gramerkagoj
শনিবার ● ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
শুধু শ্রমিক নয়, গুদামগুলোতে পরিবহন সরবরাহেও সেই লোটাস এন্টারপ্রাইজ

❒ খাদ্য নিয়ন্ত্রকের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধিতে অসন্তোষ

প্রকাশ : সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর , ২০২২, ০৮:০৮:৫৬ পিএম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম:
1662386968.jpg
খুলনার লোটাস এন্টারপ্রাইজের অনুকুলে ৪ দফা লোড আনলোড শ্রমিক সরবরাহ চুক্তি বৃদ্ধি ছাড়াও আরো তথ্য মিলেছে। যশোরে খাদ্যগুদামগুলোতে পরিবহন সরবরাহের কাজটি রয়েছে ওই একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দখলে। মজার ব্যাপার, একই রকম মনগড়া হাস্যকর অজুহাত খাড়া করে পরিবহন সরবরাহের চুক্তির মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। টেন্ডার মেয়াদ শেষ হলেও যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু নতুন টেন্ডার আহবান না করে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করে চলায় চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সেই ২০১৯ সালের দেয়া দরপত্রে খুলনার লোটাস এন্টারপ্রাইজকে দুটি টেন্ডারে বহাল রাখা হয়েছে। বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকদের অভিযোগ, অজ্ঞাত গোপন কোনো কারণে লোটাস এন্টারপ্রাইজ প্রীতি চালিয়ে যাচ্ছেন যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। এ ব্যাপারে তারা খাদ্য বিভাগের উপর মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। যশোর জেলার ১০ খাদ্য গুদামের জন্য শ’খানেক শ্রমিকের প্রয়োজন হয় ধান চাল গম ক্রয় মৌসুমে। জেলার অভ্যন্তরীণ লোড আনলোড এবং গুদামের প্রতিদিনকার চলমান লোড আনলোডের জন্য যশোর সদর, মণিরামপুর, কেশবপুর, রুপদিয়া, খাজুরা, নওয়াপাড়া, ঝিকরগাছা, নাভারণ, বাগআঁচড়া ও চৌগাছা গুদামে ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী ৬/৭ জন থেকে শুরু করে ৩০ জন পর্যন্ত শ্রমিকের প্রয়োজন হয় সংগ্রহ মৌসুমে। খাদ্য অধিদপ্তরের বিধি অনুযায়ী প্রতি দু'বছর পর পর এই শ্রমিক সরবরাহ করার জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়। সেই আলোকে টেন্ডার আহবান করা হয় ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে খুলনার লোটাস এন্টারপ্রাইজকে কাজ দেয়া হয়। ২০১৯-২০২০ ও ২০২০ -২০২১ অর্থ বছরের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয় মেসার্স লোটাস এন্টারপ্রাইজের মালিক সেলিম রেজাকে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে কাজ পান সেলিম রেজার লোটাস এন্টারপ্রাইজ। সে হিসেবে ২০২১ সালের ৩০ জুন তার সাথে ঠিকাদারি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের। লোটাস এন্টারপ্রাইজ শ্রমিক সরবরাহ ঠিকাদারী কার্যক্রম পরিচালনা করার মধ্যেই ২০২০ সালের ২১ জুলাই খাদ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালক স্বাক্ষরিত স্মারকপত্র আসে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের কাছে। ওই স্মারকপত্রে বলা হয় যে সকল স্থাপনায় শ্রম ও হস্তার্পণ (হ্যান্ডেলিং) ঠিকাদারের মেয়াদ শেষ হয়েছে সে সব স্থাপনার জন্য নতুন করে ২ বছরের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করার কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। চলমান ঠিকাদারের মেয়াদ কমপক্ষে ৩ মাস থাকার আগে থেকেই নতুন ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে এবং দরপত্র আহবান সংক্রান্ত কার্যক্রম অধিদপ্তরকে অবগত করতে হবে। কিন্তু যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এ বেলায় লোটাস এন্টারপ্রাইজের সকল মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও বিধি মানেননি। মহা পরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মার্চ মাসেই ওই নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়া হওয়ার কথা ছিল। অথচ লোটাস এন্টারপ্রাইজের সাথে চুক্তি অনুযায়ী মাত্র ৯০ দিন চুক্তি বৃদ্ধির একটি ক্ষমতাকে পুঁজি করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ৪ দফায় সময় বাড়িয়েছেন। এ বিষয় নিয়ে দৈনিক গ্রামের কাগজে সংবাদ প্রকাশিত হলে তুমুল হৈচৈ পড়ে খাদ্য গুদামগুলোতে। শ্রমিক ও অনেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সংবাদে সন্তোষ প্রকাশ করে দৈনিক গ্রামের কাগজকে ভুয়সী প্রশংসা করেন। শ্রমিকরা জোর দিয়ে জানিয়েছেন, এক বছরের বেশি সময় শ্রমিক সরবরাহ টেন্ডার না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিভিন্ন গুদাম কেন্দ্রিক সব শ্রমিক। আবার অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালিক জানিয়েছেন,  অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বছরের পর বছর সুবিধা নিচ্ছে লোটাস এন্টারপ্রাইজ। ওই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর আরো তথ্য মিলেছে, লোটাস এন্টারপ্রাইজের দখলে রয়েছে যশোর জেলার ১০ খাদ্য গুদামে পরিবহন সরবরাহ ঠিকাদারী কাজটিও। ওই পরিবহন সরবরাহ ঠিকাদারী কাজটিরও মেয়াদ শেষ হয়েছে বেশ আগেই। বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দফায় দফায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে অনুরোধ জানালেও ওই পরিবহন সরবরাহে নতুন করে টেন্ডার আহবান করা হয়নি। উল্টো ওই লোটাস এন্টারপ্রাইজের সাথে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডুর সাথে কথা বললে তিনি গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, নতুন করে টেন্ডার হয়নি সত্য। লোটাস এন্টারপ্রাইজ শ্রমিক সরবরাহ কাজ করছে ২০১৯ সালের টেন্ডারে। তাদের ওই টেন্ডারের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরে। মূলত নানা কর্মব্যস্ততার কারণেই টেন্ডার আহবান করা যায়নি। এছাড়া পরিবহন সরবরাহ টেন্ডার পায় ওই লোটাস এন্টারপ্রাইজ। সাথে যশোরে আসলাম নামে একজন ঠিকাদার রয়েছেন। ধান চাল সংগ্রহ অভিযানসহ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কোনো কারণে লোটাস এন্টারপ্রাইজ অপারগতা প্রকাশ করলে সাপোর্ট হিসেবে আসলাম এন্টারপ্রাইজ পরিবহন সরবরাহের কাজ করবে। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ায় চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে উপর মহলের সাথে আলোচনা করে। তিনি গত ডিসেম্বরে যোগদান করেছেন, তার সময়ে বেশি কর্মব্যস্ততাও চলছে। যে কারণে টেন্ডার আহবানে যে জনবল, অফিসিয়াল সময় দেয়া দরকার সেটা পাওয়া যায়নি। তিনি উর্ধŸতনদের সাথে কথা বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দ্রুতই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করবেন। এছাড়া শ্রমিক সরবরাহ ও পরিবহন ঠিকাদারী দখলে রাখা  প্রতিষ্ঠান খুলনার লোটাস এন্টারপ্রাইজের মালিক সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। তার প্রতিনিধি ও লোটাস এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার খ্যাত ইবাদুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি এলোমেলো তথ্য দেন এবং অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে যান। সেলিম রেজার ফোন নাম্বার তার জানা নেই বলেও হাস্যকর কথা বলেন।

আরও খবর

🔝