শিরোনাম |
❒ গ্রামের কাগজের সংবাদে দেশজুড়ে শিক্ষকদের মধ্যে তোলপাড়
❒ বদলির নামে প্রতি শিক্ষকের কাছ থেকে নেন ২০ হাজার
বাংলাদেশ সহকারী শিক্ষক সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি বহুল বিতর্কিত যশোরের অভয়নগরের আড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক তপন মন্ডলের বিরুদ্ধে গ্রামের কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
দাবি উঠেছে, প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ হাতানো তপনসহ তার সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনার, একইসাথে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ ফেরত নেওয়ার। তপনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হচ্ছে। অভয়নগরে তার অপকর্ম নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন শিক্ষকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, অভয়নগর উপজেলায় ১১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বছর তিনেক আগে এসব বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা নিতে বায়োমেট্রিক মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই খবর শোনার সাথে সাথে ধান্ধাবাজ তপন মন্ডল যোগাযোগ করেন অভয়নগরের তৎকালীন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার-ইউপিইও আব্দুল জব্বারের সাথে। তাকে ‘রাজিখুশি’ করে বায়োমেট্রিক মেশিন সরবরাহের কাজ বাগিয়ে নেন তপন। এরপর প্রতিটি বিদ্যালয়ে সাত হাজার টাকা মূল্যের নিম্নমানের বায়োমেট্রিক মেশিন ২০ হাজার টাকায় সরবরাহ করেন তিনি। সেই হিসেবে তপন সিন্ডিকেট ওইসময় হাতিয়ে নেয় ১৫ লাখ ২১ হাজার টাকা। নিম্নমানের বায়োমেট্রিক মেশিন সরবরাহ করে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল জব্বার তড়িঘড়ি করে কেশবপুরে বদলি হয়ে যান। একপর্যায়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হজম করতে সক্ষম হন তপন মন্ডল।
অভয়নগরের আরও কয়েক শিক্ষক জানান, ধুরন্ধর তপন মন্ডল স্কুল ফাঁকি দিয়ে প্রায় সময় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পড়ে থাকেন। তিনি শিক্ষকদের বদলি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে শিক্ষক প্রতি ২০ হাজার টাকা উৎকোচ নেন। কোনো শিক্ষক মারা গেলে তার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে এক লাখ টাকা করে আদায় করে থাকেন। তার দালালি কেবল শিক্ষা অফিস কেন্দ্রিক না; ভূমি অফিসেও চলে সমানতালে। আর ভূমি অফিসে দালালির সুযোগ পান স্ত্রীর কর্মসূত্রে।
তার স্ত্রী অতন্দ্রা বিশ্বাস অভয়নগরের রাজঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা থাকাকালীন স্বামী তপন মন্ডলের প্ররোচনায় অর্থের বিনিময়ে খাস জমির দাখিলা ব্যক্তির নামে কেটে দেন। এটি নিয়ে অভিযোগ হলে তদন্তে প্রমাণিত হয়। সেই অপরাধে চাকরিচ্যুত হন তপনের স্ত্রী অতন্দ্রা বিশ্বাস। স্ত্রী ভূমি অফিসে চাকরি করার সুযোগে ধুরন্ধর তপন মন্ডল খাসজমি ও রেলওয়ের জমি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার ধোপাপাড়ার বাসিন্দা ফনিভূষণ সেনের ছেলে অশোক কুমার সেনকে সাথে নিয়ে তিনি নওয়াপাড়ায় রণবীর রায় নামে একব্যক্তির ৫৫ শতক জমি বায়না দেখিয়ে জোরপূর্বক ভোগদখল করছেন।
এদিকে, গ্রামের কাগজের সংবাদ ফেসবুকের বিভিন্ন আইডিতে শেয়ার হওয়ার পর তপন মন্ডলের কুকীর্তি নিয়ে সারাদেশের শিক্ষকরা নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। আজাদ খানের আইডিতে মন্তব্য করতে গিয়ে আসাদুজ্জামান আসাদ নামে এক শিক্ষক লিখেছেন, ‘তপন মন্ডলকে বয়কট করুন। এর হিসাব তপন বাবুকে দিতে হবে। দালাল কোথাকার।’
রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, ‘হালায় চোর কোথাকার।’
মারফুদুল হক লিখেছেন, ‘শিক্ষক সমাজের বিষফোঁড়া। ধন্যবাদ জানাই সাংবাদিক সাহেবকে, এতো সুন্দর একটা খবরের জন্য।’
মোহাম্মদ আলী হোসের তালুকদার লিখেছেন, ‘এসব চোর বাটপার শিক্ষক সমাজের জন্য কলঙ্ক।’ একই কথা লিখেছেন সামছুদ্দিন আহম্মেদও।
ফোরকান আলম লিখেছেন, ‘টাউট বাটপারের কারণে শিক্ষকরা আজ অবহেলিত।’ গনেশ চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘একটা বাজে মানুষ। শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক।’
গোলাম কিবরিয়া লিখেছেন, ‘এর সঙ্গে বগুড়ার একজন স্বঘোষিত শিক্ষক নেতা জড়িত, তিন লাখ শিক্ষককে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে।’
শেখ শহিদ লিখেছেন, ‘নির্লজ্জ মানুষ। একে আমরা ধিক্কার জানাই।’ আশরাফুল আলম লিখেছেন, ‘তপন মন্ডল, ভন্ড নেতা! ভন্ড মন্ডল!’ এসএম খায়রুল কবি লিখেছেন, ‘বয়কট দালালদের।’
আনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ লিখেছেন, ‘ওই মামলায় আমাদের উপজেলা থেকেও টাকা দিয়েছিলাম।’
জসিম উদ্দিন লিখেছেন, ‘এই ব্যাটা আবার নেতা হলো কখন। এতো আস্ত একটা দালাল।’
আনোয়ার জাহিদ লিখেছেন, ‘বগুড়া থেকে আমরা ৫২ হাজার টাকা দিয়েছি। তখন মামলার কথা বললে আবোল তাবোল বলতো এবং রাগ করতো।’
যশোরের একজন নারী শিক্ষক বলেছেন, ‘গ্রামের কাগজ তপন মন্ডলের কাছ থেকে সহকারী শিক্ষকদের স্বাধীন করতে যুদ্ধ শুরু করেছে। এই যুদ্ধের শেষ তুলতে হবে। তার হাত থেকে বাঁচাতে হবে শিক্ষকদের।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে তপন মন্ডলকে ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।