gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ৯ মে ২০২৪ ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
ভৈরব পাড় বালিয়াডাঙ্গা ও বোলপুর অংশে মাটি নিয়ে বাণিজ্য চলছেই
প্রকাশ : শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি , ২০২৩, ০১:৩৮:০২ এ এম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম ::
GK_1672947734.jpg
পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অন্ধকারে রেখে ভৈরব পাড় যশোরের বালিয়াডাঙ্গা মালোপাড়া ও বোলপুর উত্তরপাড়া অংশের বালি মাটি নিয়ে অর্থ বানিজ্যে লিপ্ত হয়েছে চিহ্নিত অসাধু চক্র। রাতের আঁধারে ট্রাক ট্রাক মাটি তুলে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে জবরদোস্তি করেও অনেকের বৈধ সীমানার বালি মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 
নদ খননের মাটিতে উপকারভোগী হলেও ওই দুই এলাকার অনেকেই এখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ওই চক্রের কারণে। আবার অব্যাহত মাটির গাড়ি আসা যাওয়া করায় সংশ্লিষ্ট সলিং রাস্তার বেহাল দশায় রুপ দিয়েছে। 
তথ্য মিলেছে, ওই ঘটনায় জড়িত বালিয়াডাঙ্গা মালোপাড়ার আব্দুর রব ও বোলপুরের মুত্তার সিন্ডিকেট। অপ্রতিরোধ্য স্টাইলে মাটি বিকিকিনি চালিয়ে যাওয়া ওই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয়রা দ্রুত পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নজরদারি দাবি করেছেন।
বিশাল বাজেটের ভৈবব নদ ১০ কিলোমিটার খনন শেষ। এখন চলছে পাড় বাঁধার কাজ। দীর্ঘ ৩ বছর একটানা খননের কারণে ভৈরদের দুই পাড়ে মাটি বালির স্তুপ হয়। পাড়ের প্রয়োজনীয় মাটি রেখে দিয়ে বিগত সময়ে যে যার মত মাটি বালি নিয়ে গেছে। আবার নানা শ্রেণির লোকজন রীতিমত এই মাটি নিয়ে শুরু করে ব্যবসা। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যশোরাঞ্চলের অনেকগুলো সিন্ডিকেটও গড়ে ওঠে। এদিকে খননের সময় ভৈরবপাড় এলাকায় বসবাসকারী ও স্থায়ী বাসিন্দাদের নিচু জমি ও ডোবা ভরাট হয়ে যায়। আর একারণে স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় উপকারভোগী হন অনেকেই। তাদের সীমানায় ভৈরব খননের বালি মাটিতে সমতল হয়ে যায়। 
অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি বালিয়াডাঙ্গা মালোপাড়া ও বোলপুর উত্তরপাড়ার অংশের পাড় এলাকায় মাটি নিয়ে নতুন করে অর্থবাণিজ্য শুরু করেছে দুটি সিন্ডিকেট। এর মধ্যে বালিয়াডাঙ্গার ওলিয়ার রহমানের ছেলে আব্দুর রউফ ওরফে রব রীতিমত জবরদোস্তি করে মাটির ব্যবসা করছেন। স্থানীয় উপকারভোগীদের ক্ষতি করছেন। ভৈরব নদের মাটি ও বালিতে ভরাট হয়ে যাওয়া নিচু জমি ও ডোবা থেকে তিনি স্কেভেটর দিয়ে মাটি তুলে বিক্রি করছেন ট্রাক ব্যবহার করে। স্থানীয় রাজনৈতিক সেল্টার নিয়ে চলায় কেউ তার বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। সীতারামপুর ঝুমঝুমপুর বালিয়াডাঙ্গায় ওই মাটি বিক্রি করছেন আব্দুর রব। এছাড়া প্লট ব্যবসায়ীদের সাথেও চুক্তি করে মাটি সরবরাহ করছেন। 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো অনুমতি না নিয়েই রাতের আঁধারে চলছে তার কারবার। আর বালি মাটি ভর্তি ট্রাক আসা যাওয়া করায় মালোপাড়ার সলিং রাস্তাটির এখন বেহাল দশা। একইভাবে বোলপুর উত্তরপাড়ার অংশ ভৈরবের মাটি জবরদোস্তি করে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় মুক্তার সিন্ডিকেট। ভৈরব খননের সময় স্বাভাবিকভাবে স্থানীয় মসজিদের নিচু জমি ভরাট হয়ে যায়। এতে মসজিদ উপকৃত হয়। সম্প্রতি ওই মাটির প্রতি লোলুপ দৃষ্টি ফেলে স্থানীয় মুক্তা ও তার লোকজন ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। মসজিদের নিচু জমি সমতল হয়ে একটি ভাল দৃশ্যমান অবস্থানে আসলেও তা নষ্ট করছে ওই সিন্ডিকেট। এখানেই শেষ নয়, আরো কয়েকটি স্পট থেকে বালি মাটি বিক্রি করে পকেট ভারি করছে ওই মুক্তার সিন্ডিকেট।
এছাড়াও ওই দুই এলাকার কয়েক ডজন উপকারভোগীকে ক্ষতিতে ফেলেছে অসাধু চক্রটি। এভাবে মোটা অংকের টাকার ব্যবসা করছে নদের মাটিকে পুঁজি করে। নদের মাটি পাশের জমিওয়ালা এমনিতেই পাবেন এমনটি স্বাভাবিক নিয়ম থাকলেও তা ভেস্তে দিয়ে চক্রটি অর্থ বাণিজ্য করছে। এ নিয়ে এলাকায় চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা এর প্রতিকার দাবি করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের কাছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় মেম্বার আব্দুল হালিম বিশ্বাস জানিয়েছেন, অভিযোগ সত্য। মালোপাড়া থেকে আব্দুর রব চক্র মাটি নিয়ে বিক্রি করছে বিভিন্ন জায়গায়। রাতের আঁধারে ওই মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বিশ্বনাথ বিশ্বাসের পরিবারসহ অনেকেরই আপত্তি আছে। এ ব্যাপারে তিনি খোঁজখবর নেবেন। মাটি কাটা বা বিক্রির বৈধতা না থাকলে নিষেধ করবেন। তিনি ঘটনা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। এছাড়া স্থানীয় আরো কয়েক ব্যক্তি মাটি বিক্রি চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, বোলপুরের মুক্তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অফিসে এসে অনেকে অভিযোগ করেছেন। মাটি বালি কেটে তুলে বিক্রিতে বাধা দিলে তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।  
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, উল্লেখিত স্পটগুলোর মাটি বিক্রির কোনো টেন্ডার হয়নি। কাউকে বিক্রি করার অনুমতিও দেয়া হয়নি। চক্রটি মানুষকে বোকা বানিয়ে মাটি বিক্রি করছে বলে অভিযোগ আসছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভৈরবের মাটি যারা বিক্রি করছেন বা যারা কিনছেন সবাই অন্যায় করছেন। মাটি বিকিকিনি চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আরও খবর

🔝