gramerkagoj
রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒ ‘তানাবানা’য় নজর উচ্চবিত্তদের

ঈদে ম্লান বৈশাখী বাজার
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল , ২০২৪, ০৯:০৯:০০ পিএম
মহিউদ্দিন সানি:
GK_2024-04-02_660c2087df6f8.png

পাঁচ বছরের শিশু কন্যার জন্য হালকা গোলাপি রঙের বৈশাখি শাড়ি খুঁজছিলেন যশোর শহরের পালবাড়ি এলাকার গৃহবধূ ঐশী মনি। কিন্তু কয়েক দোকান ঘুরেও পছন্দের শাড়ি খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। অথচ নার্সারি ক্লাসে পড়য়া মেয়ের আবদার, গোলাপি রঙের শাড়িই লাগবে তার।
মঙ্গলবার যশোর শহরের নতুন হাটচান্নিতে কথা হয় ঐশী মনির সাথে। তিনি বলেন,‘অন্যবার পহেলা বৈশাখের আগে কাপড় কিনতে এসে এতো খোঁজা লাগেনি। প্রায় প্রত্যেক দোকানেই বিভিন্ন রঙের বৈশাখি শাড়ি পাওয়া যেতো। কিন্তু এবার যে শাড়ি খুঁজছি তা পাচ্ছি না। ঈদের বাজারে পহেলা বৈশাখের আমেজটা একটু কমই মনে হচ্ছে।’ বৈশাখে প্রতিবার নিজের জন্য শাড়ি কিনলেও এবার ঈদের কারণে শাড়ি কিনবেন না ঐশী। শুধু মেয়ের আবদার মেটাতে বাজারে বৈশাখি শাড়ির খোঁজ তার।
বাঙালি সত্তার আবেগের বঙ্গাব্দের প্রথম দিন-বাংলা নববর্ষ। এ দিনকে বরণ করে নিতে বাঙালির ঘরে ঘরেই থাকে প্রস্তুতি। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে চাঙা হয় দেশের অর্থনীতি। নতুন নতুন পোশাকের পসরা খুলে বসে বিপণীবিতান ও ফ্যাশন হাউজগুলো। তবে, এবার বাংলা নতুন বছর বরণের আগেই আসছে ঈদুল ফিতর। যে কারণে এবার বৈশাখি কেনাকাটায় আগ্রহ নেই বাঙালির।
যশোরের বিভিন্ন দোকান, শো-রুম ঘুরে দেখা যায়, বাজার জুড়ে ঈদকেন্দ্রিক পোশাকেরই রাজত্ব। অনেক ব্যবসায়ী ঈদের বাজারে বৈশাখের পোশাক ওঠাননি। ঈদ ও বৈশাখ দুটো উৎসবেই পরা যায় এমন কিছু পোশাকের কালেকশনও রেখেছেন কেউ কেউ। তবে,ঈদের আগে শুধু বৈশাখ ঘিরে কেনাকাটা করা লোকের সংখ্যা কম।
বিক্রেতারা জানান, শুধু পহেলা বৈশাখকে প্রাধান্য দিয়ে এবার খুব কম পোশাকই আনা হয়েছে। কিছু পোশাক আছে যেগুলো ঈদ ও বৈশাখে পরা যাবে। তবে, ক্রেতাদের অধিকাংশই শুধুমাত্র ঈদের জন্যই পোশাক কিনছেন। ঈদের সঙ্গে মিলিয়ে বৈশাখের কেনাকাটা চলছে টুকটাক। তবে, দু’উৎসব কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় বৈশাখি আয়োজনে এবার ভাটার টান। বাজেট কাটছাঁট করতে অনেকে এবার বৈশাখের কেনাকাটা বাদ দিচ্ছেন।
যশোর শহরের কাপুড়িয়াপট্টির গোবিন্দ স্টোরের বিক্রেতা গৌতম সাহা বলেন, ক্রেতারা মোটামুটি ঈদের কেনাকাটা করলেও বৈশাখের পোশাকের কেনাকাটা এবার কম। এবার ঈদে পাকিস্তানি থ্রিপিচ বেশি চলছে। নায়রা-গাউন মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে।
বড়বাজারের মনসা বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী চিন্ময় সাহা জানান, টাঙ্গাইলের শাড়ি, বেনারসি, কাতান, সিল্কের শাড়ি মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। তবে, সিল্কের তানাবানা শাড়ির ক্রেতা বেশি।
তিনি বলেন, এবার ঈদ উপলক্ষে শাড়ির গুণগত মান ও কাজের ওপর আনা হয়েছে আমূল পরিবর্তন। কাজের ওপর নির্ভর করে দাম। সিল্কের শাড়ি, ঢাকায় জামদানি, জর্জেট শাড়ি, চেন্নাই শাড়ি, গাদোয়াল শাড়িও বিক্রি হচ্ছে।
কেশবপুর থেকে ব্যবসায়ী শিবলি সাদিক যশোর শহরের মুজিব সড়কের একটি শোরুমে পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করছিলেন। তিনি জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবার পরিবারের বড়দের কেনাকাটায় কিছুটা সঞ্চয় করতে হচ্ছে। তবে, শিশুদের জন্য পছন্দ মতো কাপড় নিতে হচ্ছে। কারণ ঈদের আনন্দ শিশুদের একটু বেশি।
নড়াইল থেকে শাম্মি আক্তার পাপড়ি নামে এক গৃহবধূ স্বামী ও কন্যাকে নিয়ে শহরের একটি মার্কেটে কেনাকাটা করছিলেন। তিনি বলেন,একই কাপড় ঈদ ও পহেলা বৈশাখে পরতে হবে। কাপড়ের যে দাম! অন্যদিকে বাজেটের মধ্যে কেনাকাটা করতে হচ্ছে। এ কারণে দু’অনুষ্ঠানের জন্য আলাদা করে কাপড় কেনা সম্ভব হচ্ছেনা।
সিটি প্লাজার লেডিস ফেয়ারের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর কবীর সোহেল জানান,‘ঈদের অল্প ক’দিন বাকি। অন্যান্য বছর রোজার মাঝামাঝি সময়ে ক্রেতার ভিড় থাকতো মার্কেটে। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। আমাদের কর্মীরা অনেকটা অলস সময় পার করছেন। দুটো উৎসব একসঙ্গে হলেও ক্রেতাদের ভিড় নেই।’
পাবনা ক্লথ স্টোরে মঙ্গলবার ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইমরান মাহমুদ। তিনি বলেন,‘ঈদের ভিড় বাড়ার আগেই মার্কেটে এসেছি পছন্দের পোশাক কিনতে। কিন্তু মার্কেটে এসে যা দাম দেখছি তা রীতিমতো বিস্ময়কর! গত বছরও এত দাম ছিল না। এবার নিম্নমানের পাঞ্জাবি কিনতেও দেখছি এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে দু’হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে।’
ঈদের পরপরই পহেলা বৈশাখ। সে ক্ষেত্রে কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দেবেন প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন,‘আসলে দু’টি উৎসবই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ঈদের কথা মাথায় রেখে পোশাক কেনার চিন্তা করছি।’
শহরের কালেক্টরেট মার্কেটে নয় বছরের সন্তান শাকিলকে নিয়ে পাঞ্জাবির খোঁজে আসেন সরকারি কর্মকর্তা আলমগীর কবীর। তিনি বলেন,‘বাড়ি থেকে মার্কেটে আসার সময় ভেবেছিলাম অন্তত ছেলের জন্য বৈশাখি পাঞ্জাবি কিনবো। কিন্তু মার্কেটে এসে দেখছি সব ধরনের পোশাকের দাম বাড়তি। এজন্য আর ছেলের বৈশাখি পোশাক কেনা হলোনা।’
কালেক্টরেট মার্কেটের রহিম ক্লথ স্টোরের সেলস ম্যানেজার রাসেল শিকদার জানান,‘করোনার পর রোজার মধ্যে পহেলা বৈশাখ পড়ে। এবার পহেলা বৈশাখ ঈদের পরে হলেও আমরাও তেমন কিছু প্রস্তুতি নেয়নি। কারণ মানুষ ঈদের কেনাকাটাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সেজন্য এবার মার্কেটে বৈশাখ উপলক্ষে পোশাক তোলা হয়নি। অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরও একই বক্তব্য রমজান মাসের ঈদের উৎসবে জমেনি বৈশাখ বাজার।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝