শিরোনাম |
❒ পাকিস্তানের রাজধানীতে ১৪৪ ধারা জারি
বিগত তিনদিন ধরে নানা নাটকীয়তার পর পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। পাকিস্তানে জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে কোনো দল সর্বশেষ কতটি আসন পেয়েছে সেটি জানানো হয়েছে। ভোটের ফলাফলে শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৩৪টি আসন। এখন জোট গঠন ছাড়া সরকার গঠন করার উপায় নেই। এখন নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও সরকার গঠনে সৃষ্টি হয়েছে টানাপড়েন।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, জাতীয় পরিষদ বা দেশের সংসদের নিম্নকক্ষের জন্য ঘোষিত নির্বাচনী ফলাফল অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০১টি আসন পেয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ ৭৫টি আসন এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৪টি।
এদিকে, নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগে পিটিআইসহ পাকিস্তানের কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। আর এর প্রেক্ষিতে দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। খবর আলজাজিরার। পুলিশ বলছে, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গণজমায়েত বা সমাবেশ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। রোববার বার্তা সংস্থা আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ইসলামাবাদ পুলিশ বলেছে, কিছু মানুষ নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য সরকারি অফিসের সামনে উস্কানিমূলক জমায়েত করছে। পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে, গণ জমায়েতের জন্য উস্কানি দেওয়াও এক ধরনের অপরাধ।
এর আগে, ভোট চুরির অভিযোগ তুলে পাকিস্তানে বিক্ষোভের ডাক দেয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই। পরে সিদ্ধান্ত বদল করে নির্বাচন কমিশন অফিস ঘেরাও করার কর্মসূচি দেয় দলটি।
পিটিআইয়ের দাবি, তারা একক দল হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। কিন্তু এরপরও তারা যেন সরকার গঠন করতে না পারে, সেজন্য বিভিন্ন আসনের ফলাফল পাল্টে দিয়ে তাদের হারানো হয়েছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রোববার সব আসনের ফলাফল প্রকাশ করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
এতে দেখা গেছে, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০১টি আসন জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে ৯৬টি আসনে জয় পেয়েছেন ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অন্যদিকে নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৫টি আসনে জয় পেয়েছে। আর ৫৪টি আসনে জয় পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি। এ ছাড়া করাচি-ভিত্তিক দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) জয় পেয়েছে ১৭টি আসনে।
এদিকে, এককভাবে সরকার গঠন করতে হলে কোনো রাজনৈতিক দলকে দেশটির জাতীয় পরিষদের ২৬৬টি আসনের মধ্যে ১৩৪টি আসনে জয়ী হতে হবে। পাকিস্তানে ৮ ফেব্রুয়ারির ভোটে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। এই অবস্থায় সরকার গঠনের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে ২৬৬টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের একটি আসনে ভোট বাতিল করা হয়েছে এবং পাঞ্জাবের অন্য একটি আসনের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। এ কারণে ফল ঘোষণা করা হয়েছে ১৬৪টি আসনের। গত তিন দিন ধরে এ নির্বাচনের ফল ঘোষণা করছিল ইসিপি।
দ্য ডন ও জিও টিভির খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ৮৮, ১৮ এবং ৯০ আসনের কয়েকটি কেন্দ্রে পুনরায় নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। ১৫ ফেব্রুয়ারি এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
আল জাজিরা বলেছে, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। এ ছাড়া বাকি ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এসব আসনের মধ্যে ৬০টি নারীদের ও ১০টি সংখ্যালঘুদের।
এদিকে পাকিস্তানে এককভাবে সরকার গঠন করা সম্ভব নয় জেনে রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ সরকার গঠনের জন্য আলোচনা শুরু করেছে। শনিবার মুসলিম লীগ ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির মধ্যে বৈঠক নিয়ে নানা আলোচনা শোনা যায়। তবে পিপিপি নওয়াজের কাছে দাবী জানিয়েছে, মুসলিম লীগকে পিপিপির সমর্থন পেতে হলে বিলাওয়াল ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসাতে হবে। তবে এতে নওয়াজের ভাষ্য না পাওয়া গেলেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এই দাবি মেনে মুসলিম লীগ; পিপলস পার্টির সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করছে না।
এছাড়া কারাবন্দি ইমরানের খানের দল পিটিআই সর্বোচ্চ আসনে জয়লাভ করলেও এককভাবে সরকার গঠন করতে পারছে না। তবে তার দলের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তারা জোট করার জন্য কোনো দলের সঙ্গে আলোচনা করছেন না। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, পিটিআই কোন পথে হাঁটছে?
পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, পিটিআই জোট সরকার গঠন করতে চায় না। তবে তারা কোনো দলকে সমর্থন দিতে চাচ্ছেন। এতে করে দুর্বল একটি সরকার গঠন হবে। তাদের সমর্থন ছাড়া ওই সরকার কার্যত তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে না। এতে তারা তাদের দলের শীর্ষ নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দি ইমরান খানের মামলা ও তাকে মুক্ত করতে সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রাখতে পারবে বলে মনে করছেন দেশটির রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে এই নির্বাচনে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের প্রভাব বিস্তার করে ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে অনেক রাজনৈতিক দল অভিযোগ করেছে। তাদের ভাস্য আনুযায়ী, পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। সেনাবাহিনীর জেনারেলরা দীর্ঘসময় দেশ পরিচালনা করেছেন।
এছাড়া নির্বাচন নিয়ে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন। নির্বাচনে ফলাফল প্রকাশে দেরী করার বিষয়ে তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলেছে। এইসব বিক্ষোভ মিছিলে দেশটির পুলিশ গুলি চালিয়ে দুই রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা করেছে বলে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে।
দ্যা ডন জানিয়েছে, শনিবার দেশটির খাইবারপাতুনখাওয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মিরামশাহ সেনানিবাসে বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির এনএ-৪০ আসনে ফল প্রকাশে দেরি এবং কারচুপির অভিযোগ তুলে আসনটির প্রার্থী মহসিন দাওয়ারের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়।
এদিকে মহসিন দাওয়ারের ওপর হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলে নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনায় ইসিপিকে দায়ী করেছেন এনডিএমের প্রাদেশিক চেয়ারপারসন বুশরা গহর। সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘উত্তর ওয়াজিরিস্তানে এনডিএম চেয়ারপারসন মহসিন দাওয়ার এবং দলের কর্মীদের ওপর কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। মহসিন ও এনডিএম কর্মীরা গুরুতর আহত হয়েছেন। এর জন্য ইসিপি দায়ী।’
এর আগে শনিবার নির্বাচনে কোনো দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ অসীম মুনির বলেন, পাকিস্তানের 'স্থিতিশীল শক্তি' দরকার এবং 'নৈরাজ্য ও মেরুকরণের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।