর কথা বলেন নুরুজ্জামান। ফের তাকে জাল ভিসা দেন তিনি। এক বছর পর সার্ভিয়ার একটি জাল ভিসা দেন নুরুজ্জামান। একপর্যায়ে চান্দু টাকা ফেরত চাইলে ঘোরাতে থাকেন তিনি। গত ১৯ মার্চ চান্দু টাকা ফেরত চাইলে তাকে খুন করার হুমকি দেন। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও ফল পাননি চান্দু। পাল্টা হয়রানির শিকার হন তিনি।
মণিরামপুর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের রাসেল হোসেন জানান, তিনি সাড়ে তিন বছর আগে দেড় লাখ টাকা জমা দেন। এরপর তাকেও একইভাবে তিন দেশের জাল ভিসা দেন নুরুজ্জামান। এছাড়া তার জামাইয়ের জন্যও দু’লাখ টাকা দেয়া রয়েছে। এরমধ্যে ২০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন তিনি। বাকি টাকা না দিয়ে ঘোরাচ্ছেন। বর্তমানে পাসপোর্ট আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
ঝিকরগাছার বায়সা গ্রামের আশরাফুল ইসলাম নাহিদ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এই নুরুজ্জামানের কার্যকলাপে। দু’বছর ধরে তাকে ঘোরাচ্ছে নুরুজ্জামান। প্রথমে তাকে রোমানিয়ায় যাওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন। পরে কসোভোর ভিসা দেন। কিন্তু সবই জাল। আজ পর্যন্ত একটি টাকাও ফেরত দেননি নুরুজ্জামান। আশরাফুলের প্রায় দেড়লাখ টাকা ফেরত পেতে তিনিও আইনি আশ্রয় নেবেন বলে জানান।
গ্রামের কাগজের কাছে এছাড়াও আরও ১০-১৫ জন ভুক্তভোগীর তালিকা রয়েছে, যারা প্রত্যেকেই প্রতারিত হয়েছে নুরুজ্জামানের দ্বারা। তারা সকলেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য তার কাছে টাকা ও পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখন নুরুজ্জামান টাকা ফেরত দেয়াতো দূরের কথা পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ফেরত না দিয়ে তালবাহানা করছেন। দিচ্ছেন নানা ধরনের হুমকি ধামকি।
এসব বিষয়ে সোমবার দুপুরে গ্রামের কাগজ টিম যায় নুরুজ্জামানের অফিসে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় চাকচিক্য অফিসে এসির মধ্যে বসে চার-পাঁচ তরুণ-তরুণী আগত চাকরি প্রত্যাশীদের বিদেশে চাকরির নানা প্রলোভন দিচ্ছেন। এছাড়াও কেউ কেউ আসেন টাকা ফেরত নিতে। ওই অফিসের আরেক পাশে রয়েছে বিসিএসের ক্লাস করার ব্যবস্থা।
এদিকে, নুরুজ্জামান সাংবাদিক আসার খবরে সটকে পড়েন। পরেরদিন মঙ্গলবার গ্রামেরকাগজ টিম ফের তার অফিসে যায়। সাংবাদিক দেখেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন তিনি। ওইসময় তিনি সাংবাদিকদের সাথে অসদাচরণ করেন। সাংবাদিকের কাছ থেকে তিনি বুম কেড়ে নেন। তিনি পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকিও দেন এই প্রতারক। শেষমেষ কথা বলতে বাধ্য হন তিনি। বলেন, চান্দু তার কাছে চাঁদা চেয়েছিল। চাঁদা না দেয়ায় এসব অভিযোগ করছেন। এছাড়া, অন্যদের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার বিদেশে স্টুডেন্ট ভিসায় লোক পাঠানোর সরকারি অনুমোদন থাকলেও ওয়ার্ক পারমিটে লোক পাঠানোর অনুমোদন নেই বলে স্বীকার করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সংসদ নির্বাচনে যশোর-৩ (সদর) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন এই নুরুজ্জামান। এরপর থেকেই বড় মাপের রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে জাহির করে এ ধরনের প্রতারণা করে বেড়াচ্ছেন তিনি।
শুধু নুরুজ্জামান না, যশোর শহরের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে অনেকেই। যারা তরুণ-যুবকের ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমতো খেলা করছে। তাদের জন্য অসংখ্য যুবক-যুবতি নিঃস্ব হয়ে পথে পথে ঘুরছে। একসময় তাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে, লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে অসাধু চক্রের সদস্যরা আরাম আয়েসে দিন কাটাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযানে নামার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

আরও খবর

🔝