শিরোনাম |
গরম থেকে বাঁচতে অনেকেই লেবু মিশ্রিত পানি পান করে থাকেন। আবার অনেকে ওজন কমাতে রোজ লেবু মেশানো পানি খেয়ে থাকেন। বিশ্বাস একটাই যে, এই লেবু মেশানো পানি খেলে পেটের চর্বি তথা ভুঁড়ি কমায়। তাতে অবশ্য উপকারও মেলে অনেকের। তবে অনেকেই জানেন না যে এই লেবুর অনেক উপকারিতার পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।
লেবু এমনিতে শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। লেবুর গুণে দূর হয় অনেক রোগ-বালাই। কিন্তু রোজ রোজ লেবু খাওয়ার এই অভ্যাসে হতে পারে কিছু সমস্যা-
দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়
অতিরিক্ত লেবু খেলে এর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড থেকে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। দাঁতের ওপর সাদা স্তর পড়ে যায়। সম্প্রতি ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডেন্টাল অ্যান্ড ক্র্যানিওফেসিয়াল রিসার্চের একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে সফট ড্রিংক খেলে দাঁতের যে সমস্যা হয়, লেবু থেকেও ঠিক একই সমস্যা হয়। এ ছাড়াও যারা প্রতিদিন সকালে উঠে লেবু পানি খান, তারা যদি দিনে অন্তত দুবার ব্রাশ করেন তাহলে দাঁতের সমস্যা অনেক কম হয়।
মুখমণ্ডলের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়
দীর্ঘদিন ধরে লেবু খেলে মুখের মধ্যে থাকা নরম কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে মুখের মধ্যে ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাইট্রিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ যে কোনও ফল খেলেই এই সমস্যা হতে পারে।
অ্যাসিড এবং বমির আশঙ্কা থাকে
ভিটামিন সি শরীরের জন্য প্রয়োজন, কিন্তু অতিরিক্তও ভালো নয়। অতিরিক্ত লেবু বা লেবুর রস খেলে সেখান থেকে অ্যাসিড তো হবেই, সেই সঙ্গে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। শুধুমাত্র লেবু পানি নয়, যে কোনও ডিটক্স ডায়েট ড্রিংক থেকেই এ সমস্যা হতে পারে। অ্যাসিডিটির আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
হজমের সমস্যা
লেবুর পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে তা হজমে সাহায্য করে। তবে কেউ কেউ এ পানীয় খাওয়ার পর সারা দিন পেট ব্যথা এবং বুক জ্বালার অভিযোগ করেন। এর কারণ হলো হজমের গতি ধীর থাকা। এ বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, লেবুতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকায় আলসারের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মাইগ্রেনের সমস্যা
বিশেষজ্ঞদের মতে, লেবু বা অন্যান্য সাইট্রাস জাতীয় ফল কোনও ব্যক্তির মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। সাইট্রাস ফলগুলিতে থাকা টাইরামাইন নামক একটি বিশেষ উপাদানের জন্যই এমনটা হয়।
পানিশূন্যতার কারণ হতে পারে
লেবুর পানি একটি দারুণ ডিটক্স পানীয়। যা পান করার পর শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের হয়ে যায়। এই টক্সিনগুলো সাধারণত প্রস্রাবের সাহায্যে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এমন অবস্থায় পানি কম পান করলে ঘন ঘন প্রস্রাব থেকে ইলেক্ট্রোলাইট বের হতে থাকে। যার কারণে ক্লান্তি, শুষ্ক ঠোঁট, অতিরিক্ত তৃষ্ণা এবং পানি শূন্যতার অভিযোগ করেন অনেকেই।
রক্তে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যায়
ভিটামিন সি রক্তে আয়রনকে সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। এবার লেবু পানি অতিরিক্ত পান করলে শরীরে ভিটামিন সি-র পরিমাণ বেড়ে যায়। যা রক্তে অধিক পরিমাণ আয়রন সংরক্ষণ করে। যা ক্ষতিকর।
উৎসেচক ভেঙে যায়
খালি পেটে লেবু খেলে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক পেপসিন ভেঙে যায়। পেপসিন আমাদের হজমে সাহায্য করে। মূলত প্রোটিন হজম করায়। এদিকে লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড পেপসিনকে ভেঙে ক্ষতিকর এনজাইম তৈরি করে। ফলে খাবার ঠিকমতো হজম হয় না। এমনকি পেপটিক আলসারের আশঙ্কা থাকে।
সানবার্ন
লেবুতে অনেকের অ্যালার্জি আছে। অনেকেই কিন্তু তা বুঝতে পারেন না। পরে লেবু খেয়ে রোদে বের হলে স্কিনে লাল র্যাশ দেখা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কালো ছোপও দেখা দেয়। যাকে আমরা সানবার্ন বলে ভুল করি। ডাক্তারি পরিভাষায় একে সাইটোফোটোডার্মাটাইটিস বলা হয়। লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে সূর্যালোকের বিক্রিয়ায় এই সমস্যা দেখা যায়। এ ছাড়াও অতিরিক্ত লেবুর রস স্কিন ক্যানসার ডেকে আনে।
চুলের ক্ষতি
বেশি সময় ধরে লেবুর পানি পান করলে চুলের ক্ষতি হতে শুরু করে। চুলের ফলিকল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চুল ভঙ্গুর হয়ে যায়। তাই লেবু পানি উপকার করলেও স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝে তা পরিমিত পান করা উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিদিন ১২০ মিলিলিটার লেবুর রস খাওয়া যাবে। চিকিৎসকরা ১২০ মিলি লিটারের বেশি খাওয়া সমর্থন করেন না।