শিরোনাম |
❒ যশোর জেনারেল হাসপাতাল
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ থেকে রিপোর্ট বদলে দেয়ায় জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) নামে একজন রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি বাড়িতে শয্যাসায়ী হয়ে আছেন। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নামমাত্র একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্যাথলজি বিভাগ থেকে শিহাব হোসেন নামে একজন সেচ্ছাসেবককে প্রত্যাহার করেছে। এতো বড় ঘটনায় প্যাথলজি বিভাগের দায়িত্বশীল কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সেচ্ছাসেবকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় হাসপাতালপাড়ায় হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, ৪ জানুয়ারি বেলা ১১টায় জ্বর নিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন শাখারিগাতী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম। সেখানে ডাক্তার তাকে ভর্তির নির্দেশনা দিয়ে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে প্রেরণ করেন। এ সময় ওয়ার্ডে ডাক্তার তাকে টাইফয়েড, ডায়াবেটিসসহ ৭টি টেস্ট লিখে দেন। রোগীর স্বজনরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে আসলে প্যাথলজিস্ট তার নমুনা সংগ্রহ করেন। ওই দিন দুপুর ২টার পর রোগীর স্বজনরা রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারকে দেখালে জানানো হয়, তার টাইফয়েড ও ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে।
ওই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ডাক্তার রোগীকে চারদিন চিকিৎসা করেছেন। কিন্তু ৮ জানুয়ারি ছাড়পত্রের দিন ওয়ার্ডে অন্য ডাক্তার এসে রিপোর্টের উপর নাম দেখে হতবাক হন। তিনি রোগীর স্বজনদের জানান রিপোর্টগুলি ওই রোগীর নয়। তিনি ভুলের শিকার হয়েছেন। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
হাসপাতালের প্যাথলজিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের রিপোর্ট প্রদান আইডি নম্বর ছিলো ২০৬। কিন্তু মোহম্মদ আলী নামে একজন রোগীর রিপোর্ট তাকে প্রদান করা হয়েছে। যার রিপোর্ট আইডি নম্বর ২০৭। প্যাথলজিতে রিপোর্ট প্রদানের দ্বায়িত্বে থাকা শিহাব হোসেন রিপোর্টটি প্রদান করেন। তবে, প্যাথলজি বিভাগ থেকে ভুল করলেও ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা ডাক্তাররা রোগীর রিপোর্টের উপর নাম না দেখে এতোদিন কিভাবে ভুল চিকিৎসা করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ভুল চিকিৎসার শিকার জাহাঙ্গীর আলম জানান, হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে তার রিপোর্টের পরিবর্তে মোহাম্মদ আলী নামে আরেকজনের রিপোর্ট তার স্ত্রীর হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তার স্ত্রী রিপোর্টের উপর নাম দেখেননি। তিনি পড়ালেখাও জানেন না। কিন্তু ডাক্তারতো শিক্ষিত; তাহলে রিপোর্টে নাম না দেখে কেমন করে তাকে চারদিন হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিলো, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। ভুল রিপোর্ট দেয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে তিনি বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু এখানো সুস্থ হতে পারেননি।
পরিবারের কাছ থেকে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম কুরিয়ার সার্ভিসে শ্রমিকের কাজ করছেন। অসুস্থ থাকার কারণে তার চাকরি চলে গেছে। বর্তমানে তার চিকিৎসা করানোর মতো কোনো অর্থ নেই। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কঠোর বিচার দাবি করেছেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার পার্থ প্রতিম চক্রবর্তীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির দেয়া তদন্ত রিপোর্টে একজন প্যাথলজিস্টকে অভিযুক্ত করে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।