gramerkagoj
শনিবার ● ৪ মে ২০২৪ ২০ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
যশোরে সড়কের পিচ গলছে কেনো?
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল , ২০২৪, ১২:০৩:০০ এ এম
মহিউদ্দিন সানি:
GK_2024-04-22_6626851720735.png

তীব্র তাপদাহের কারণে যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে পিচ গলে যাচ্ছে বলে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চলছে। বিশেষ করে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে অনেকে বিষয়টি নিয়ে বেশ সরগরম। গরমের কোনো বিষয়ে একজন ফেসবুকার নতুন কোনো আপলোড দিলেই সাথে জুড়ে দিচ্ছেন রাস্তায় গলা পিচের ছবি। এটা নিয়ে যশোরের বাইরের মানুষের মধ্যেও বেশ আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশেরই দাবি রাস্তা সংস্কার কাজে ফাঁকি দেয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর উত্তর জানতে দৈনিক গ্রামের কাগজের পক্ষ থেকে মাঠে নামা হয়। এতে দেখা যায়, যশোরের তিনটি সড়কে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে, সবথেকে বেশি হচ্ছে যশোর-নড়াইল সড়কের দশ কিলোমিটার এলাকায়। অন্য দুটো মহাসড়কের দু’একটি স্থানে পিচ সামান্য গলতে দেখা গেছে। এটাকে ‘টেকনিক্যাল সমস্যা’ বলছেন সড়ক ও জনপথ যশোরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান। একইসাথে তিনি জানান, সওজ যশোর গলে যাওয়া পিচের উপরে বালি ও কুচি পাথর দিচ্ছে। যাতে গলে যাওয়া পিচ আবার পূর্বের অবস্থায় থাকে। ঈদের আগেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
মুঠোফোনে এই প্রতিনিধির কথা হয় উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, ‘মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহের কারণে বিটুমিন গলে যাওয়ায় সড়কের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।’
যশোর-নড়াইল সড়ক ব্যবহারকারীদের দাবি, এই সড়ক সংস্কারে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এব্যাপারে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এটা খুবই হাস্যকর। মানুষ বলতেই পারে। জনগণ অনেক কিছুই বলে। আমি এই সড়কের কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না। আর কোনো দুর্নীতি হয়েছে এরকম কোনো রিপোর্ট আমার কাছে নাই।’
সরেজমিন দেখা যায়, যশোর-নড়াইল সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার অঞ্চলে অধিকাংশ জায়গার পিচ গরমে গলছে। গলে যাওয়া পিচের ওপর বালি ও কুচি পাথর ছিটানো হচ্ছে। তবে যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় বালি স্থায়ীভাবে সড়কে থাকছে না। অন্যদিকে যশোর-খুলনা মহাসড়ক, যশোর-ঝিনাইদহ ও যশোর-বেনাপোল সড়কের কোথাও কোথাও পিচ গলতে দেখা গেছে।
সোমবার দুপুরে যশোর-নড়াইল মহাসড়কের নীলগঞ্জ, হামিদপুর, দায়তলা, ফতেপুর, তারাগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সড়ক জুড়ে কালো গলা পিচ। যা যানবাহনের চাকায় জড়িয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও সড়কে বসে যাচ্ছ চাকার দাগ।
চাঁদপাড়া বাজারে কথা হয় ট্রাক চালক শফিকুল আলমের সাথে। তিনি একটি পণ্যবোঝায় ট্রাক নিয়ে নড়াইল থেকে যশোরে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে টায়ারে পানি দিতে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি জানান, ২৩ বছর তিনি ট্রাক চালান। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে যেতে হয় তাকে। এরকম পিচ গলতে তিনি কোথাও দেখেননি।
তার দাবি, এই সড়কে গাড়ি চালালে তাড়াতাড়ি টায়ার নষ্ট হবে। গলে যাওয়া গরম পিচ চাকায় আটকে গেলে টায়ার যখন তখন ফেটে যেতে পারে। এজন্য কিছু পথ পরপর চাকায় আটকে যাওয়া পিচ পরিষ্কার করে পানি দিয়ে চাকা ঠান্ডা করে নিতে হচ্ছে।
সওজ জানায়, সড়কের পিচ কালো রংয়ের। এই পিচ সূর্যের তাপও বেশি শোষণ করে। এছাড়াও যেসব যান চলাচল বেশি সেসব সড়কে চাকার ঘর্ষণের ফলে উৎপাদিত তাপও এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় পিচ গলে যেতে পারে।
সূত্রমতে, সাধারণত সড়কে যে পিচ ব্যবহার করা হয় তা ৬০-৭০ গ্রেডের। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে পিচ গলার কথা। কিন্তু তার অনেক আগেই পিচ গলে যাচ্ছে। বিভিন্ন সড়কের যেসব স্থানে বিটুমিনের পরিমাণ বেশি পড়েছে, প্রচণ্ড গরমে সেসব জায়গা গলে যাচ্ছে।
ফতেপুর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, রাস্তায় হাঁঠতে গেলে জুতো স্যান্ডেল পিচে আটকে যাচ্ছে। আগেও তো এই রাস্তায় পিচ ছিলো। এতো পিচ গলতে তিনি আগে কখনো দেখেননি। সড়ক সংস্কারে নিন্মমানের কাজ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ইজিবাইক চালক তন্ময় বলেন, ‘এই রাস্তায় আগে বড়বড় মেহগনি গাছ ছিলো। গাছসব কেটে নেচ্ছে। এখন রাস্তার পিচ গরমে গলে যাচ্ছে। শুধু এই রাস্তায় এরকম। অন্য রাস্তায় সমস্যা নেই। আমাদের ছোট গাড়ি। চাকা রাস্তায় আটকে যাচ্ছে। এক্সিডেন্ট হওয়ার ঝুঁকি আছে। একে গরম, তারপরে পিচ গলা। এতো মরার পরে খাঁড়ার ঘাঁ।’
নীলগঞ্জ এলাকায় একটি চায়ের দোকানে কথা হয় কলেজ শিক্ষক শাহিনুর তরফদারের সঙ্গে। গরমে সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, ‘কখনোই না। গরমে পিচ গলছে না। এটা পিচ বলে মনে হয়না। পোড়া মবিল বা আলকাতরা হতে পারে। যদি গরমে পিচ গলতো তবে যশোর-খুলনা মহাসড়কের পিচে গরম লাগেনি?’
যশোর-নড়াইল বিটুমিন গলে পিচ উঠে যাওয়ায় সড়ক সুরক্ষার জন্য মাঠে নেমেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। তাপপ্রবাহে অথবা নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহারে-কিভাবে সড়কের পিচ গলছে তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন স্থানীয়রা।

আরও খবর

🔝