পাইকগাছায় মন্দিরের কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন রাড়ুলী দক্ষিণপাড়া গ্রামের সনাতন ধর্মের শতাধিক পরিবার। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে হামলা মামলার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশাসন, থানা পুলিশ ও পূজা উদযাপন পরিষদ সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। গত ৫ মে হামলার ঘটনায় দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টা-পাল্টি মামলা হয়। এ ঘটনার জের ধরে শিবপদ পক্ষ লুটপাটের মামলা দিয়ে বিকাশ পক্ষকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার লোকজন। সৃষ্ট এ বিরোধ নিষ্পত্তি করতে না পারলে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন এলাকাবাসী। সূত্র জানায়, উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দিরের কর্তৃত্ব নিয়ে দু’টি পক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। মন্দিরের আওতায় এলাকার ৮৭ পরিবার সনাতন ধর্মের মানুষ বসবাস করেন। দীর্ঘদিন মন্দিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন শিবপদ সরকার। শিবপদ-সত্যনন্দ পক্ষে রয়েছে ২২ পরিবার। অপরদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে মন্দিরের কর্তৃত্ব রয়েছে বিকাশ-পার্থ সরকারের অনুকূলে। তাদের অনুকূলে রয়েছে ৬৫ পরিবার। ফসলী জমি ও পুকুরসহ মন্দিরের বেশ কিছু সম্পত্তি রয়েছে। যার কর্তৃত্ব নিয়ে বেশ কিছুদিন বিরোধ চলে আসছে। বিরোধের কারণে বহু পরিবার মন্দিরে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা অর্চনা করতে পারে না। বিরোধ নিয়ে দু’পক্ষই আদালতে মামলা করেছে।
থানা পুলিশ ও প্রশাসনের সাথে একাধিক শালিশী বৈঠক হলেও এখনো পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কোন সমাধান হয়নি। ফলে দু’পক্ষের বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। এর জের ধরে গত ৫ মে সন্ধ্যার দিকে এপিসি প্রাইমারী স্কুলের পিছনে শিবপদ পক্ষের লোকজন বিকাশ পক্ষের লোকজনের উপর হামলা করে। এতে তারা কুপিয়ে বিকাশ পক্ষের ৮জনকে গুরুতর জখম করে। এ ঘটনায় বিকাশ বাদী হয়ে শিবপদ পক্ষের ১৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করে। যার নং ১৩/১৪৫, তাং ০৬/০৫/২০২৩ ইং। এ ঘটনায় সুচিত্রা ওরফে পুতুল বাদী হয়ে বিকাশ পক্ষের ৯জনকে আসামি করে পাল্টা মামলা করে। এ ঘটনার জের কাটতে না কাটতে লুটপাট মামলা দিয়ে বিকাশ পক্ষের হয়রানি করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে শিবপদ পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বিকাশ পক্ষের লোকজন।
মন্দির কমিটির সাবেক সম্পাদক দিলিপ সরকার জানান, সেপ্টেম্বর (২০২২) থেকে মন্দিরের কর্তৃত্ব আমাদের অনুকূলে রয়েছে। শিবপদ পক্ষ আমাদের উপর হামলা করে ক্ষান্ত হয়নি। তাদের অনুসারী সন্ধ্যা রানী সরদার লুটপাট মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করছে। হয়রানি বন্ধ না হলে এলাকা থেকে চলে যাওয়া ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানান নিলিমা সরদার।
সন্ধ্যা রানীর প্রতিবেশী গণেশ সরকার জানান, আমরা তার পাশেই বাস করি, কিন্তু ঘটনার দিন রাতে এমন কোন কিছু টের পাইনি। দুখীরাম জানান, লুটপাট হলে শব্দ হয়, চিৎকার হয়, তেমন কিছুই আমরা শুনতে পাইনি।
ক্যাম্প ইনচার্জ ইমরান হোসেন জানান, সোমবার সকাল ১১ টায় ৯৯৯ ফোনের ভিত্তিতে আমি সন্ধ্যা রানীর বাড়িতে যাই। তিনি অভিযোগ করেন ২১ মে রাত ২ টার দিকে ভয় দেখিয়ে তাকে জিম্মি করে ৪০ মণ ধান ও স্বর্ণালংকারসহ তার বাড়ি থেকে বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে সন্ধ্যা রানীর অভিযোগ এবং তার কথার মাঝে কিছুটা গরমিল রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে বলে ক্যাম্প পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান। এ দিকে এ ধরনের হয়রানি বন্ধ ও বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদসহ সর্বমহলের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।