চাহিদার তুলনায় ঘাটতি না থাকলেও যশোরের বাজারে কমছে না পেঁয়াজের দাম। উল্টো দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমদানি ছাড়া দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে দাবি আড়ৎদারদের। খুচরা পর্যায়ে যশোরের বাজারগুলোতে গত দুই সপ্তাহে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই। কিছু ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুদ করে দাম বৃদ্ধি করছে।
যশোরের আড়ৎদারদের দাবি, পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে, দাম বাড়ছে। আমদানি বন্ধ থাকলে সামনে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়ার আশংকার কথা জানান তারা। তবে খুব শিঘ্রই পেঁয়াজ আমদানি হতে পারে বলে শুনছেন তারা। আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাজারে ঢুকলেই দাম কমতে পারে বলেও মন্তব্য তাদের।
আড়ৎদাররা জানান, দেশের কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে গত ১৬ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে রেখেছে সরকার। এতে দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। আমদানি বন্ধ থাকায় গত তিন সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
তবে, অভিযোগ উঠেছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করতেই মজুদ করে রেখেছেন। তারাই এখন সরকারের আমাদানির খবরে বাজারে পেঁয়াজ আনতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ফরিদপুরের মধুখালী, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও পাবনাসহ বেশকিছু এলাকা থেকে দেশি পেঁয়াজ সরবরাহ হয়। ওই সব এলাকার ব্যবসায়ীরাই মূলত পেঁয়াজ মজুদ করে রাখেন বলে যশোরের কয়েকজন আড়ৎদারদের মন্তব্য।
সোমবার যশোরের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। তবে পাইকারি বাজারে দাম ছিল ৬৮ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। গত সপ্তাহে খুচরা বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।
যশোর বড় বাজারের পাইকারি এজেন্ট গোবিন্দ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী গোবিন্দ সাহা বলেন, বাজারে সোমবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। তবে দেশি পেঁয়াজ একটু বেশি আসতে শুরু করেছে। কারণ সরকার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে, এ সংবাদে পেঁয়াজ মজুদকারীরা বাজারে পেঁয়াজ আনতে শুরু করেছেন। অন্যদিনের তুলনায় আড়তে এখন পেঁয়াজ একটু বেশি উঠছে। আমদানি পেঁয়াজ আসলেই দাম কমে যাবে বলে মন্তব্য তার।
তবে হুসাইন মহসিন নামে একজন ক্রেতা বলেন, পেঁয়াজের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। কোনোভাবেই কমছে না দাম। সরকারের উদাসীনতার জন্যই এই দাম বাড়ছে বলে মন্তব্য তার। এ কারণে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই প্রশাসনের বাজার তদারকি দরকার বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
যশোর বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী জাফর শেখ বলেছেন, বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম কে বৃদ্ধি করছে বা কারা মজুদ করছে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
পারভিনা বেগম নামে একজন ক্রেতা বলেন, সরকারের তথ্য অনুযায়ী দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত আছে। তাছাড়া এখন পেঁয়াজের মৌসুম চলছে। ফলে এ মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম এত বেশি থাকার কোনো কারণ নেই।
তিনি আরও বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি জেনেছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ায় এবং সরবরাহ কমার অজুহাতে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে যেখানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা কেজি দরে, যা ঈদের আগে ছিল ২৫ টাকা কেজি। ফলে দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন তাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষ।
ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, ‘ঈদের আগে আমরা ২৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতাম এখন ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি করছি। গত সপ্তাহে এর দাম ছিল ৭০ টাকা।’