শিরোনাম |
❒ অনিয়ম থামছে না বাবু সিন্ডিকেটের
❒ ফাঁদে ফেলা হচ্ছে শিক্ষকদের
অনিয়ম থামছে না যশোরের কেশবপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা বাবু সিন্ডিকেট সদস্যদের। এই সিন্ডিকেটের অন্যতম প্রধান হোতা সুদেব দেবনাথ এবার প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রাপ্তদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের নামে ১২০ জনের কাছ অর্থ আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেছেন মাগুরাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শংকর কুমার।
সূত্র দাবি করেছে, সুদেব দেবনাথ প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা হিসেবে ৬০ হাজার টাকা আদায় করেছেন। ওই টাকা থেকে নাজমুল হুদা বাবু ১০ হাজার টাকা দাবি করেন বলে সূত্র জানায়।
সারাদেশে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পাওয়াদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তার অংশ হিসেবে যশোরের বিভিন্ন উপজেলায় তালিকা তৈরি হচ্ছে। তালিকায় স্থান পাওয়ারা সবাই পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক হবেন। পদোন্নতির জন্য প্রতিটি উপজেলায় সহকারী শিক্ষক পদে যারা সিনিয়র রয়েছেন তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। প্রায় সব উপজেলায় শিক্ষক সমিতির নেতারাই তালিকা করার কাজ করছেন। কেশবপুরে এই তালিকা করেছেন বাবুর অনিয়ম দুর্নীতির অন্যতম হোতা মজিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষক সমাজের জেলা সভাপতি সুদেব দেবনাথ ও তার সাগরেদ শংকর কুমার। এই দু’জন চারদিন স্কুল ফাঁকি দিয়ে এই কাগজপত্র সংগ্রহ করেন বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন। আর কাগজপত্র যাচাই করতে গিয়ে হাতিয়েছেন ৬০ হাজার টাকা। পদোন্নতির তালিকায় নাম রয়েছে এমন কয়েকজন শিক্ষক টাকা দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, সুদেব দেবনাথ যে টাকা আদায় করেছেন তা থেকে নাজমুল হুদা বাবু ১০ হাজার টাকা দাবি করেছেন।
এদিকে, এই সুদেবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এমন একজন শিক্ষক উপজেলার রামচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নার্গিস খাতুন। এটি একটি রেজিস্ট্রার্ড স্কুল ছিল। এই স্কুল করতে জায়গা দেয় নার্গিস খাতুনের পরিবার। তিনিই ছিলেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক। সেই হিসেবে জাতীয়করণ করার সময় প্রধান শিক্ষক হিসেবে নার্গিস খাতুনের কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়। সুদেব দেবনাথ তাদের কাছ থেকে ওইসব কাগজপত্র নিয়ে জমা দেন বলে সূত্র জানিয়েছে। কেবল নার্গিস খাতুন না, আরও দু’জন শিক্ষকের কাগজপত্র জমা দেন সুদেব। এই তিনজনের কাগজপত্রে তিনি ইচ্ছে করেই কিছু ত্রুটি রাখেন বলে সূত্রের দাবি।
কাগজপত্র জমা হওয়ার পর নানা ত্রুটি বিচ্যূতির কথা বলে এই তিন শিক্ষকের কাছে কয়েক লাখ টাকা দাবি করেন সুদেব দেবনাথ। ওই তিন প্রধান শিক্ষক তার চাহিদা পূরণ না করায় তিনি বিভিন্ন দপ্তরে একের পর এক অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে আসছেন। বিভ্রান্ত করেন গণমাধ্যমকেও।
তার দ্বারা হয়রানির শিকার রামচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নার্গিস খাতুন শনিবার রাতে অভিযোগ করে বলেন, ‘সুদেব আমাদের কাগজপত্র বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়ার পর থেকে একের পর এক ঝামেলা করে আসছেন। তিনি প্রথমে পাঁচ-সাত লাখ টাকা দাবি করেন। না দেওয়ায় বিভিন্ন দপ্তরে বেনামে অভিযোগ দিয়ে আসছেন। বিশেষ করে নতুন ডিপিইও, টিইও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসলেই তিনি অভিযোগ দেবেনই। অথচ কাগজপত্রে যদি কোনো ত্রুটি থেকে থাকে তার জন্য আমরা দায়ী না। অফিস বারবার যাচাই করে কাগজপত্র পাঠিয়েছিল। তাহলে আমাদের দোষ কোথায়। এখন আমাদের বাদ দিয়ে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য করার পাঁয়তারা করছে সুদেব। সারাদিন শিক্ষকদের ফাঁক-ফোঁকর খোঁজা তার কাজ।’
এসব বিষয়ে সুদেব দেবনাথ বলেন, ‘পদোন্নতির জন্য কোনো তালিকা করা হয় না। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রব শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তালিকা করা নিয়ে সুদেব দেবনাথের বাণিজ্যের বিষয়ে তার কাছ থেকে কোনোকিছু জানা সম্ভব হয়নি।