gramerkagoj
শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
gramerkagoj
দাম বাড়েনি এমন কোনো ফল বাজারে নেই
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ১২ মার্চ , ২০২৪, ১১:৩৬:০০ পিএম , আপডেট : শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ১২:১১:৫০ পিএম
মিনা বিশ্বাস:
GK_2024-03-12_65f076b0c6481.webp

‘নিজেরা ফল খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি আরও আগে থেকে। আজকে ৪০০ টাকা কেজিতে আঙ্গুর কিনলাম। সদর হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে তার জন্য নিয়ে যাচ্ছি। এক সপ্তাহ আগেও এসব ফলের এতো দাম ছিল না।’ কথাগুলো বলেন যশোর সদর উপজেলার রাজারহাটের মঞ্জুয়ারা বেগম। শহরের বেজপাড়ার নার্গিস আক্তার বলেন, ‘কুল (বরই) কিনতে এসেছি। কিছু কলাও নিয়ে যাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু বাজারে এসে দেখছি এক ফানা কলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। কয়েকদিন আগেও যা ছিল ৩০ টাকা।’ আরেক ক্রেতা জেল রোড এলাকার শামসুল হক বলেন,‘একশ’ টাকার উপরে ডাবের দাম, এ বছর আর ডাব দিয়ে ইফতার করা হবে না।’ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে এভাবেই আক্ষেপ ঝরে ক্রেতাদের কণ্ঠে।
যশোরে ফলের অস্বাভাবিক দামের কারণে এর কাছে ভিড়তে পারছেন না ক্রেতারা। কেউ কেউ দাম শুনেই দোকান থেকে চলে যাচ্ছেন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে। সস্তার কলা, বরই, পেয়ারা, ছবেদাও চলে গেছে সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারেননি বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ বলছেন, আড়তদারদের কাছ থেকে তারা ফল বেশি দামে কিনছেন তাই তারাও বাধ্য হচ্ছেন বাড়তি দামে বিক্রি করতে। অন্যদিকে, দড়াটানায় নিজ উদ্যোগেই কোনো কোনো দোকানি ফলের মূল্য তালিকা ঝুলিয়েছেন।
দেশি কিংবা বিদেশি ফল কোনোটিতেই স্বস্তি নেই। শহরের মণিহার, দড়াটানা, চৌরাস্তা, কোর্টের মোড়ের ফলের দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে ফল বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। স্বল্প দামের ফলও চলে গেছে সাধারণের নাগালের বাইরে। প্রতি ফানা চাপা কলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। সাগর কলা বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৪০ টাকা হালিতে। যে সাগর কলা সপ্তাহখানিক আগে বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। সবরি কলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা হালি দরে। বরই বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। ছবেদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজিতে। সপ্তাহখানিক আগে যা ছিল ১০০ টাকা কেজি। ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস ডাব গিয়ে পৌঁছেছে ১২০ টাকায়।
দড়াটানার ডাব বিক্রেতা মেহেদি হাসান বলেন, বাজারে যশোরের ডাবের সরবরাহ কম। সাতক্ষীরার ডাব দিয়ে আমাদের ব্যবসা চালাতে হচ্ছে। অন্যদিকে, মৌসুম শুরু হলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। শহরের মণিহার এলাকার ফল বিক্রেতা বনি আমিন বলেন,‘আড়ৎ থেকে বাড়তি দামে খেজুর আনতে হচ্ছে। পাঁচ কেজির কার্টন আগে আনতাম তিন হাজার ৮০০ টাকায়। আর এখন আনতে হচ্ছে চার হাজার ৬০০ টাকায়।’
অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে আমদানিকৃত ফলের দাম। প্রতি কেজি খেজুরে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সাধারণ মানের চট খেজুরও বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে। সপ্তাহখানিক আগেও যা ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। দাবাসের দাম ৫০০ টাকা কেজি। সপ্তাহখানিক আগেও যা বিক্রি হয় ৩৫০ টাকা কেজিতে। রেড ক্রাউন ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যার কেজিতে বেড়েছে ২০০ টাকা। কালমির দাম এক হাজার ১০০ টাকা। যার পূর্বমূল্য ছিল ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। আজোয়া এক হাজার থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যা বিক্রি হয় এক হাজার টাকায়। মরিয়ম এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় এক হাজার ২০০ টাকা কেজিতে। মেটজুল এক হাজার ৫০০ থেকে দু’হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়।
আঙ্গুরে বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। সবুজ আঙ্গুর বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে। গত সপ্তাহে যা বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়। কালো আঙ্গুর ৪০০ টাকা। যা সপ্তাহখানিক আগে বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে। ২০০ টাকার কমলা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। মাল্টার দাম ৩৫০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। নাসপাতি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। গত সপ্তাহে যা ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়। বেদানা ৪৫০ থেকে ৫০০টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৩৫০ টাকা কেজিতে। ২০০ গ্রাম ওজনের স্ট্রবেরির বক্স বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়।
দড়াটানার ফল বিক্রেতা মৃদুল ইসলাম বলেন,‘আগের চেয়ে এখন সার মাটির দাম বেড়েছে। ফলের উৎপাদন খরচও বেশি। তাই দাম বাড়ছে। আরেক বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, বিড়ম্বনা এড়াতে আমার দোকানে ফলের মূল্য তালিকা ঝুলিয়েছি। দড়াটানায় আমার মতো আরও অনেকেই মূল্য তালিকা ঝুলিয়েছে। সবারই এটা করা উচিত।’

আরও খবর

🔝