gramerkagoj
শনিবার ● ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
ভয়াবহ খরা ঝুঁকিতে রাজশাহী অঞ্চল
প্রকাশ : বুধবার, ২৩ মার্চ , ২০২২, ০৭:২৮:০৫ পিএম
হাফিজুর রহমান পান্না, রাজশাহী ব্যুরো ::
1648042108.jpg
রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর বাড়ছে চাপ । দিন দিন পানির স্তর ক্রমাগত নিম্নমুখী হচ্ছে। এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ার কারণে পানির স্তর বর্ষা মৌসুমে আর আগের জায়গায় উঠে আসছে না।এর মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানি যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে প্রতিদিন ৯৫ হাজার ঘনমিটার পানি তুলছে রাজশাহী ওয়াসা। ফলে ভয়াবহ খরাপ্রবণ এ এলাকার পানির সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে না।এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূত্ত¡ ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পানি বিশেষজ্ঞ চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বরেন্দ্র অঞ্চলে অধিক পরিমাণ ধান চাষ হচ্ছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ছে। এ কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিম্নমুখী হচ্ছে।তিনি বলেন, জাতীয় বৃষ্টিপাতের গড় ২ হাজার ৫০০ মিলিমিটার। বরেন্দ্র অঞ্চলে ১ হাজার ২০০ মিলিমিটার বা কোনো কোনো এলাকায় তারও কম বৃষ্টিপাত হয়। এ কারণে চাষাবাদের প্রয়োজনে যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে, সেই পরিমাণ পানি আর বর্ষা মৌসুমে ওপরে উঠছে না। ফলে পানির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, সাম্প্রতিক কালের পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা পানির নীতি ২০১৩ এবং পানিবিধি ২০১৮ বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করেছে। কিন্তু পানির স্তর দ্রæত নিম্নগামী হচ্ছে। এ কারণে এ কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা দরকার যাতে আগামী ১০০ বছরের জন্য যে বেঙ্গল ডেলটা প্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে, তা দ্রæত বাস্তবায়ন করা যায়।এদিকে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে প্রতিদিন ৯৫ হাজার ঘনমিটার পানি তুলছে রাজশাহী ওয়াসা। তবে এই পানি মোটেও নিরাপদ নয়। অতিমাত্রার ধাতব পদার্থসহ এই পানিতে রয়েছে ডায়রিয়ার জীবাণু ফেকাল কোলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া। এর বিকল্প হিসেবে পদ্মার পানি শোধনের মাধ্যমে রাজশাহী নগরে সরবরাহ করার উদ্যোগটি চার বছরেও পায়নি আলোর খোঁজ। প্রকল্প বাস্তবায়নে এখনও হয়নি চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক চুক্তি।রাজশাহী ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে নগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা ১১ লাখ ১৩ হাজার ২৯০ ঘনমিটার। এর বিপরীতে ওয়াসা ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে ১০৮টি গভীর নলকূপ দিয়ে দৈনিক তুলছে ৯৫ হাজার ঘনমিটার পানি। শুধু বর্ষা-পরবর্তী চার মাস (আগস্ট-নভেম্বর) পদ্মা থেকে দৈনিক ৬ থেকে ৯ মিলিয়ন লিটার পানি পাওয়া যায়। এ ছাড়া পুরো মৌসুমজুড়েই নির্ভর করতে হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর।ভূ-উপরিস্থ পানি সবচেয়ে নিরাপদ হলেও ওয়াসা তা জোগান না দিয়ে উল্টো তিনগুণ বাড়িয়েছে পানির দাম। যদিও ওয়াসা বলছে, তিনগুণ দাম বাড়ার পরও দেশের সব ওয়াসা, এমনকি নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার চেয়েও রাজশাহী ওয়াসার পানির দাম কম। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, সেবার মান বাড়াতেই পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, ভূ-গর্ভস্থ পানি ছাড়া রাজশাহীতে এখনও বিকল্প কোনো পানির উৎস নেই। এ কারণে অতিমাত্রায় ধাতব পদার্থ পাওয়া গেলেও পানি তোলা হচ্ছে ওই ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকেই। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াসহ পরিবেশের জন্যও হুমকি দেখা দিয়েছে।জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান বলেন, প্রতিদিন মাত্রাতিরিক্ত পানি তোলার ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। তবে কয়েক বছর বেশি বৃষ্টি হওয়ায় রিচার্জও হচ্ছে। নিরাপদ খাবার পানির চাহিদা মেটাতে হলে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার ছাড়া বিকল্প নেই। এ কারণেই ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারে জোর দেওয়া উচিত।রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মামুদ বলেন, সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে চীনের সঙ্গে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সমঝোতা সই, সম্ভাব্যতা যাচাই ও বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে। শুধু বাকি ঋণ চুক্তি। আগামী তিন মাসের মধ্যে ঋণ চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরই কাজ শুরু হবে। এর মাধ্যমে চার বছরের মধ্যে নগরবাসীকে পদ্মার সুপেয় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন এই প্রকৌশলী।

আরও খবর

🔝