gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ অভিযুক্ত রাজিব দুবাই পালানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন

ব্যাংক এশিয়ার কোটচাঁদপুর আউটলেট থেকে প্রায় ৬৩ লাখ টাকা গায়েব
প্রকাশ : শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪, ১০:১২:০০ পিএম
কাজী মৃদুল, কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ):
GK_2024-02-03_65be66a2c4b4e.jpg

ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংক থেকে প্রবাসীর প্রায় ৬৩ লাখ টাকা গায়েব করে দিয়েছেন ব্যাংকের ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের আউটলেটের দায়িত্বে থাকা রাজিবুল কবির রাজিব। তিনি ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের সদস্য ও কোটচাঁদপুর এলাঙ্গী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক তদন্তে নেমেছে।
ভূক্তভোগী কোটচাঁদপুর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের আব্দুল মাজেদের ছেলে কুয়েত প্রবাসী রোকনুজ্জামান রোকন জানান, তিনি গত ২০ বছর ধরে প্রবাসে থাকেন। ২০১৯ সালে তিনি দেশে এসে কোটচাঁদপুর ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট আউটলেটে আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলে কুয়েত চলে যান। যার হিসাব নং-১০৮৩৪৪৪০০৬১০৬। এ সময় এজেন্ট আউটলেটের দায়িত্বে ছিলেন কোটচাঁদপুর উপজেলার মৃত কাওসার মণ্ডলের ছেলে মনিরুল ইসলাম। পরবর্তীতে প্রবাসী রোকনুজ্জামান রোকন দেশে এসে ২০২০ সালের মার্চ মাসের ২ তারিখে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট আউটলেটে ৪০ লাখ ও ১০ লাখ টাকার আলাদা দুটি মাসিক মুনাফা সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন। যার দুটি হিসাব নং- ১০৮২৭৪৪০০০০০৮ ও ১০৮২৭৪৪০০০০০৯। এ দুটি হিসাবের মেয়াদ পূর্তির তারিখ ছিল ১৫/০২/২০২৩। এ সময় বলা হয়েছিল প্রতি মাসে ৩৫ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেবে ব্যাংক। সে অনুযায়ী একাউন্টগুলিতে তিন বছরে লভ্যাংশ ও মূলধনসহ প্রায় ৬৩ লাখ টাকা জমা হওয়ার কথা। অথচ প্রবাসী রোকন ২০২৩ সালের জুলাই মাসে দেশে ফিরে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গেলে জানতে পারেন প্রবাসে থাকা অবস্থায় তার সমুদয় টাকা একাউন্ট তিনটি থেকে গায়েব হয়ে গেছে।
বিষয়টি নিয়ে ভূক্তভোগী রোকন এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশন, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড ঢাকা, ব্যাংক এশিয়া ঝিনাইদহ শাখা ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকাতে অভিযোগ শাখায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
রোকন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে খুব কষ্টে অর্জিত টাকাগুলি তিল তিল করে জমিয়েছিলাম। বিশ্বাস করে টাকাগুলি ব্যাংকে আমানত রেখেছিলাম। এখন দেখছি ব্যাংকেও আমানতের টাকা খেয়ানত করা হয়। ব্যাংক গ্রাহকরা বিশ্বাস করবে কারে? এখন চরম বিপদে পড়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আউটলেটের সাথে ব্যাংক এশিয়ার কিছু কর্মকর্তা জড়িত। তা না হলে আমি প্রবাসে থাকা অবস্থায় আমার মুনাফা সঞ্চয়ী হিসাব থেকে টাকা উঠলো কি করে?’
এ অভিযোগ পাওয়ার পর এ প্রতিবেদক বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামেন। ব্যাংক এশিয়া ও আউটলেটের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, ২০২১ সালে ব্যাংক এশিয়ার আউটলেটের দায়িত্বে থাকা মনিরুল ইসলাম ব্যাংকের দায়িত্বভার (ব্যাংকের অনুমতিক্রমে) তার আপন ভাই ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ সদস্য রাজিবুল কবির রাজিবের কাছে দেন। এরপর মনিরুল ইসলাম ডাচ বাংলা ব্যাংক ঝিনাইদহ শাখায় যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে আউটলেটের দায়িত্বে থাকা রাজিব প্রবাসে থাকা রোকনুজ্জামান রোকনের মাসিক মুনাফা সঞ্চয়ী হিসাব দু’টি ভেঙে ফেলে সমুদয় টাকা প্রবাসী রোকনের আরেকটি সঞ্চয়ী হিসাব নং-১০৮৩৪৪৪০০৬১০৬-এ নিয়ে আসেন। এই হিসাব থেকে চতুর রাজিব নিজের দুটি হিসাব নম্বরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ট্রান্সফার করেন। বাকী টাকা আরো ২ থেকে ৩টি গ্রাহকের হিসাব নম্বরে নিয়ে আসেন। পরে ওই গ্রাহকদের হিসাব থেকেও টাকাগুলি তুলে নেন রাজিব।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে গ্রাহকের হিসাব থেকে মোট অংকের টাকা তোলা হলেও তারা জানতে পারেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, হিসাব খোলার শুরুতেই টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে আঙ্গুলের ছাপ জালিয়াতি করা হয়েছে। যে কারণে পূর্বে আউটলেটের দায়িত্বে থাকা মনিরুল ইসলাম ও তার ভাই ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ সদস্য রাজিবুল কবির রাজিবকেই এই জালিয়াতির দায় নিতে হবে। রাজিবের ভাই মনিরুল ইসলাম কোনোভাবেই দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। কেননা মনিরুল ইসলাম আউটলেটে দ্বায়িত্বে থাকা অবস্থায় আঙ্গুলের ছাপ জালিয়াতি করা হয়েছে। পরে তার ভাই রাজিবুল কবির রাজিব আউটলেটের দায়িত্বে এসে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাকা উদ্ধারে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি রাজিবকে নিয়ে বসেন। সে সময় রাজিব টাকা উঠিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন টাকা তার কাছ থেকে নিতে হলে সময় দিতে হবে। (রাজিবের এ স্বীকারোক্তির অডিও এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে)। এরপর কয়েক দফা সময় নিয়েও টাকা উক্ত একাউন্টে জমা না দেয়ায় ব্যাংক এশিয়া ঝিনাইদহ শাখার ম্যানেজার সাইফুর রহমান রাজিবকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেখানেও তিনি অপরাধের কথা স্বীকার করলেও টাকা উদ্ধার হয়নি।
ব্যাংক এশিয়ার ঝিনাইদহ শাখার ম্যানেজার সাইফুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘গ্রাহক প্রবাসী রোকনুজ্জামান রোকনের আবেদন আমরা পেয়েছি। আমাদের হেড অফিসে কর্তারা বিষয়টি জেনেছেন। জালিয়াতির বিষয়টি আমাদের কাছে পরিস্কার। টাকা উদ্ধারের পদক্ষেপ নিচ্ছে হেড অফিস।’
উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘টাকা জালিয়াতির বিষয়টি রাজিব স্বীকার করে তা ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলেছিলো। অথচ এখন সে বলছে টাকা আমি দিতে পারবো না। পারলে ব্যাংক আমার বিরুদ্ধে মামলা করে টাকা আদায় করে নিক। এখন আমি আর কি করতে পারি?’
এদিকে এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হওয়ায় রাজিব আত্মসাৎকৃত টাকা নিয়ে দুবাই পাড়ি জমানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। যে কোনো সময় তিনি দেশ ত্যাগ করতে পারেন।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে সকল ব্যাংক আউটলেটের সাধারণ গ্রাহকরা ভীত-সন্তস্ত্র হয়ে পড়েছেন।
অভিযুক্ত রাজিবের ভাই মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আউটলেটের দায়িত্বভার ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী আমার ভাই রাজিবকে দিয়ে এসেছি ২০২১ সালে। এখন আউটলেটে রাজিব যদি কোনো অপকর্ম করে থাকে দায় তার, আমার না। এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।’

আরও খবর

🔝