gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
যশোরে ১২৮৯ প্রধান শিক্ষকের মধ্যে ৬০৩ জনই ভারপ্রাপ্ত

❒ প্রাথমিকে নিম্নমুখি হচ্ছে শিক্ষার মান

প্রকাশ : মঙ্গলবার, ১২ মার্চ , ২০২৪, ১২:০৪:০০ এ এম , আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২৪, ০২:৪৮:৩০ পিএম
এম. আইউব:
GK_2024-03-11_65ef2be56c3a1.jpg

যশোরে প্রাথমিক শিক্ষার মান কমছে। অনেক ক্ষেত্রে রক্ষা করা যাচ্ছে না শৃঙ্খলাও। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা মানছেন না সহকারীরা। এই অবস্থা এক হাজার ২৮৯ স্কুলের মধ্যে ৬০৩ টিতেই। এসব স্কুলে পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক নেই। চলছে চলতি দায়িত্ব কিংবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে।
এসব স্কুলের কর্মরত শিক্ষকরা নির্দেশনা মানবেনই বা কেন! সবাইতো সহকারী শিক্ষক। কেবল যোগদানের জ্যেষ্ঠতার কারণে চলতি দায়িত্ব কিংবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়েছেন। এসব চলতি দায়িত্ব কিংবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বেশিরভাগই স্কুল চালাতে ‘অযোগ্য’ বলে জানিয়েছেন খোদ শিক্ষকরাই।
বেশ কয়েকজন প্রধান ও সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, যারা চলতি দায়িত্ব ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন তাদের বেশিরভাগ কাজের প্রতি আন্তরিক না। তাদের একটাই চিন্তা-পুর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক আসলে তাদেরতো চেয়ার ছেড়ে দিতে হবে। তাহলে খামাখা কেন বেশি কাজ করতে যাবেন! ফলে, সহকারী শিক্ষকরা ইচ্ছেমতো চলাফেরা করেন। আবার সহকারী শিক্ষকদের কোনোকিছু বলতে গেলে অনেকেই তা আমলে নিতে চান না। তাদের মানসিকতা, সবাইতো সহকারী শিক্ষক! তাহলে কেন চলতি দায়িত্ব কিংবা ভারপ্রাপ্তের কথায় তারা চলতে যাবেন।
আবার অনেক ক্ষেত্রে চলতি দায়িত্ব কিংবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়েই অনেকেই সহকারী শিক্ষকদের উপর ইচ্ছেমতো ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা করেন। আর তখনই বাধে বিপত্তি। অনেক সহকারী শিক্ষক এই ছড়ি ঘোরানো পছন্দ করেন না। তারা প্রধান শিক্ষকের চেয়ে নিজেকে কম যোগ্য মনে করেন না। এসব কারণে জেলার অর্ধেকের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান দিনদিন নিম্নমুখি হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ পুর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া। আর পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে প্রশাসনিক কারণে দেরি হলে চলতি দায়িত্ব এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের অদলবদল করার কথাও বলছেন কেউ কেউ।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যশোরের আট উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের মোট পদ রয়েছে এক হাজার ২৮৯ টি। এরমধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক রয়েছেন ৬৮৬ জন। চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক ৩৩২ জন। এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ২৭১ জন। এরমধ্যে অধিকাংশ নারী।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অভয়নগরে প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ১১৭ টি। কর্মরত রয়েছেন ৫৭ জন। চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক রয়েছেন ২৯ জন। আর ৩১ জন ভারপ্রাপ্ত। কেশবপুরে প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৫৮ টি। কর্মরত রয়েছেন ৯৯ জন। চলতি দায়িত্বে রয়েছেন ৪২ জন। আর ১৭ জন রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত। চৌগাছায় প্রধান শিক্ষকের পদ ১৩৯ টি। কর্মরত রয়েছেন ৭৩ জন। চলতি দায়িত্বে ৩২ জন। আর ৩৪ জন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। ঝিকরগাছায় প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৩১ টি। কর্মরত রয়েছেন ৬৯ জন। ৩১ জন চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন ৩১ জন। বাঘারপাড়ায় প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ১০২ টি। কর্মরত রয়েছেন ৫০ জন। চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক ৩২ জন। ২০ জন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। মণিরামপুরে প্রধান শিক্ষকের মোট পদসংখ্যা ২৬৭। কর্মরত রয়েছেন ১২৯ জন। চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক ৭৭ জন। ৬১ জন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। শার্শায় প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ১২৫ টি। ৫৮ জন কর্মরত রয়েছেন। চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক রয়েছেন ৩৫ জন। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করছেন ৩২ জন। এবং সদর উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ২৫০ টি। কর্মরত রয়েছেন ১৫১ জন। চলতি দায়িত্বে রয়েছেন ৫৪ জন। আর ৪৫ জন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন।
সূত্র জানিয়েছে, চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষকরা দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক হবেন। এই বিবেচনায় সহকারী শিক্ষকরা তাদের কিছুটা হলেও মান্যগণ্য করেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা সহজেই প্রধান শিক্ষক হতে পারবেন না। এ কারণে তাদের নির্দেশ মানছেন না অনেকেই। ফলে, চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ছে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘একজন প্রধান শিক্ষক যেভাবে স্কুল চালাতেন ভারপ্রাপ্তরা সেভাবে চালাতে পারেন না। প্রধান শিক্ষক না থাকায় লেখাপড়ার মান নিম্নমুখি হওয়া স্বাভাবিক। কারণ ভারপ্রাপ্তদের অতিরিক্ত করতে হচ্ছে। ফলে, তারা অনেক কাজই ঠিকমতো করতে পারছেন না। স্কুলের জন্য প্রধান শিক্ষক খুবই জরুরি। প্রধান শিক্ষক আসলে লেখাপড়ার মান বৃদ্ধি পাবে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলমের কাছে জানতে ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

আরও খবর

🔝