শিরোনাম |
শীতকালে সবারই কম-বেশি ঠাণ্ডা লাগে। কেননা শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে জলবায়ুর তাপমাত্রা কম থাকায় এই ঠান্ডা অনুভূত হয়। আবহাওয়া থাকে শুষ্ক। যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে রোগ জীবাণু বাড়তে থাকে যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ইত্যাদির বংশবিস্তার ঘটে দ্রুত। কাশি, সর্দি, জ্বর বা ভাইরাল সংক্রমণের মতো সমস্যায় মানুষ খুব সহজেই আক্রান্ত হন। কেউ কেউ ডাক্তারের কাছে যান এবং নানা রকমের ওষুধও খান। সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকতে এমন কিছু জিনিস খেতে হবে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
শীতে যে যে রোগগুলো হয়ে থাকে- গলা ব্যথা ও কাশি, স্নায়ুরোগ, অ্যালার্জি, নাক দিয়ে রক্ত ঝরা, টনসিল সমস্যা, মশাবাহিত রোগ, টিনিটাস, সাইনোসাইটিস, মলত্যাগ সমস্যা।
শীতে সুস্থ থাকবেন যেভাবে : ভিটামিন ডি ও ভিটামিন সি গ্রহণ: প্রতিদিন সকাল ৮-১২টার মধ্যে অন্তত ২০-৩০ মিনিট শরীরে রোদ লাগালে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ হবে। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি হাঁড় ও দাঁত মজবুত থাকবে। ভিটামিন সি শরীরের জমা থাকে না বলে প্রতিদিনই এই ভিটামিন গ্রহণ করতে হয়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা শরীরে জীবাণুর সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন পানীয় : আদা পানি, তুলসি চা, লেবু-মধু পানি, গরম মসলার চা, তেজপাতা চা সহ ওষুধি গুণসম্পন্ন বিভিন্ন হারবাল টি শীতের সময় দিনে ৩-৪ কাপ খেলে শরীর রোগমুক্ত থাকে ও বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে যায়।
ভাপ নেওয়া : শীতে সাইনোসাইটিসসহ সর্দি, হাঁচি-কাশির সমস্যায় খুবই কার্যকরী হাইড্রোথেরাপি হলো ভাপ নেওয়া। গরম পানিতে দুই টুকরো মেনথল বা সামান্য লবঙ্গ, গোলমরিচ মিশিয়ে ভাপ নিলে সাইনাসের শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে সর্দি আকারে বের হয়ে আসে ও সাইনাস পরিষ্কার হয়ে যায়। এতে শ্বাস নিতে আরাম হয়।
স্টিম বাথ বা গরম পানিতে গোসল : শীতে মাঝে মধ্যে স্টিম বাথ নিলে রোমকূপ খুলে যায় ও শরীরে ঘর্মাক্ত হয়ে বর্জ্য বের হয়ে আসে। এতে শরীর আরও সতেজ ও বর্জ্যমুক্ত হয়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে ওঠে ও জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়া শারীরিক বিভিন্ন প্রদাহ বা জয়েন্টের সমস্যা কমাতেও এটি উপকারী।
আদা চা : গলা খুসখুসে ভাব দূর করতে ব্যবহার করা হয় আদা চা। ২ কাপ জলে আদা কুচি দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলেই খুসখুসে ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ আদা-মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান গলার গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া কমায় এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
লেবু ও মধুর মিশ্রণ : সমপরিমাণ লেবুর রসে মধুর মিশ্রণ গলার ভিতরের সংক্রমণ কমায়।
কলা : কলা একটি নন-অ্যাসিডিক খাবার, যা গলা খুসখুসে ভাব কমাতে বিশেষভাবে কার্যকরী। এ ছাড়াও কলা একটি লো-গ্লাইসেমিক খাবার, যা ঠান্ডা-সর্দি ভাব কমায়।
সিদ্ধ গাজর : গাজরকে বলা হয় সুপার ফুড। গাজরের ভিটামিন ও মিনারেলস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। স্বাভাবিক কারণেই চট করে সর্দি-কাশির মতো রোগগুলো ধরে না। তবে ঠান্ডা লাগলে কাঁচা গাজর না খেয়ে সেদ্ধ করেই খাওয়া উচিত।
ডিমের সাদা অংশ : ঠান্ডা লেগে গলায় ব্যথা হওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এই সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে ডিমের সাদা অংশ। কারণ ডিমের সাদা অংশ গলার ভেতরের গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া কমায় এবং সংক্রমণ দূর করে।
চিকেন স্যুপ : সর্দি ও খুসখুসে কাশি কমাতে গরম পানীয়ের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। এই তালিকার মধ্যে পড়ে চিকেন স্যুপও। কারণ চিকেন স্যুপে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা গলা খুসখুসের জন্য দায়ী ভাইরাস এবং মিউকাস কমায়।
জ্বর-মাথাব্যথা সর্দি-কাশি কমানোর আরো কিছু ঘরোয়া উপায় আছে যেমন-
পেঁয়াজ : সমপরিমাণে পেঁয়াজের রস, লেবুর রস, মধু এবং পানি একসঙ্গে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। এই মিশ্রণটা হালকা ঠান্ডা করে দিনে ৩-৪বার খান। এছাড়া কাঁচা পেঁয়াজও চিবিয়ে খেতে পারেন। সর্দি-কাশি কমে যাবে।
হলুদ : হলুদে রয়েছে কারকুমিন যা বুক থেকে কফ, শ্লেষ্মা দূর করে বুকের ব্যথা কমায়। এর অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান গলা ব্যথা, বুকের ব্যথা দূর করে। এক গ্লাস হালকা গরম জলে এক চিমটি হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে প্রতিদিন কুলকুচি করুন। আরাম পাবেন। এছাড়া এক গ্লাস দুধে অর্ধেক চা চামচ হলুদগুঁড়ো মিশিয়ে ফোটান। ২ চা চামচ মধু ও সামান্য গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে মিশ্রণটি দিনে ২-৩বার খান। উপকার পাবেন।
লেবু এবং মধু : লেবু জলে ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে খান। মধু শ্বাসযন্ত্রের ব্যাকটিরিয়া ধ্বংস করে, বুক থেকে কফ দূর করে গলা পরিষ্কার রাখে।
গরম জলের ভাপ : ফুটন্ত গরম জলে মেন্থল মিশিয়ে নিন। এবার মাথার উপর টাওয়েল চাপা দিয়ে বড় দম নিয়ে গরম জলের ভাপ নিন। দিনে ২ বার অন্তত ১০ মিনিট করে এরকম করুন। বুকে জমে থাকা কফ খুব সহজেই বেরিয়ে আসবে।
লবণ পানি : বুকে জমা কফ দূর করতে, দিনে দু-তিনবার গরম লবণ পানি দিয়ে গার্গল করুন। আরাম পাবেন। লবণ শ্বাসযন্ত্র থেকে কফ দূর করতে সাহায্য করে।