gramerkagoj
সোমবার ● ১৩ মে ২০২৪ ৩০ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ তাপদাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে উপস্থিতি কম

পাঁচ জেলার স্কুল-কলেজ বন্ধ
প্রকাশ : রবিবার, ২৮ এপ্রিল , ২০২৪, ১০:২৭:০০ পিএম , আপডেট : রবিবার, ১২ মে , ২০২৪, ০৩:৪৬:৫৮ পিএম
এম. আইউব:
GK_2024-04-28_662e8085650e2.jpg

টানা তাপদাহের কারণে আজ যশোর ও চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের ৫ জেলায় উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখা না রাখার বিষয়ে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার আগেই ছুটি বেড়ে যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কিন্তু তাপদাহ না কমলেও খুলে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রোববার ছিল দীর্ঘ ছুটির পর প্রচন্ড গরমের মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রমের প্রথম দিন। এ কারণে অধিকাংশ অভিভাবক ছিলেন উদ্বিগ্ন। প্রথম দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি, শিক্ষার্থীদের অবস্থা, অভিভাবকদের শঙ্কার উপর নজর ছিল গ্রামের কাগজের। যশোরের একাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘুরে নানা চিত্র চোখে পড়ে।
দীর্ঘ ছুটির পর প্রথম দিনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভিন্ন রুটিনে ক্লাস হয়েছে। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাড়ে সাতটা থেকে ১১ টা ১০ এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আটটা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত স্কুল চলে। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডে শিফট শুরু হয় বেলা ১২ টায়। ছুটি হয় বিকেল পাঁচটায়।
সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডে শিফটে শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল ৭০ শতাংশের মতো। আর মর্নিং শিফটে ছিল ৮০ শতাংশ। উপস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘গরমের কারণে কোনো অসুবিধা হয়নি। আমাদের স্কুলে পর্যাপ্ত ফ্যান রয়েছে। ফলে. মেয়েরা স্বচ্ছন্দে ক্লাস করতে পারে।’
সন্তোষজনক উপস্থিতির কথা জানান যশোর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন উপস্থিতি ছিল ৯০ শতাংশ। কোনো অসুবিধা হয়নি। দীর্ঘ ছুটির কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসার জন্য ব্যস্ত রয়েছে। এ কারণে উপস্থিতি দিন দিন আরও ভালো হবে।’
তবে, ভিন্ন অবস্থা ছিল বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। যশোরের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো টিনশেড। ভবন নির্মাণসহ নানা করণে ওইসব স্কুলে টিনশেড ঘরে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। তেমনই একটি স্কুল শহরের পুরাতন কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলে ভবন নির্মাণের কারণে টিনশেডে ক্লাস চলছে। এই গরমের মধ্যে টিনশেডে ঠেকা দায় হয়ে পড়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, ‘টিনশেডে যতই ফ্যান চলুক তার বাতাস গায়ে লাগছে না। প্রচন্ড গরম অনুভূত হচ্ছে।’ এই স্কুলে প্রথম শিফটে অর্ধেকের মতো শিক্ষার্থী আসলেও দ্বিতীয় শিফটে উপস্থিতি ছিল তিন ভাগের এক ভাগ। এই স্কুলের নতুন প্রধান শিক্ষিকা ফেরদৌসী পারভীন বলেন,‘টিনশেডের কারণে প্রচন্ড গরম। মনে হচ্ছে আগুন ঝরে পড়ছে। ফ্যানে কোনো কাজ হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের কষ্ট দেখে নিজেরই কষ্ট লাগছিল।’ বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাদের বলেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘স্যারদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো। শিশুদের কীভাবে গরম থেকে রক্ষা করা যায় সেই চেষ্টা করবো।’
তবে, গ্রামের স্কুলগুলোতে গরম নিয়ে তেমন কোনো ভাবনা ছিল না অভিভাবকদের মধ্যে। ভাবলেশহীন ছিলেন শিক্ষকরাও। প্রথম দিনের অবস্থা নিয়ে খোঁজ নেওয়া হয় সদর উপজেলার নাটুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এনামুল ইসলাম বলেন,‘উপস্থিতি সন্তোষজনক ছিল। কোনো অসুবিধা হয়নি।’ একই কথা বলেন প্রধান শিক্ষিকা রাহেনূর খাতুন। তিনি বলেন, ‘উপস্থিতি ভালো। স্কুলের চারপাশে গাছপালা থাকাতে ছায়া রয়েছে। এ কারণে তুলনামূলক গরম কম অনুভূত হচ্ছে। শ্রেণি কার্যক্রমে কোনো অসুবিধা হয়নি।’
সদর উপজেলার ভেকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এসএম আরিফুজ্জামান বলেন,‘মর্নিং স্কুল হওয়ায় শিক্ষক এবং অভিভাবকরা খুশি। তবে, তারা স্কুলের সময় আরও এগিয়ে আনার পক্ষে। শিক্ষকরা বলছেন,‘সকাল সকাল শুরু হয়ে দশটা সাড়ে দশটার মধ্যে ছুটি হয়ে গেলে শিশু শিক্ষার্থীদের আর কষ্ট হবে না। তারা ছায়ার মধ্যে স্কুলে যাতায়াত করতে পারবে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, ‘প্রথম দিন স্কুল ভালোভাবে চলেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের সাথে কথা হয়েছে। তারা কেউ কোনো অসুবিধার কথা বলেনি।’
জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন বলেন,‘কোনো ধরনের অসুবিধার খবর আসেনি।’
এদিকে. ৪২ ডিগ্রির উপর তাপমাত্রা থাকায় আজ সোমবার দেশের পাঁচ জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রোববার রাতে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরমধ্যে খুলনা বিভাগের দু’টি জেলা রয়েছে। জেলা দু’টি হচ্ছে, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা। যদিও যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন রোববার রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত অফিসিয়ালি কোনো পত্র পাননি বলে গ্রামের কাগজকে জানান। তিনি বলেন, পত্র পাওয়ার সাথে সাথে জেলা সব প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ছুটির বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে, মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে, অতি তীব্র তাপদাহের কারণে সোমবার ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে চলমান তাপদাহের কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সোমবার বন্ধ থাকবে। তবে, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ চাইলে খোলা রাখতে পারবে।
আজ পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে,রোববার খুলে দেওয়ার দিনই বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আরও খবর

🔝