gramerkagoj
রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
ইসলামে শ্রমিকের প্রতি আচরণ ও অধিকার

❒ ইসলাম,শ্রমিক,প্রতি,অধিকার

প্রকাশ : বুধবার, ১ মে , ২০২৪, ১১:৪৭:০০ এএম , আপডেট : শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর , ২০২৪, ০৩:০৬:২৯ পিএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2024-05-01_6631d1ad42e43.jpg

আজ পহেলা মে। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে আসছে এ দিনটি। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন শ্রমিকরা। তাদের রক্তাক্ত স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৮৯০ সাল থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। মে দিবস সারা দুনিয়ায় সাড়ম্বরে পালিত হলেও শ্রমিকদের হতাশা এখনও যায়নি। এখনও শ্রমিক নিপীড়ন থামেনি এবং শ্রমিকের প্রকৃত মর্যাদা ও শ্রমের মূল্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর কোনো দেশেই শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি এবং তাদের বাঁচার উন্নত পরিবেশ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
ইসলাম এমন একটি সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার শিক্ষা দেয় যেখানে মালিক-শ্রমিকের সম্পর্ক থাকে আন্তরিকতাপূর্ণ। শ্রমিক-মালিকের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে এমনই একটি শান্তিময় পরিবেশ গড়ে ওঠে যেখানে একে অপর যেন ভাই ভাই রূপ ধারণ করে।
জুলুমের বিরুদ্ধে শোষিত ও মজলুম মানুষের পক্ষে ইসলামের অবস্থান অত্যন্ত বলিষ্ঠ। কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে মজুরি পরিশোধ না করা জুলুম। কেউ এ ধরনের জুলুম করলে মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, তাকে মজুরি পরিশোধ করতে বাধ্য করা।
যদি দুনিয়াতে কোনো কারণে সে পার পেয়েও যায়, পরকালীন কঠিন শাস্তি থেকে সে রেহাই পাবে না। হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন কেয়ামতের দিন এ ধরনের জালিমদের বিরুদ্ধে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা স্বয়ং বাদী হবেন।
কোরআন-হাদিসে শ্রমিক দিবস বলে কিছু না থাকলেও শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলেছে ইসলাম। রাসুলুল্লাহ (স.) শ্রমিক নির্যাতন থামিয়ে দিয়েছেন কঠোর হস্তে। বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণেও বাদ পড়েনি শ্রমিক। এমনকি মৃত্যু শয্যায়ও তিনি ভেবেছেন শ্রমিকদের নিয়ে। উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) মৃত্যুশয্যায় যে অসিয়ত করে যান তা ছিল—‘সাবধান থাকবে নামাজ ও তোমাদের অধীনস্থদের বিষয়ে।’ (ইবনে মাজাহ: ১/৫১৯)
ইসলামে শ্রমিকের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব মালিকের। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, অধীনস্থের জন্যে খাওয়া-দাওয়া ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করা মনিবের দায়িত্ব। তার সাধ্যের বাইরে কোনো কাজের জন্য তাকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। (সহিহ মুসলিম: ১৬৬২, ইফা: ৪১৭০)
শ্রমিক ঠকানো ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্যতম পাপ। ইসলামের নির্দেশনা হলো—শ্রমিক তার প্রাপ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হলেও মালিক তাকে প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবে। যেমন—শোআইব (আ.) মুসা (আ.)-কে ডেকে এনে পারিশ্রমিক দিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তখন নারীদ্বয়ের একজন সলজ্জ পায়ে তার কাছে এলো এবং বলল, আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করেছেন আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করানোর বিনিময় প্রদানের জন্য।’ (সুরা কাসাস: ২৫)
অথচ বর্তমানে অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে হয়। মহানবী (স.) এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যে জাতির দুর্বল লোকেরা জোরজবরদস্তি ছাড়া তাদের পাওনা আদায় করতে পারে না, সেই জাতি কখনো পবিত্র হতে পারে না।’ (ইবনে মাজাহ: ২৪২৬)
বেতন ও পারিশ্রমিক কর্মজীবীর এমন অধিকার, যা দ্রুততম সময়ে আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৪৪৩০)
ঠুনকো অজুহাতে বেতন-ভাতা ও প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা আরো ভয়ঙ্কর অপরাধ। মহানবী (স.) বলেন, আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিপক্ষে থাকব। এক ব্যক্তি, যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করল। আরেক ব্যক্তি, যে কোনো আজাদ মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল। আর একজন সে, যে কাউকে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার পর কাজ বুঝে নিয়েছে অথচ তার প্রাপ্য দেয়নি।’ (সহিহ বুখারি: ২২২৭)
অন্য হাদিসে পারিশ্রমিক ও প্রাপ্য অধিকার নিয়ে টালবাহানাকে জুলুম আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহানবী (স.) বলেছেন, ধনী ব্যক্তির টালবাহানা অবিচার। (সহিহ বুখারি: ২২৮৭); অর্থাৎ সামর্থ্য থাকার পরও মানুষের প্রাপ্য ও অধিকার প্রদানে টালবাহানা করা মহাপাপ।
ইসলাম সাধারণভাবেই অভাবগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। আর অসহায় ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি যদি হয় নিজের শ্রমিক—তবে এই দায়িত্ব বেড়ে যায় বহুগুণ। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) মালিকপক্ষকে শ্রমিকের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সে যা খায়, তা থেকে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা থেকে যেন পরিধান করায়।’ (সহিহ বুখারি: ২৫৪৫)
শ্রমিককে ভাই আখ্যা দিয়ে তিনি ইরশাদ করেন, ‘তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার ভাইকে তার অধীন করেছেন সে যেন তাকে তাই খাওয়ায় যা সে খায়, সে কাপড় পরিধান করায়, যা সে পরিধান করে। তাকে সামর্থ্যরে অধিক কোনো কাজের দায়িত্ব দেবে না। যদি এমনটা করতেই হয়, তাহলে সে যেন তাকে সাহায্য করে।’ (সহিহ বুখারি: ৫৬১৭)
আল্লাহ তাআলা সকল মালিককে শ্রমিকের অধিকার বিষয়ে সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝