gramerkagoj
শনিবার ● ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করা সেই মারুফা এবার জাতীয় দলে
প্রকাশ : সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর , ২০২২, ০৩:১২:৫৭ পিএম
ক্রীড়া ডেস্ক::
1662369197.jpg
মারুফা আক্তার, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ঢেলাপীর এলাকার বর্গাচাষী মো. আইমুল্লাহ’র ছোট মেয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে ভালো ফুটবল খেললেও ষষ্ট শ্রেণীতে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলতে শুরু করেন ক্রিকেট। সেই থেকে ভালো লাগা, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিকেএসপিতে, খেলেছেন বিভিন্ন ক্লাব ও দলে। এবার সেই মারুফাই সুযোগ পেলেন জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে। ২০২১ সালে করোনাকালীন সময়ে ক্রিকেট খেলা বন্ধ থাকায় বাবা আলিমুল্লার সঙ্গে বর্গা নেয়া জমিতে হালচাষ করার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় আসেন মারুফা।অভাব-অনটনের সংসারে দুবেলা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাই যেখানে সংগ্রামের মতো, সেখানে ক্রিকেট খেলা বিলাসিতা মনে হয়েছিল মারুফার। করোনাকালীন সময়ে পারিবারিক দূরবস্থায় ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার কথাও ভাবলেও এগিয়ে আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ফিরে যান আগের ঠিকানা বিকেএসপিতে। বছর না পেরোতেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৯ বছর বয়সেই ডাক পেলেন জাতীয় দলেও।টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের জন্য রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ১৫ সদস্যের এই দলে নতুন মুখ হিসেবে ডাক পেয়েছেন ১৯ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার মারুফা। সুখবরটা বড় ভাই আল-আমিনকে সবার আগে জানিয়েছেন মারুফা। এই খবরে মারুফার গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুরে বইছে আনন্দের বন্যা।মারুফা বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। বলে বোঝাতে পারব না। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি এটাই শেষ না। এখন আমার লক্ষ্য ১১ জনে থাকা এবং ভালো খেলা। অভাব অনটনের কারনে করোনাকালে ক্রিকেট খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। তবে বিসিবির সহযোগিতায় আজ জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছি। বিসিবির অনুদান না পেলে করোনার প্রথম ওয়েভের সময় থমকে যেত স্বপ্ন। বিসিবিকে আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ।’‘ছোট বেলা থেকেই কৃষিকাজে বাবাকে সাহায্য করতাম। করোনাকালে বাড়িতে অবস্থান করায় পুরা টা সময় বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করেছিলাম। সেই সঙ্গে আমার বড় ভাই আল-আমিনের সাথে পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে নিয়মিত অনুশীলন করি।’তিনি বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই কৃষিকাজে বাবাকে সাহায্য করতাম। করোনাকালে বাড়িতে অবস্থান করায় পুরা টা সময় বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করেছিলাম। সেই সঙ্গে আমার বড় ভাই আল-আমিনের সাথে পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে নিয়মিত অনুশীলন করি। ২০১৮ সালে আমি বিকেএসপিতে সুযোগ পাই। সেখানে দুই মাস ক্যাম্প করি। ক্যাম্প শেষে খুলনার ইমতিয়াজ হোসেন পিলু স্যার আমাকে ২০১৯ সালে মোহামেডানের হয়ে প্রিমিয়ার লীগে খেলার সুযোগ করে দেন। এরপর স্যার আমাকে খুলনা দলে নেন। অনূর্ধ্ব-১৮ দলে সুযোগ পাই।’মারুফার বাবা আলিমুল্লাও দারুণ খুশি। তিনি বলেন, ‘নিজের জমি বিক্রি করে দিয়েছি। শ্বশুরের দেওয়া বাড়িতে থাকি। অন্যের জমি বর্গা চাষ ও মজুরী করি। কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছি। খেলার প্রতি মারুফার একনিষ্ঠ ভালোবাসা। সে জাতীয় দলে খেলবে অনেক বড় হবে এমনটাই স্বপ্ন দেখে আসছি। সবাই দোয়া করবেন আমার মেয়েটার জন্য, সে যেন অনেক বড় খেলোয়ার হতে পারে।’করোনা মহামারী শেষে ওয়ানডে ফরম্যাটের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বাজিমাত করেন মারুফা। বিকেএসপির হয়ে ১১ ম্যাচে ৩.২১ ইকোনমিতে ২৩ উইকেট নেন তিনি। এর মধ্যে এক ম্যাচেই নেন ৭ উইকেট। দারুণ বোলিংয়ের স্বীকৃতি হিসেবে জিতে নেন টুর্নামেন্টের ‘বেস্ট প্রমিজিং প্লেয়ার’-এর পুরস্কার।তার পথ ধরেই ২৮ সদস্যের জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়ে সবাইকে অবাক করে দেন মারুফা। ফিটনেস টেস্টে তোলেন সর্বোচ্চ পয়েন্ট তিনি। গত মাসে সিলেটে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি সংস্করণের জাতীয় লিগেও মুগ্ধতা ছড়ান মারুফা। সিলেট বিভাগের শিরোপা জয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। চার-ছক্কার ফরম্যাট হলেও ৭ ম্যাচে মাত্র ২.৭৬ ইকোনমিতে ১৩ উইকেট নেন তিনি, যা আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।সংযুক্ত আরব আমিরাতে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই শুরু হবে বাংলাদেশের, সূচি চূড়ান্ত হয়েছে আগেই। ক্যাম্প করার জন্য আগেভাগে সেখানে যাবে লাল-সবুজের মেয়েরা। ৮ সেপ্টেম্বর যাত্রা করবে বাংলাদেশ। এটাই হবে মারুফার প্রথম বিদেশ সফর।এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের মেয়েদের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র। 'বি' গ্রুপে আছে থাইল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, পাপুয়া নিউগিনি ও স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাত। দুই গ্রুপের শীর্ষ দুই দল ফাইনাল খেলবে। ২০২৩ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই দুই দলই সুযোগ পাবে।

আরও খবর

🔝