gramerkagoj
শুক্রবার ● ১০ মে ২০২৪ ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

রাজনীতিতে কামব্যাক করার সুযোগ নিতে চায় রায় পরিবার!
প্রকাশ : শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪, ০৯:৫১:০০ পিএম , আপডেট : শুক্রবার, ১০ মে , ২০২৪, ১০:৩৪:০১ এ এম
চন্দন দাস, বাঘারপাড়া (যশোর):
GK_2024-04-27_662d1f5a8a4df.jpg

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে আগামী ২৯ মে এ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে উপজেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নির্বাচনী উত্তাপ। সমর্থন চেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ করছেন হাটবাজারসহ পাড়া মহল্লায়।
আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি এখন উন্মুক্ত। এতে প্রার্থীর সংখ্যাও যেমন বাড়ছে, তেমনি বিভক্তিও দেখা দিয়েছে সংগঠনে। যে কারণে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা এখন পর্যন্ত সরাসরি কারও পক্ষে মাঠে নামেননি।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের কমপক্ষে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে বাঘারপাড়ার রাজনীতিতে কামব্যাক করার সুযোগ খুঁজছে যশোর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রণজিৎ রায় পরিবার। তার বড় ছেলে বাঘারপাড়া উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাজিব রায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য ও বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রণজিৎ কুমার রায় দলীয় মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। একইসাথে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এনামুল হক বাবুলের বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপির অভিযোগ এনে আপিল করেছিলেন তিনি (রণজিৎ কুমার রায়)। যদিও আদালতের কয়েক দফা শুনানির পর নৌকা প্রতীক বহালের রায়ের পর নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রণজিৎ রায়। সংসদ নির্বাচনের পর অনেকটা কোণঠাঁসা হয়ে পড়েন রনজিত রায় সমর্থিত নেতাকর্মীরা। যে কারণে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতেই রাজীব রায় এই নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এদিকে, রাজীব রায় ছাড়াও এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যারা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বিপুল ফরাজী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রউফ মোল্লা এবং বন্দবিলা ইউনিয়নের মরহুম আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ ডাক্তারের ছেলে মাসুম রেজা খান। এছাড়া, জহুরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দিলু পাটোয়ারী ও জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা বাদশা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ইতিপূর্বে প্রচারণা চালিয়েছেন। এই দুজনের তৎপরতা এখন নেই বললেই চলে।
এ উপজেলায় বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির কাউকে এখন পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যায়নি।
উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাজীব রায় সাবেক সংসদ সদস্য রণজিৎ রায়ের ছেলে হওয়ার সুবাদে তার একটা অবস্থান রয়েছে উপজেলাজুড়ে। বিশেষ একটি গোষ্ঠীর ভোটারকে পুঁজি করে ভোটযুদ্ধে নামার সাহস দেখিয়েছেন তিনি। এখন পর্যন্ত সাবেক এমপি রণজিৎ রায় বলয়ের অন্য কেউ প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা না দেওয়ায় রাজীব রায় কিছুটা হলেও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বিপুল ফারাজী বহু আগে থেকেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি যাচ্ছেন ভোটারের দ্বারে দ্বারে। অত্যন্ত বিনয়ী ও শিক্ষিত এই তরুণ আওয়ামী লীগ নেতার (বিপুল ফারাজী) নাম শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলাজুড়ে।
উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রউফ মোল্যা আওয়ামী লীগের একজন পরীক্ষিত নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত। দলের দুর্দিনে অনেকে গা ঢাকা দিলেও, তিনি ছিলেন রাজনীতিতে সরব। বিএনপি-জামাত আমলে মামলা- হামলার শিকারও হয়েছিলেন একাধিকবার। উপজেলার সবকটি গ্রামের নাম মুখস্ত রয়েছে এই রাজনীতিকের। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন আব্দুর রউফ মোল্যা। অংশগ্রহণমূলক ওই নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি। তবে দুইবার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার।
এছাড়া, চেয়ারম্যান পদে লড়তে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী। তিনি ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল ইসলাম কাজলের কাছে হেরে যান তিনি। দলীয় প্রতীক না দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এবারও তিনি প্রার্থী হয়েছেন। একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা ও দলের সেক্রেটারি হিসেবে অনেকেই তার সাথে আছেন বলে দাবি করেন হাসান আলীর সমর্থকেরা।
মাসুম রেজা খান চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে সম্প্রতি গণসংযোগ শুরু করছেন। তবে তাকে নিজ এলাকা বন্দবিলা ইউনিয়নের খাজুরায় বেশি গণসংযোগ করতে দেখা যায়। ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনে চাঁদাবাজি বন্ধে ফেইসবুক লাইভেও দেখা মেলে তার।
বাঘারপাড়া উপজেলায় একজন হিজড়া ভোটারসহ মোট ভোটার রয়েছে এক লাখ ৮৯ হাজার ৫১১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৫ হাজার ৪০৬ জন ও মহিলা ভোটার ৯৪ হাজার ১০৪ জন। আর কেন্দ্র ৭০টি।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এ উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ আগামী ২ মে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ ১৩ মে। ভোট ২৯ মে।

আরও খবর

🔝