gramerkagoj
শনিবার ● ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
লালমনিরহাটে গোবরের লাকড়ি তৈরিতে ঝুঁকছে গ্রামীণ বধূরা
প্রকাশ : বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪, ০৩:২৮:০০ পিএম
আজিজুল ইসলাম বারী, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
GK_2024-02-14_65cc781f812f0.jpeg

এক সময়ে গ্রামবাংলার আড়া-জঙ্গলের লতা-পাতা কুড়িয়ে জ্বালানি হিসেবে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো। এখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে গ্রামীণ আড়া-জঙ্গল নিধন করে ভূমি তৈরি করা হচ্ছে। আর ওই ভূমিতে ফসল উৎপাদনসহ বসবাস শুরু করেছে ভূমি-জঙ্গল মালিকরা। এ কারণে বিলুপ্তির পথে বনাঞ্চল বা আড়া-জঙ্গল।
এর ফলে নিম্ন আয়ের মানুষদের রান্না কাজে দেখা দেয় জ্বালানি খড়ির সংকট। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূরা নিজের গাছের খড়ি বা গ্যাস দিয়ে রান্না করতে পারলেও চরম বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের বধূরা। তারা গ্যাস বা গাছের কাঠ-খড়ি ক্রয় করতে না পেরে শুরু করেছেন গৃহপালিত গরুর গোবর সংগ্রহে।
সেই গোবর দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে লাকড়ি-খড়ি। সাশ্রয়ী জ্বালানী ব্যবহারের জন্য গরুর গোবরের তৈরি লাকড়ি লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার গ্রামাঞ্চলের গরিব গৃহবধূদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাই সম্প্রতি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গরুর গোবর দিয়ে লাকড়ি তৈরির ধুম পড়েছে।
জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ঘুরে দেখা যায়, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারের বধূরা গৃহপালিত গরুর গোবরের লাকড়ি তৈরিতে মেতে উঠেছেন। গ্রামীণ এই বধূরা সকালে ঘুম জেগে গোয়াল ঘরে প্রবেশ করেন। ডালি ভর্তি বের করেন গোবর। গোবরের সাথে মিশ্রিত করা হয় আংশিক পরিমাণের ধানের তুষ। এরপর ২-৩ ফুট লম্বা বাঁশের চিকন লাঠি আকারের বা পাটের শলা দিয়ে বধূরা তৈরি করেছেন লাকড়ি।
এসব তৈরিকৃত কাঁচা লাকড়িগুলো শুকানোর জন্য বাড়ির উঠানে রোদে দাঁড় করে রাখা হয়। ২-৩দিন পরই শুকিয়ে যায় লাকড়িগুলো। এভাবে নিত্যদিনের তৈরি শুকনো লাকড়ি মজুদ রাখা হয় নিজ ঘরে।
কালীগঞ্জের সুকানদিঘী এলাকার গৃহবধূ আরমিনা বেগম ও শরিফন জানান, প্রতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে আমরা গোবরের খড়ি তৈরি করি। নিত্যদিনে চুলায় জ্বালিয়ে অতিরিক্ত খড়ি মজুদ রাখি। যা বর্ষা মৌসুমে ব্যবহার করা হয়।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট গ্রামের গৃহিনী রেজিয়া বেগম বলেন, গ্যাস ও খড়ির অনেক দাম হওয়ায় আমরা গোবরের লাকড়ি দিয়ে রান্নাবান্নার কাজ সারি। তবে গোবরের তৈরি এই লাকড়ি ব্যবহারে আমাদের কোনো ক্ষতি হয় না। কাঁচা গোবরে কিছুটা গন্ধ থাকলেও লাকড়ি শুকানোর পর আর গন্ধ থাকে না।
তিস্তা নদী এলাকা রাজপুর গ্রামের গৃহিনী আলেমা বেগম বলেন, আমরা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে এসব লাকড়ি বাজারেও বিক্রি করে উপার্জন করতে পারছি।
এ বিষয়ে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট এ কে এম শামছুল হক বলেন, জ্বালানি হিসেবে গাছ না কেটে গোবর ব্যবহার এটি পরিবেশের জন্য ভালো। কিন্তু পাশাপাশি জৈব সার হিসেবে অধিক ব্যবহৃত গোবরের যেন সংকট না পড়ে সে দিকটাও ব্যবহারকারীদের ভাবতে হবে। একটি ভালোর জন্য যেন আরেকটি হুমকির মুখে না পড়ে।
লালমনিরহাট কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খবির হোসেন জানান, গোবর মূলত ক্ষেতের জৈব সার হিসেবে অধিক হারে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে খড়ি ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গোবর দিয়ে তৈরি লাকড়ি জ্বালানি হিসেবে অনেকে ব্যবহার করছেন। দিন দিন এর চাহিদাও বাড়ছে। তবে এটি বাণিজ্যিক ভাবে চালু হলে কৃষক জৈব সারের সংকটে পড়বে। আর কৃষিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়বে। যা শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে। তাই গোবর দিয়ে লাকড়ি তৈরিতে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

আরও খবর

🔝