gramerkagoj
শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
gramerkagoj
রূপপুরে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রকাশ : বুধবার, ৩ এপ্রিল , ২০২৪, ০৯:৫৩:০০ এএম , আপডেট : শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ১২:০৩:২৩ পিএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2024-04-03_660cd2a94c6c8.jpg

পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভের মধ্যে বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ করছে রসাটম। ওই প্রকল্পের পাশেই একই ক্ষমতার আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ দুটির নির্মাণ শেষে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুতের উৎপাদনসক্ষমতা দাঁড়াবে ৪৮০০ মেগাওয়াট।
গতকালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুরে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আগ্রহ পোষণ করলে রসাটমের মহাপরিচালক বলেন, এ বিষয়ে রাশিয়া বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন দ্বিতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করা যায় সে ব্যাপারে রাশিয়াকে প্রস্তুতি নিতে বললে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয় তারা প্রস্তুত। দ্বিতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়।
রসাটমের মহাপরিচালক বলেন, প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কারণে বাংলাদেশের অনেক দক্ষ জনশক্তি তৈরি হয়েছে, যা দ্বিতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহায়ক হবে। এ ছাড়া দ্বিতীয় প্রকল্পের নির্মাণব্যয় ও সময় কম লাগবে। এটি বাংলাদেশের বড় সুবিধা। তিনি বলেন, বিদ্যমান পারমাণবিক বিদ্যুৎপ্রকল্পের সম্প্রসারণ আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং প্রযুক্তিগত ও পারমাণবিক নিরাপত্তার নিরিখে বেশি লাভজনক। আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তিসংগতও।
বৈঠকে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করারও তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।
বৈঠকে পরমাণুশক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ-রাশিয়া কৌশলগত সহযোগিতার বিষয়গুলো স্থান পায়। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য নির্মাণাধীন সঞ্চালন লাইনের অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এসএমআর বা স্মল মডিউল রিঅ্যাক্টরের ব্যবহার নিয়েও কথা হয়েছে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ করার পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) জায়গায় আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ান ফেডারেশনে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য ফিরিয়ে দেওয়ার সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। রাশিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে পারমাণবিক বর্জ্য ফেরত নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন রসাটম মহাপরিচালক।
বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় পারমাণবিক বর্জ্য ফেরত নেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে।
বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল এবং তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর নির্মাণে সহযোগিতার জন্য রাশিয়াকে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে রাশিয়ার সহায়তার কথা এবং মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে দেশটির সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য শুভেচ্ছা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী রসাটম মহাপরিচালককে বিভিন্ন দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে বাংলাদেশের দক্ষতা কাজে লাগাতে বলেন।
অ্যালেক্সি লিখাচেভ বলেন, মহামারী এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েই স্বাভাবিক গতিতেই রূপপুরের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কৌশলগতভাবে এ বাধা এড়ানো গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আলী হোসেন, পরমাণু শক্তি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক ড. শৌকত আকবর প্রমুখ।
পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অ্যালেক্সি লিখাচেভ বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন অর্জিত হতে যাচ্ছে। চলতি বছর শেষের আগেই প্রথম ইউনিটের ফিজিক্যাল স্টার্টআপ হবে। বর্তমানে আমরা নতুন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় আরও দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশ গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিপারপাস গবেষণা রিঅ্যাক্টর নির্মাণের বিষয়টিরও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গবেষণা রিঅ্যাক্টর বিজ্ঞান ও নিউক্লিয়ার মেডিসিনবিষয়ক বিভিন্ন সমাধান দিতে সক্ষম।’

আরও খবর

🔝