শিরোনাম |
বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সবকিছু ঠিক থাকার পরও কখনও মনে হয় মাথাটা যেন কিছুতেই কাজ করছে না। এটা যেমন একটা সাময়িক ব্যাপার হতে পারে তেমনি আবার এর পেছনে আপনার খাদ্যাভ্যাসও দায়ি হতে পারে।
কিছু খাবার বৈজ্ঞানিকভাবে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের ‘পিস অ্যান্ড নিউট্রিশন’য়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং পুষ্টিবিদ শিনা জারামিলো, এমএস বলেন, ‘মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষমতা বাড়ানোর খাবারগুলোতে থাকে ‘ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড’, ‘মিডিয়াম চেইন ট্রাইগ্লিসারাইড’ ও ভিটামিন ডি। নারিকেল তেল এবং ‘পাম অয়েল’ থেকে মেলে ‘মিডিয়াম চেইন ট্রাইগ্লিসারাইড’। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে মস্তিষ্ক প্রখর রাখার কয়েকটি খাবার সম্পর্কে জানান হল।
স্যামন
মাউন্ট সিনাই স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের ‘নিউরোসাইন্টিস্ট’ নিকোল এম. অ্যাভেনা, পিএইচডি বলেন, “ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎকৃষ্ট উৎস হল চর্বিওয়ালা মাছ। মাছের এই চর্বি স্বাস্থ্যকর কারণ এতে ‘বেটা-অ্যামিলয়েড প্রোটিন’য়ের মাত্রা কম থাকে। ‘আলৎঝাইমার’স রোগে আক্রান্ত রোগীদের মস্তিষ্কে ‘প্লাক’ তৈরি করে এই প্রোটিন। সপ্তাহে দুবার মাছ খাওয়া উচিত, তবে এমন মাছ বেছে নিতে হবে যাতে ‘মার্কারি’ বা পারদের মাত্রা কম। এক্ষেত্রে স্যামন হল আদর্শ। কারণ এতে পারদ নেই এবং ‘ওমেগা থ্রি’ বেশি। সামুদ্রিক মাছে সমস্যা থাকলে শৈবালভিত্তিক ‘ওমেগা থ্রি সাপ্লিমেন্ট’ গ্রহণ করতে পারেন”, বলেন আরেক পুষ্টিবিদ ড্যানিয়েলা স্কোয়াব, এমএসপিএইচ, আরডি।
জামজাতীয় ফল
স্কোয়াব বলেন, ‘মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষমতা বাড়াতে এবং বয়সজনীত ক্ষয় কমাতে জাম-জাতীয় ফলগুলো বিশেষ উপকারী। এতে প্রচুর ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ থাকে, যা মস্তিষ্কের ‘ফ্রি র্যাডিকেল’ বা মুক্ত মৌলকে নিষ্ক্রিয় করে। আর এজন্যই জামজাতীয় ফলকে বলা হয় ‘নিউরোপ্রোটেক্টর’।’
ফার্মেন্টেড খাবার
স্কোয়াব বলেন, ‘মস্তিষ্ক আর অন্ত্র বেশ গভীরভাবে জড়িত। আনন্দের অনুভূতি দেওয়া হরমোন ‘সেরোটনিন’ তৈরি করে অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়া। তাই সংক্রমণ কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে অন্ত্রের ‘মাইক্রোবায়োম’য়ের ভারসাম্য নষ্ট হলে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে মস্তিষ্কে। ‘আলৎঝাইমারস’, ‘ডিমেনশিয়া’ ও অন্যান্য ‘কগনিটিভ’ রোগগুলোর ঝুঁকি বাড়ে এভাবেই। ‘ফার্মেন্টেড’ খাবার মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যে ভূমিকা রাখে কারণ তা সরাসরি ‘নিউরোট্রান্সমিটার’কে প্রভাবিত করতে সক্ষম। ‘ফার্মেন্টেড’ বা ‘প্রোবায়োটিক’ খাবারের মধ্যে আছে ‘কমবুচা’, দই, টকদই, খিমচি ইত্যাদি।
ভোজ্য আঁশ থাকে প্রচুর, এমন খাবার যেমন- ফল, সবজি, পত্রল খাবার ও শষ্যজাতীয় খাবারও অন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
কফি
সকালে কফি পান না করলে অনেকেরই মাথা কাজ করে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘কফি শুধু মস্তিষ্ককে চাঙ্গা করে তাই নয়, নতুন কোনো ঘটনাকে স্থায়ীভাবে মনে রাখাতেও এর সহায়ক ভূমিকা রয়েছে।’
কফি ‘সাইকোস্টিমুলেন্ট’ হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ নতুন তথ্য সামাল দেওয়ার গতি বাড়ায়। আর এই প্রভাব কফি পান করা শেষ হওয়ার পরও বজায় থাকে। এছাড়াও মস্তিষ্কে তৈরি হওয়া বিষাক্ত উপাদান অপসারণে ‘ক্যাফেইন’য়ের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
বাদাম ও বীজ
ম্যাগনেসিয়াম এমন একটি খনিজ যা প্রাকৃতিকভাবেই প্রকৃতি এবং মানবদেহে তৈরি হয়। প্রতিটি কোষে এর অস্তিত্ব আছে এবং শরীরের অসংখ্য দৈনিক কার্যাবলী সম্পাদনে এটি জরুরি এক উপাদান, এমনকি মস্তিষ্কের জন্যও। মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা উন্নয়নের পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়াম কাজ করে ‘ভ্যাসোডাইলেটর’ হিসেবে। রক্তনালী প্রসারিত করার মাধ্যমে এটি মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়।
‘টফু’, বাদাম, অ্যাভোকাডো, কুমড়ার বীজ ইত্যাদি মাগনেসিয়ামের উল্লেখযোগ্য উৎস। কুমড়ার বীজে আরও থাকে ‘আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটি অ্যাসিড’, ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’, দস্তা, কপার ও লৌহ যার সবগুলোই মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ডার্ক চকলেট
এতে থাকে ‘ফ্লাভানয়েড’ যা একটি শক্তিশালী ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ ও প্রদাহরোধী উপাদান। কোনো কিছু শেখা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ানো, মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ বাড়ানো, নিউরন’কে সুরক্ষিত সবকিছুর পেছনেই ডার্ক চকলেটের উপকারী ভূমিকা আছে। ৭০ শতাংশ কোকো আছে এমন ডার্ক চকলেট বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ মেগান ওয়াং, আরডি।
পানি
মস্তিষ্কের ৭৫ শতাংশই পানি। তাই শরীরে পানির অভাব থাকলে তা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমাবে সেটাই স্বাভাবিক। পানির অভাবে মনযোগ কমে, সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হয় এবং স্বল্প সময়ের জন্য স্মৃতিশক্তির কমার লক্ষণ দেখা দেয়।
ডিম
‘কোলিন’ নামক উপাদান থাকে ডিমে যা স্নায়ুকোষের ‘ট্রান্সমিশন’য়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও এই উপাদান স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের গঠন বজায় রাখতে কাজ করে। মনযোগ বাড়াতেও এর ভূমিকা আছে।