gramerkagoj
শনিবার ● ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
৭ মাসেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ যৌনকর্মী লিলি বেগমের
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ৭ জুন , ২০২২, ০৩:১৬:৩৭ পিএম
রাজবাড়ী প্রতিনিধি: :
1654593432.jpg
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতিদিয়ার বে-সরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মুক্তি মহিলা সমিতি (এমএমএস) এর কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ও সাবেক যৌনকর্মী লিলি বেগম (৩৮) নারীনেত্রী নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ৭মাস। ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর দুপুর থেকে লিলি বেগম নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর যৌনকর্মীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতেন। এছাড়াও সে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর সাবেক যৌনকর্মী এবং বাড়িওয়ালী।তার সন্ধানের দাবিতে ২০২১ সালের (১১ ডিসেম্বর) শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় দৌলতদিয়া ক্যানালন ঘাট এলাকায় রেল লাইনের পাশে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করে যৌনকর্মী, নিখোঁজ লিলির পরিবারের সদস্য, সমাজকর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ।দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, লিলি বেগম দৌলতদিয়া যৌনকর্মীদের অভিভাবক ছিলেন। যৌনকর্মীদের শিক্ষা এবং অধিকার নিয়ে কাজ করতেন। অথচ আজ প্রায় ৩মাস লিলি বেগম নিখোঁজ থাকলেও তার কোনো সন্ধান দিতে পারেনি প্রশাসন। রহমান মন্ডল প্রশাসনের কাছে দাবি তুলে বলেন, অতিসত্বর লিলি বেগমের সন্ধানে গুরুত্ব দিন। যৌনকর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে, লিলির সন্ধান দিয়ে আমাদেরকে আশ্বস্ত করুন।কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থার (কেকেএস) প্রকল্প পরিচালক আমজাদ হোসেন ফকীর বলেন, প্রায় ৭মাস ধরে প্রশাসনের কাছে ধরণা ধরেও কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না লিলির। প্রশাসন যদি এ বিষয়ে তৎপর না হয় তাহলে সকল এনজিওকর্মীদের নিয়ে বড় কর্মসূচি ডাক দেয়া হবে।মুক্তি মহিলা সমিতির প্রকল্প পরিচালক আতাউর রহমান মুঞ্জু বলেন, লিলি বেগম দির্ঘ দিন মুক্তি মহিলা সমিতির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল।তাকে দ্রুত উদ্ধারের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর সংস্থার পক্ষ থেকে লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়েছে।কিন্ত ৭মাস হলেও তার কোন সন্ধান পাইনি। প্রশাসনের নিকট নিখোঁজ লিলি বেগমকে দ্রুত উদ্ধারের দাবী জানাচ্ছি।মুক্তি মহিলা সমিতি (এমএমএস) নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম, বলেন, লিলি খুবই ভালো একজন মানুষ সে মুক্তি মহিলা সমিতির একজন দক্ষকর্মী।সে সব সময় যৌনকর্মীদের ভালো মন্দ নিয়ে কাজ করেছেন।অসহায় মেয়েদের পাশে থেকে কাজ করেছেন।কিন্ত আজ সেই মানুষটিই নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় ৭মাস হয়েছে। কিন্তু তার কোন সন্ধান আজও পাইনি।সে বেচেঁ আছে নাকি তাকে কেউ হত্যা করেছে সে বিষয়েও জানতে পারলাম না।লিলি বেগমের নিখোঁজ এর ঘটনায় গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন নিখোঁজের ভাগিনা মো. শাফি ইসলাম। তিনি জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পূর্বআমখাওয়া গ্রামের মো. মিরাজুল হকের ছেলে।নিখোঁজের ভাগিনা সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেন, আমার সাথে খালা প্রতিদিন মোবাইলে কথা বার্তা বলে। গত ১০ নভেম্বর বিকেল ৪ টার দিকে আমি গ্রামের বাড়ী থেকে তার মোবাইলে বার বার কল করলে ফোনটি বন্ধ পাই। ১১ নভেম্বর নিখোঁজের খোঁজে জামালপুর জেলা হতে দৌলতদিয়ায় লিলি বেগমের বাড়ী আসলে ভাড়াটিয়ারা জানায়, বুধবার (১০ নভেম্বর) দুপুর ১ টার দিকে তার কথিত স্বামী সামছু মাষ্টার পাড়ার আব্দুল লতিফ শেখের বাড়ীতে দাওয়াত খাওয়ার কথা বলে বের হয়। এবং গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনদের বাড়ী ও সম্ভাব্য সব ঠিকানায় খোঁজ নিয়েও তার সন্ধান না পেয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।লিলি বেগম নিখোঁজের এক মাস ৪দিন পরে তার মেয়ের জামাই মোঃ মুরাদ হোসেন বাদি হয়ে গত ১৪/১২/২০২১ তারিখে রাজবাড়ী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।মামলা টি আমলে নিয়ে বিজ্ঞ আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইকে) তদন্তের দায়ীত্ব দেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খান মোঃ জহুরুল হক বলেন, নিখোঁজ লিলে বেগের কথিত স্বামী লতিফসহ ৩জনের বিরুদে  বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।রাজবাড়ী আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পিআইবিকে তদন্ত ভার দেন।এ বিষয়ে নিখোঁজের কথিত স্বামী লতিফের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লিলি বেগমের সাথে তার দীর্ঘ দিনের ভালবাসার সম্পকের্র সুবাদে আমার বাড়ী পারিবারিক দাওয়াত খেতে আসে। খাবার শেষে সে চলে যেতে চাইলে আমার ছেলে তাকে রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে আসে। এর পর থেকে আমিও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাই।গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) স্বপন কুমার জানান, জানান, থানায় লিলি বেগম নিখোজের ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে সনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে তার ছবি পুলিশ বিভাগের সকল থানায় প্রেরণ করা হয়েছে।পিবিআই তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মোঃ  সালাউদ্দিন জানান মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাটির প্রতিবেদন দেয়ার চেষ্টা করবো।

আরও খবর

🔝