gramerkagoj
শুক্রবার ● ৩ মে ২০২৪ ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ পুলেরহাট-রাজগঞ্জ সড়কের সংস্কার কাজ

ধুলাবালিতে নাজেহাল মানুষ
প্রকাশ : শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল , ২০২৪, ১০:৪৭:০০ পিএম , আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২ মে , ২০২৪, ০১:৪২:০৪ পিএম
খাইরুজ্জামান আকাশ:
GK_2024-04-19_6622a25186339.jpg

ছবি: খায়রুজ্জামান আকাশ

যশোরের পুলেরহাট-রাজগঞ্জ সড়কের সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতার কারণে চরম অস¦স্তিতে পড়েছেন মানুষ। রাস্তার ধুলাবালিতে পথচারীদের অবস্থা এমন হচ্ছে যে, কিছু পথ চলার পর মানুষটিকে আর চেনাই যাচ্ছে না। রাস্তার পাশের জমির ধানও বিনষ্ট হচ্ছে ধুলাবালিতে। যদিও ঠিকাদারি কাজে নিয়োজিতরা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানো হলেও তীব্র তাপদাহের কারণে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অধিকাংশ দিনে কোনো পানি ছিটানো হয় না।
দীর্ঘদিন থেকে চলছে যশোরের পুলেরহাট-রাজগঞ্জ সড়কের সংস্কার কাজ। এই সড়কের তপসীডাঙ্গা থেকে হানুয়ার পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তায় খোয়া এবং বালি ফেলে রাখা হয়েছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে ধুলার। সে কারণে সেখানে যান চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে খেদাপাড়া, রোহিতা, পলাশী থেকে বাগেরহাট, মাহিদিয়া, তসপিডাঙ্গা পর্যন্ত ধুলাবালির জন্য চালক ও যাত্রীরা অতিষ্ঠ। কোনো মানুষ এই রাস্তায় সামান্য কিছু পথ গেলেই ধুলাবালিতে একাকার হয়ে যাচ্ছেন। কুয়াশার মত ধুলাবালির কারণে মাত্র ৫ হাত দূরের মানুষকে দেখা যায় না। ধুলাবালিতে সড়কের দু’পাশের ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বাসাবাড়িও আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। সব থেকে বেশি কষ্টে আছেন মহাসড়কের পাশের বাসিন্দারা। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়ক সংস্কার কাজে অব্যবস্থাপনার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে ধুলাঝড় হচ্ছে। এতে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন এই সড়কে চলাচল করা ভ্যান, মোটরসাইকেল, ইজিবাইকের যাত্রী ও পায়ে হাঁটা মানুষ। স্কুল-কলেজ খোলা থাকলে শিক্ষার্থীদের অবস্থা করুণ হয়ে ওঠে। রাস্তার ধুলাবালি যেয়ে পড়ছে রাস্তার দু’পাশের ধানি জমিতে। এতে জমির ধান বিনষ্ট হচ্ছে। সবমিলিয়ে এলাকাবাসী এবং এই রাস্তায় যাতায়াতকারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মণিরামপুর উপজেলার গাঙ্গুলিয়ার বাসিন্দা জনি হোসেন বলেন, ‘উন্নয়ন কাজ হবে ভালো কথা। তবে এতো অব্যবস্থাপনা মেনে নেয়া যায় না। জনস্বার্থে ধুলোবালিতে পানি ব্যবহার করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু, এই সড়কের ঠিকাদার সেই নিয়ম মানছেন না। সে কারণে আমরা ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। আমরা পরিত্রাণ চাই।’
এই সড়কে চলাচলকারী শামিম জানান, প্রতিদিন হানুয়ার থেকে রাজগঞ্জ-পুলেরহাট রোড দিয়ে অফিসে যেতে হয়। ধুলাবালির কারণে জ্বর, সর্দি, কাঁশি যেনো ছাড়ছেই না’।
স্কুল শিক্ষিকা ছালমা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন আমাকে মুক্তিযোদ্ধা কলেজে যেতে হয়। রাস্তার কাজের জন্য প্রায় প্রচুর জ্যাম সৃষ্টি হয়। অনেক সময় আমরা সময়মতো স্কুলেও যেতে পারি না। জ্যামের সাথে ধুলাবালিতে আমরা অতিষ্ঠ।’
অটোরিকশা চালক গফুর গাজী বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে গত কয়েক মাস ধরে গাড়ি চালাচ্ছি। একটা গাড়ি গেলে ধুলাবালির কারণে পিছনে কোনো লোক আছে কিনা দেখতে পারিনা। এ কারণে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ধুলার জন্য যাত্রীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়েন, তেমনিভাবে সড়কের আশপাশের মানুষেরও ভোগান্তির শেষ নেই।’
কলেজ শিক্ষার্থী সাকিব হাসান বলেন, ‘নিয়মিতই আমি ইজিবাইক, অটোরিকশা, ভ্যানে করে কলেজে যাতায়াত করি। একারণে পরিষ্কার ড্রেস পরে গেলেও কলেজে গিয়ে পৌঁছানোর পর আর তা পরার উপযুক্ত থাকে না। চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। বন্ধুরা আমাকে দেখে হাসি তামাশা করতে থাকে।’
কৃষক হানিফ আলী জানান, ‘রাস্তার পাশে ভাগে নেওয়া দুই বিঘা জমিতে ইরি ধান চাষ করেছি। কিন্তু ধান ফোলার আগে দেখে মনে হচ্ছে আমার ধান পেকে গেছে। অতিরিক্ত ধুলাবালির কারণে ধান পরিপূর্ণ পুষ্ট হচ্ছে না। এর ফলে ফলন না হওয়ার আশংকা রয়েছে। ফলন যদি খারাপ হয় তাহলে মালিককে ভাগ দিয়ে নিজের খরচের টাকা উঠবে না। আমি লোকশানে পড়বো।


রাস্তার সংস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সর্দার পরিচয়দানকারী আকবর আলী দৈনিক গ্রামের কাগজকে জানান, যশোরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যশোর-রাজগঞ্জের ২০ কিলোমিটর সড়কটির পুনঃসংস্কার কাজটি করছে। প্রায় পাঁচ মাস আগে এই কাজ শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, কাজের মেয়াদ দুই বছর।
তিনি বলেন, ‘প্রচন্ড তাপদাহের কারণে রাস্তায় ধুলাবালি সৃষ্টি হচ্ছে। এটা নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে মাঝেমধ্যে ঝামেলাও তৈরি হচ্ছে। কিন্তু, আমরা কি করবো। আমরা দুটো গাড়ির সাহায্যে রাস্তায় পানি ফেলাচ্ছি। তবে, তা কোনো কাজে আসছে না। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পানি দিচ্ছি আর শুকায়ে যাচ্ছে। শুক্রবার থেকে পানি দেয়ার জন্যে আরও একটা গাড়ি বাড়ানো হয়েছে।’

 

আরও খবর

🔝