শিরোনাম |
❒ প্লাস দিয়ে তুলে ফেলা হয় নখ ধারণ করা হয় খুনের ডিডিও
চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্য শার্শার ওমর ফারুক সুমনকে হত্যার আগে প্লাস দিয়ে তার পায়ের নখ তুলে ফেলে সংঘবদ্ধ হত্যাকারী চক্রটি। একইসাথে হত্যাকান্ডের নির্মম দৃশ্য ডিডিও ধারণ করা হয়। ধারনা করা হচ্ছে নেপথ্যে থাকা চোরাকারবারী চক্রের কোনো রাঘব বোয়ালকে দেখানোর জন্যই ওই ভিডিও ধারণ।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছে সুমন হত্যাকান্ডের মাস্টার মাইন্ড বড় আঁচড়ার কামাল হোসেনসহ নতুন করে আটক ৩ জন। আটক অন্য দুজন হচ্ছে সাদীপুরের ইজাজ ও ইসরাফিল। ২০ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এসময় উদ্ধার হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, লোহার পাইপ, প্লাস ও মোবাইল ফোন।
এর আগে এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় দুটি অভিযানে হত্যা মিশনের ৫ জনকে আটক করা হয়।
শার্শার টেংরালি গ্রামের ওসমান আলী ও ফিরোজা বেগমের ছেলে ওমর ফারুক সুমন ১১ নভেম্বর তার বোনের ছেলেকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। ওই দিন রাতে তিনি বাড়িতে না ফেরায় বিভিন্নস্থানে খোঁজখবর করা হয় পরিবারের পক্ষে। কোথাও কোনো সন্ধান না পেয়ে ১২ নভেম্বর শার্শা থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর একটি নাম্বার দিয়ে মা ফিরোজা বেগমের নাম্বারে ফোন করে বলা হয় সাড়ে তিন কোটি টাকার সোনা আত্মসাৎ করার কারণে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। ওই সোনাগুলো ফেরত দিলে তার ছেলেকে ছেড়ে দেয়া হবে। সুমনের সাথে দেখা করতে চাইলে বন্দর গেটের সামনে আসতে বলা হয়। তাদের কথামতো সুমনের মামা শিমুল বিশ্বাসকে সাথে নিয়ে বেনাপোল গাজীপুরে শাহাবুদ্দিন গোলদারের তিন তলা বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় পশ্চিম পাশের কক্ষে যায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পান বেনাপোল ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বড়আঁচড়ার কামাল হোসেন, সাদীপুর গ্রামের এজাজ রহমান, শার্শার শালকোনার তরিকুল ইসলাম ও একই এলাকার পলাশ হোসেনসহ ৮/১০ সুমনকে দড়ি দিয়ে বেধে নির্মমভাবে নির্যাতন করছে। আর বলছে ‘সোনার বার কোথায় রেখেছিস সেগুলো বের করে দে।’ এরপর সুমন জানায় বাড়ির রাস্তার পাশে লুকানো ও বাড়ির বাক্সের ভিতর সোনার বারগুলো আছে। কিন্তু সেখানে লোকজন নিয়ে তল্লাশী করে ওই সোনার বার পাওয়া যায়নি। তারপর থেকে সুমনের আর কোনো সন্ধান মেলেনি। এরপর ১৬ নভেম্বর লাশ মেলে মাগুরায়। মাঠে নামে যশোর ডিবি। ডিবি পুলিশের এসআই মুরাদ হোসেন ও মফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৭ নভেম্বর পরিচালিত অভিযানে আটক হয় সুমন হত্যায় জড়িত ডালিম দাস, অঞ্জন নিয়োগি ও রিয়াজ। আর ১৮ নভেম্বর ঢাকার শাখারি বাজার এলাকা থেকে আটক করা হয় শার্শা শালকোনার বচু রুহুল আমিনের ছেলে বাপ্পারাজ ওরফে হাত কাটা বাপ্পা (২৬) ও ইউনুস আলীর ছেলে স্বপন (২৫)। এরপর ২০ নভেম্বর আটক করা হয়েছে স্বর্ণ চোরাকারবারী চক্রের সক্রিয় সদস্য বড় আঁচড়ার আব্দুর রশিদের ছেলে কামাল হোসেন, সাদীপুরের সিরাজুল ইসলামের ছেলে ইজাজ (২৪) ও রফিজুল ইসলামের ছেলে ইসরাফিল (২৯)।
ডিবি’র এসআই মুরাদ হোসেনের নেতৃত্বে এসআই শামীম হোসেন ও শফি আহম্মেদ রিয়েল ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও অভিযুক্তদের মোবাইলের তথ্যের ২০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২ টায় ঢাকার আশুলিয়া কাঠগড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের মাস্টার মাইন্ড ও প্রধান আসামি কামালসহ তার অন্যতম সহযোগী এজাজ, ইসরাফিলকে আটক করেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে বেনাপোল স্থলবন্দর বাস টার্মিনালের সামনে থেকে অপহৃত সুমনের মৃতদেহ গুমের কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার এবং ঘটনাস্থলে ঘরের ছাদ থেকে হত্যাকাজে ব্যবহৃত লোহার পাইপ ও প্লাস উদ্ধার হয়।
এ ব্যাপারে ডিবির অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকার, অভিযানিক টিমের এসআই মুরাদ হোসেন ও মফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, হত্যার আগে সুমনের পায়ের নখ প্লাস দিয়ে তুলে ফেলে আটককৃতরা। এছাড়া হত্যাকান্ডের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে তারা।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো জানায়, তাদের সিন্ডিকেটের ৩৫টি বার ৩ কেজি ওজন স্বর্ণ খোয়া যাওয়ায় স্বর্ণ চোরাকারবারী চক্রের সদস্য সুমনকে সন্দেহে আটক করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় সিন্ডিকেট প্রধান কামাল ও তার লোকজন ধরে আনে সুমনকে আর মারধর করে। সুমনের কাছ থেকে স্বর্ণ না পেয়ে তাকে হত্যা করে লাশ মাগুরার রামনগর এলাকায় ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কের পাশে ঝোপে ফেলে আসে।