gramerkagoj
শনিবার ● ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
ছোট হয়ে আসছে কলাপাড়ায় লালুয়ার ইউনিয়নের মানচিত্র
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর , ২০২১, ০৭:০৯:০০ পিএম
এইচ,এম,হুমায়ুনকবির কলাপাড়া(পটুয়াখালী) ::
1632834275.jpg
সাগর মোহনাসংলগ্ন রাবনাবাঁধ নদীতে ক্রমেই বিলিন হয়ে যাচ্ছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের মানচিত্র। বর্তমানে ভৃখন্ডটি চিহিৃত করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।   রাবনাবাঁধ নদীর প্রবল স্রোতে ইউনিয়নের চারিপাড়া গ্রামের বিকল্প বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ সিডরের সময় ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই জোয়ারের সময় পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। নদীর পানির স্তর স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক ফুট বেড়ে গেছে। এ কারনে নদী ভাঙ্গন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় তীব্রতর রুপ নিয়েছে।   পানি উন্নয়ন র্বোড(পাউবো) সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে ৪৭/৫ পোল্ডারে সাত কিলোমিটারের অবস্থা খুবই নাজুক ইউনিয়নে। চাড়িপাড়া ,নাওয়াপাড়া, বানাতিপাড়া, ১১নং হাওয়া, চৌধুরিপাড়া, নয়াকাটা, মুন্সীপাড়া, ,চান্দুপাড়া, হাসনাপাড়া,.চরচান্দুপাড়া ও পশরবুনিয়া গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার।লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সুত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের মোট আয়তন ছিল ৪৯ বর্গকিরোমিটার। ক্রমান্বয়ে তা কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩৯ বর্গকিলোমিটারে। এই হিসাব অনুযায়ী ১১ বর্গকিলোমিটার জমি নদীতে বিলিন হয়েছে। লালুয়া ইউনিয়নে ২৭টি গ্রাম রয়েছে ও আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ১৭টি।সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জলোচ্ছ্বাস আর নদী ভাঙ্গনে বিলিন হচ্ছে ইউনিয়নের ভুখন্ড। এরই মধ্যে কমপক্ষে দশ বর্গ কিলোমিটার ভুখন্ড নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ফলে রাবনাবাঁধ নদীতে  লালুয়ার ইউনিয়নের মানচিত্র ছোট হয়ে আসছে। মজবুত বাঁধ নির্মানসহ যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহন করা না হলে এই জন পদটি পুরোপুরি বিলিন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন। বিধবস্ত রাস্তা রামনাবাধ নদী পানিতে তলীয়ে থাকায় এক গ্রামের সঙ্গে অন্য গ্রাম ও উপজেলা সদরে আসতে নৌকায়ই এখন একমাত্র ভরসা। পুকুরে তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র বিশুদ্ধ পানি সংকট। ফলে নদীর লবন পানিতে দৈনন্দিন কাজ করতে হচ্ছে হাজারো মানুষকে স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় দেখা দিয়েছে পানি বাহিত বিভিন্ন রোগ। লোকজন দ্রুত কাঁচা ও পাকা বাড়িঘরসহ প্রয়োজনীয় মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। বিক্রি করে দিচ্ছে গাছপালা। চোখের সামনে ভিটাবাড়ি রাবনাবাঁধ বিলীন হয়ে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে অনেকে। দিশেহারা হয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে তারা। খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে নদী তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষ।  লালুয়া ইউনিয়ন দুর্গত ও নিঃস্ব মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বর্তমান করুণ অবস্থার গোজার শেষ আশ্রয়টুকু। নিঃস্ব হতে হতে এই গ্রামের মানুষের শেষ সম্বল এখন শুধুই বেঁচে থাকার আকুতি। গত এক যুগ ধরে রামনাবাদ নদ’র ভাঙনে নয়াকাটা গ্রামটি মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার পর এখন চারিপাড়া গ্রামটিও বিলীন হওয়ার মুখে। ২০০৭ সালের সিডর ও ২০০৯ সালের আয়লা’র জলোচ্ছ্বাসের তান্ডবের পর বেড়িবাঁধ ভেঙে সেই ধ্বংসের নির্মমতা শুরু হয়েছে, সেই নদী ভাঙনে এখন চলছে শুধুই বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি, পুকুর, বাগান, স্কুল,মসজিত,কবরস্থান, রাস্তাঘাট গিলে খাওয়া ও মানুষের স্বপ্নভঙ্গের ধ্বংসলীলা। লালুয়া ইউনিয়নের নয়াকাটা গ্রামে তিন শতাধিক পরিবার ও কয়েক হাজার একর ফসলি জমি বিলীন হয়েছে মাত্র এক দুই দশক আগে। সেই বিলীন হওয়া গ্রামের নিঃস্ব পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল চারিপাড়া গ্রামের বাঁধের উপর। কিন্তু সেই বাঁধ গত তিন/চার বছরে ভেঙে বিলীন হয়ে এখন চারিপাড়া গ্রামটি। নদীর সর্বনাশা ভাঙ্গনে লালুয়াবাসীর ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এ ভাঙ্গনের ফলে কোটি কোটি টাকার সহায়সম্পদ চিরতরে নদীতে হারিয়েছে।  এখনো যদি সরকার উদ্যোগ না নেয়, তাহলে অচিরেই হারিয়ে যাবে উপজেলার মানচিত্র থেকে লালুয়া ইউনিয়নটি। চারিপাড়া গ্রামের বাবুল মিয়া, মোশারেফ হাওলাদার এক সময়ের বিত্তশালী পরিবারের সন্তান রফিক হাওলাদার এখন নিঃস্ব হয়ে চারিপাড়া গ্রামের ভাঙা বাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন পরিবার নিয়ে। আমাদের পুর্ব পুরুষ ও আমরা এ বাড়ীতে ১০০বছর ধরে বাস করে আসছি। বাড়ীর সামনে এক একর জমি ছিল ,সবই নদীতে বিলিন হয়েছে। এ বছর ভাঙ্গনের পরিমান অনেক বেশি। এখন বার্ধক্যে এসেও নদীতে মাছ ধরে চলে তার সংসার প্রতিদিনই ভাঙছে নতুন করে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন। সাগর ও নদীর প্রতিটি জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বসতঘর, আবাদি জমি ও মাথা গোজার শেষ আশ্রয়টুকু। নিঃস্ব হতে হতে এই গ্রামের মানুষের শেষ সম্বল এখন শুধুই বেঁচে থাকার আকুতি। এখানে প্রতিটি ভোর হয় একেকটি পরিবারের সর্বস্ব হারানোর খবর শুনে। চারিপাড়া বাঁধ প্রতিদিনই ভাঙছে। আর নিঃস্ব হচ্ছে বাঁধে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো। নাওয়াপাড়া গ্রামের কৃষক  সব হারানো চান মিয়া, আকবর ফকির, রিমন হাওলাদার বলেন, একদিন আমাদের সব ছিল এখন অমাদের কিছু নাই। আমরাবেড়িবাধেঁর বাহিরে ঝুপড়ি ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছি। আমরা এখনও আবাসনের ঘর পাইনি। বাঁধ ভাইঙ্গা যাওনে মোগো সব আমার ভরসা শ্যাস অইয়া গ্যাছে। মোগো কপালডাই পুইর‌্যা গ্যাছে। চাষবাস কইর‌্যা যে খামু হেইরহম অবস্থাও নাই। চারিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, স্কুলের চারপাশে কোন বেরিবাঁধ নেই। জোয়ারের সময়  চাড়িপাড়া , চৌধুরিপাড়া, নয়াকাটা, বানাতিপাড়া গ্রামের ছেলে মেয়েরা স্কুলে আসতে পারেনা। আমাদের নিজেদেরকে ট্রলারের মাধ্যমে স্কুলে যেতে হয়।  স্কুলে আসতে ছোট ছোট বাঁশের সাকু রয়েছে ১৫টি। বর্ষা আসলে  ছেলে মেয়েরা স্কুলে আসতে দুর্ভোগের শেষ থাকেনা। ছাত্রÑছাত্রীরা বই জামা –কাপড় ভিজিয়ে স্কুল আসতে হয়। লালুয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রবিউল ইসলাম বলেন, বেড়িবাঁধে বসবাস করা এই পরিবার গুলো খুব অসহায়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতুটুকু ত্রান পেয়েছি তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায়।লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বিশ্বাস তপন বলেন, চারিপাড়ার মানুষ দুর্গত, নিঃস্ব ও অসহায়।  চাড়িপাড়া গ্রামে একসময় যারা গেরস্থ পরিবার ছিল আজ তারা সব হারিয়ে বেড়িবাঁধের বাহিরে ঝুপড়ী ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছেন। কলাপাড়া পাউবোর নির্বাহী  প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন জানান, লালুয়ার ইউনিয়নে ছয় কিলোমিটার বেরিবাঁধ ভাঙ্গন পায়রা সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ শীতের সময় কাজ শুরু করবে।  টেন্ডার হয়ে গেছে। এখন শুধু কাজ করায় অপেক্ষায়। বহির্নোঙরের জেটি নির্মানের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরী কাজ চলমান রয়েছে।

আরও খবর

🔝