gramerkagoj
সোমবার ● ২০ মে ২০২৪ ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ শনিবার স্কুল না করার কথিত আন্দোলন

ভুইফোঁড় শিক্ষক সংগঠনের ডাকে সাড়া মিলছে না যশোরে
প্রকাশ : বুধবার, ৮ মে , ২০২৪, ১১:৩৭:০০ পিএম , আপডেট : সোমবার, ২০ মে , ২০২৪, ১২:৩১:১১ এ এম
এম.আইউব:
GK_2024-05-08_663baa670e439.webp

শিক্ষামন্ত্রণালয়ের শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধাচারণ করেছে ভুইফোঁড় একটি শিক্ষক সংগঠন। ‘বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি’ নামে তথাকথিত একটি সংগঠন সরকারি এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কথা বলছে। এমনকি সংগঠনের নামে কতিপয় ব্যক্তি শনিবার সারাদেশে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। একইসাথে প্রতি শনিবার লাগাতার কর্মবিরতির হুমকিও দিয়েছে তারা।
তাদের এই বালখিল্য কর্মকান্ডে যশোরের একজনও সাড়া দিচ্ছে না। বরং যশোরের সহকারী শিক্ষকরা এটিকে হটকারী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, ওই নামে কোনো সংগঠন যশোরে আছে বলে তাদের জানা নেই। একজন নেতা বলেন এটি ফেসবুক নির্ভর সংগঠন। ফেসবুকের বাইরে এদের কোনো কার্যক্রম নেই।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাগাতার ছুটির কারণে শিখন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে সাময়িকভাবে শনিবার শ্রেণি কার্যক্রম করার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত সারাদেশে শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মেনে নিলেও রাতারাতি লাইমলাইটে আসতে বিপক্ষে বলছে ভুইফোঁড় শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির স্বঘোষিত নেতারা। তবে, শিক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি এই আদেশ না মানলে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আন্দোলন করা শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে এমপিও স্থগিত বা বাতিল করা হবে। শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান ফাঁকি দিয়ে আন্দোলনে নামলে প্রতিষ্ঠান প্রধানেরও এমপিও স্থগিত বা বাতিল হতে পারে।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী শনিবার সারা দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি পালনের আহ্বান জানিয়েছে হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি। অথচ সারা দেশে এই সংগঠন নেই। যশোরে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ভুইফোঁড় এই সংগঠনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তার উপর তাদের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন বিভিন্ন স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা। সমালোচনা করেছেন একাধিক শিক্ষক সংগঠনের যশোরের নেতারাও।
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি যশোর জেলার সভাপতি যশোর জিলা স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শিখন ঘাটতি পূরণে শনিবার সাময়িকভাবে স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্তে কারো কোনো আপত্তি নেই। এটিতো সাময়িক।’
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি যশোর জেলার সাধারণ সম্পাদক রাজীব মাহমুদ বলেন, ‘বাস্তবে এই সংগঠন নেই। এটি ফেসবুক নির্ভর। যশোরে এই সংগঠনের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাছাড়া, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে শিক্ষক এবং শিক্ষক নেতাদের ভাবা উচিত।’
স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ যশোর জেলার সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘ওই নামে যশোরে কোনো শিক্ষক সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। তাছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে যেখানে শিখন ঘাটতি পড়েছে সেখানে শনিবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হঠকারী ছাড়া আর কিছুই না।’
এদিকে, অধিকাংশ অভিভাবক বলছেন ভিন্ন কথা। শনিবার স্কুল খোলা রাখার পক্ষে মত দিয়ে তারা বলেন, করোনা মহামারি থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। করোনার কারণে এমনিতেই শিখন ঘাটতিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, শীত, গরম ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ছুটি দিতে হয়। নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ঠিকমতো সম্পন্ন করতে হলে বেশি সময় প্রয়োজন। সরকার সেই চিন্তা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শনিবার খোলা রেখে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা জরুরি। আবহাওয়া ভালো থাকলে শনিবারে ক্লাস করতে শিক্ষকদের সমস্যা কোথায়?’
অভিভাবকদের বক্তব্য হচ্ছে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। কঠোর হতে হবে সরকারকে। শাস্তির আওতায় আনলে দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। যদি শাস্তির আওতায় না আনা যায় তাহলে মন্ত্রণালয় নির্দেশ দেবে একটা শিক্ষকরা করবে আরেকটা।
সরাসরি সরকারের আদেশের বিরুদ্ধে অযৌক্তিকভাবে আন্দোলন করলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এমপিও বাতিল হতে পারে বলে শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষতির মধ্যে রেখে শিক্ষকরা যদি আন্দোলন করেন তাহলে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবে শিক্ষা অধিদপ্তর। নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এমপিও স্থগিত করা হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এমপিও বাতিল হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ‘শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল হয়নি। শিখন ঘাটতি পূরণে আপাতত যে কয়দিন শনিবার ক্লাস করানো দরকার সে কয়দিন ক্লাস করানো হবে।’
নির্ধারিত ১৮৫ দিন শিখন কর্মদিবস কমে যাওয়ার কারণে রোজার সময় কয়েকটি শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষকরা এর প্রতিবাদ করায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ধর্মীয় স্পর্শকাতর হিসেবে উপস্থাপন করায় পিছু হটে শিক্ষামন্ত্রণালয়। এরপর তাপপ্রবাহের কারণে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। এই পরিস্থিতিতে সিলেবাস সম্পন্ন করার তাগিদ থেকে অস্থায়ীভাবে সাপ্তাহিক ছুটির একদিন শনিবার শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।

 

 

 

আরও খবর

🔝